পুরুলিয়া বইমেলায় পরিবেশ রক্ষা ও সাহিত্যের অনন্য মেলবন্ধন।

৪০তম পুরুলিয়া বইমেলায় ডিএফও অঞ্জন গুহের উপস্থিতিতে পরিবেশ সচেতনতা ও সাহিত্য চর্চার বিশেষ অনুষ্ঠান পালিত হল। ঝুমুর গান ও বই প্রকাশের মাধ্যমে সমাজকে বার্তা দেওয়া হয়। 

purulia boi mela

৪০তম পুরুলিয়া জেলা বইমেলার মঞ্চে এক অনন্য মেলবন্ধনের সাক্ষী থাকলেন দর্শকরা। সাহিত্য, পরিবেশ রক্ষা এবং নাগরিক সচেতনতা—এই তিন ধারা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল মেলার একটি বিশেষ আলোচনা সভায়। 

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ও নাগরিক কর্তব্য’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও (DFO) অঞ্জন গুহ। 

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাধারণ মানুষের ভূমিকা ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি।

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ঝুমুর গানের মাধ্যমে পরিবেশের বার্তা প্রচার। স্থানীয় এক কবি ও শিল্পী তাঁর স্বরচিত ঝুমুর গানের মধ্য দিয়ে বন, ভূমি ও মানুষের আদিম ও অকৃত্রিম সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। 

মাটির সুরে পরিবেশ বাঁচানোর এই আহ্বান উপস্থিত শ্রোতাদের বিশেষভাবে আবেগপ্রবণ করে তোলে। 

ঝুমুরের তালের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে বনাঞ্চল রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির প্রতি আমাদের নৈতিক দায়িত্বের কথা।

ডিএফও অঞ্জন গুহ ছাড়াও এই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের একঝাঁক বিশিষ্ট প্রতিনিধি। 

তাঁদের মধ্যে ছিলেন পূর্ত, কার্য ও পরিবহন স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ হংসেশ্বর মাহাতো, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ স্মরজিৎ মাহাত এবং বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ জয়মল ভট্টাচার্য। 

পুরো অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সুচারুভাবে পরিচালনা করেন বিকাশ মাহাত। প্রত্যেকেই নিজ নিজ বক্তব্যে পরিবেশের অবক্ষয় রোধে এবং সামাজিক উন্নয়নে সাহিত্যের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

বইমেলার এই বিশেষ মুহূর্তটি আরও স্মরণীয় হয়ে ওঠে একটি নতুন বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশে। লেখিকা তনুশ্রী চন্দ্রের ছোট গল্পের সংকলন ‘ধানশীষের গন্ধ’ উন্মোচিত হয় ডিএফও অঞ্জন গুহের হাত ধরে। 

বক্তাদের মতে, এই গল্পগ্রন্থটিতে গ্রামবাংলার জীবন, মাটির ঘ্রাণ এবং মানুষের টানকে এক নতুন ও গভীর দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরা হয়েছে। প্রকৃতি ও জীবন যে একে অপরের পরিপূরক, বইটির পাতায় পাতায় সেই সুরই ধ্বনিত হয়েছে।

সাহিত্য আর পরিবেশ সচেতনতা যখন একই মঞ্চে হাত মেলায়, তখন তা কেবল একটি অনুষ্ঠান থাকে না, বরং একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ নেয়। 

পুরুলিয়া বইমেলার এই আয়োজন প্রমাণ করে দিল যে, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতা শুধু ভাষণেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং গান, গল্প আর কবিতার মাধ্যমেও তা মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। 

সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির এই সহাবস্থান আগামীর পথচলাকে আরও সুসংহত করবে বলেই আশা করা যাচ্ছে।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url