রজতজয়ন্তী শুরু কাশিপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ে।
কাশিপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ে রজতজয়ন্তী উৎসবের সূচনা হল উপাচার্য ডঃ পবিত্র কুমার চক্রবর্তীর প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে।
কলেজ প্রাঙ্গণে বিদ্যাসাগরের পূর্ণাবয়ব মূর্তি উন্মোচন, বার্ষিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ, নবাগত ছাত্রছাত্রীদের স্মারক প্রদান এবং দুই দিনের জাঁকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কলেজ ক্যাম্পাসকে উৎসবমুখর করে তোলে।
ইতিহাস বিভাগের ছাত্র দেবজিৎ বাস্কের ছৌ নৃত্য সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। রজতজয়ন্তী উপলক্ষে কলেজের শিক্ষক, অতিথি, প্রাক্তনী এবং ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে দিনটি হয়ে উঠেছে স্মরণীয় ও আবেগঘন।
📰 রজতজয়ন্তী উৎসব শুরু হল কাশিপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ে
⭐ রজতজয়ন্তীর আবেগ ও ২৫ বছরের যাত্রার বিশেষ তাৎপর্য
কাশিপুর মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় যখন তাদের রজতজয়ন্তীর দোরগোড়ায় দাঁড়াল, তখন কলেজ ক্যাম্পাস জুড়ে এক বিশেষ আবেগ ছড়িয়ে পড়ল।
রজতজয়ন্তী শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২৫ বছরের ধারাবাহিক সংগ্রাম, উন্নতি, সাফল্য এবং সমাজের প্রতি অবদানকে উদযাপন করার এক মহামুহূর্ত।
এই দীর্ঘ সময়ে কলেজ বহু প্রতিকূলতার মাঝেও নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে, শিক্ষার মান বাড়িয়েছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়েছে।
কলেজের বিভিন্ন প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী আজ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলভাবে কাজ করছেন, আর তাঁদের সাফল্য কলেজের গর্বকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।
তাই রজতজয়ন্তীর এই উৎসব যেন কলেজের অতীতকে স্মরণ, বর্তমানকে উদযাপন এবং ভবিষ্যতের প্রতি নতুন আশা জাগানোর এক সেতুবন্ধন। 🎉
সকালের আলো ফুটতেই কলেজ চত্বরে সাজসজ্জার ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে যোগ দেন।
রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন, আলো—সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস যেন নতুন সাজে সেজে ওঠে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাঝেও উৎসাহের কমতি ছিল না।
কলেজের প্রতিটি সদস্যের হৃদয়ে ছিল একটাই অনুভূতি—“আমাদের কলেজ আজ এক নতুন ইতিহাস গড়ল।”
রজতজয়ন্তীর এই আবেগ ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ে, যা অনুষ্ঠানের মূল সৌন্দর্যকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। 🌟
🔥 প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে সূচনা—আলোকিত হল উৎসবের মঞ্চ
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় এক গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে। সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ পবিত্র কুমার চক্রবর্তী অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন।
প্রদীপের আলো যেন নতুন শিক্ষার, নতুন শুরুর, নতুন আশার প্রতীক হয়ে উঠল। এই প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেল কলেজের প্রগতিশীল চিন্তা, শৃঙ্খলা এবং আগামী দিনের পথচলার দৃঢ় প্রত্যয়।
উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে কলেজের নানা অর্জন তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যতের উন্নতির জন্য শুভেচ্ছা জানান।
প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত—ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পূর্ণাবয়ব মূর্তির আবরণ উন্মোচন।
বিদ্যাসাগর শুধু একজন সমাজ সংস্কারক নন, তিনি ছিলেন বাংলার শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম স্তম্ভ।
তাঁর মূর্তি উন্মোচনের মাধ্যমে কলেজ যেন আরেকবার তাঁর শিক্ষাদর্শনকে নিজের মূল্যবোধের সঙ্গে যুক্ত করল।
উপস্থিত অতিথি, শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের চোখেমুখে সেই গর্ব, সেই সম্মান স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সবাই মনে করেন—শিক্ষা ও মানবিকতার পথপ্রদর্শক বিদ্যাসাগরের সামনে মস্তক নত করার মধ্যেই লুকিয়ে আছে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণের শপথ। ✨
📚 সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ—সৃজনশীলতার রঙে রঙিন হল মঞ্চ
সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশ এই উৎসবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কলেজের বার্ষিক সাহিত্য পত্রিকায় স্থান পেয়েছে বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রীর কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নাট্যাংশ, চিত্রকলা সহ নানা সৃষ্টিকর্ম।
প্রকাশের সময় উপস্থিতদের মধ্যে ছিল অন্যরকম উত্তেজনা, বিশেষ করে যেসব ছাত্র-ছাত্রীর লেখা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তাঁদের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে ওঠে।
শিক্ষকরা জানান, এই পত্রিকা ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীলতার বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
পত্রিকা প্রকাশের মুহূর্তটি ছিল একদম সাহিত্যিক আবহে পূর্ণ।
সম্পাদক মণ্ডলীর শিক্ষকরা জানান যে, তারা সারা বছর ধরে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা সংগ্রহ করেছেন, বাছাই করেছেন এবং সম্পাদনা করেছেন।
প্রতিটা লেখা শুধু সৃজনশীল প্রকাশ নয়, বরং এই অঞ্চলের তরুণ প্রজন্মের ভাবনা, অনুভূতি, সংগ্রাম, স্বপ্ন—সবকিছুর প্রতিফলন।
সাহিত্য পত্রিকা কলেজের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে আরও সমৃদ্ধ করে, আর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তৈরি করে এক মূল্যবান মঞ্চ যেখানে তারা নিজেদের প্রতিভা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারে। 🎨✍️
🎓 নবাগতদের বরণ—স্বপ্নের পথে প্রথম পদচিহ্ন
রজতজয়ন্তী উপলক্ষে এদিন কলেজে নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও স্মারক প্রদান করে বরণ করা হয়। নতুনদের হাতে স্মারক তুলে দেওয়ার মুহূর্তটি ছিল অত্যন্ত আবেগঘন।
অনেক ছাত্র-ছাত্রী প্রথমবার কলেজে প্রবেশের আনন্দে অভিভূত। তাঁদের চোখে ছিল আশা, স্বপ্ন আর ভবিষ্যতের পরিকল্পনার ঝিলিক।
তাঁরা জানেন—এই কলেজ তাদের জ্ঞান, সংস্কৃতি, আত্মবিশ্বাস এবং কর্মজীবনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সোপান হয়ে থাকবে।
উপস্থিত ছিলেন কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডঃ সুব্রত দুয়ারি, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আধিকারিক অসীমা মই, রঘুনাথপুর কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
তাঁদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বাড়িয়ে তোলে। বক্তৃতায় তাঁরা নবাগতদের স্বাগত জানান, সঠিকভাবে পড়াশোনা করার উপদেশ দেন এবং কলেজের নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলার আহ্বান জানান।
নবাগতদের জন্য আয়োজিত এই বরণ অনুষ্ঠান শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি কলেজের মূল্যবোধ, সংস্কৃতি এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
এটি নতুনদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং তাদের জানিয়ে দেয় যে তারা এখন একটি বড় পরিবারের সদস্য, যেখানে তারা নিরাপদ, স্নেহমমতায় আবদ্ধ এবং ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগে পরিপূর্ণ। 🌱🎁
🎭 দুই দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—রঙে রঙে রজতজয়ন্তীর মহোৎসব
রজতজয়ন্তী উপলক্ষে কলেজে আয়োজন করা হয় দু’দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ছিল তীব্র উত্সাহ ও ব্যস্ততা।
নানা ধরনের পরিবেশনার মধ্যে সেদিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল—ইতিহাস বিভাগের ছাত্র দেবজিৎ বাস্কের ছৌ নৃত্য।
ছৌ নৃত্যের শক্তি, গতি, মুখোশের রহস্যময়তা, পৌরাণিক গল্পগুলোর উপস্থাপনা—সবকিছুই দর্শকদের বিমোহিত করে।
দেবজিতের প্রতিটি ভঙ্গিমা ও অভিনয়শৈলী প্রমাণ করে সে এই শিল্পকে গভীরভাবে আত্মস্থ করেছে।
ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশিত গান, আবৃত্তি, নাটক, নাচ—সবই মন কেড়ে নেয় উপস্থিতদের।
কলেজ চত্বরে উপস্থিত পরিবার-অভিভাবকরাও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুধু কলেজের প্রতিভাকে তুলে ধরেনি, বরং এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ লোকসংস্কৃতি, বিশেষ করে ভাঁওয়াল এলাকার শিল্পসংস্কৃতিকে নতুন করে সামনে এনেছে।
রজতজয়ন্তীর এই সাংস্কৃতিক পরিবেশনা কলেজের শিক্ষাদর্শনেরই একটি প্রতিচ্ছবি—শুধু পড়াশোনা নয়, বরং মেধা ও সৃজনশীলতার পূর্ণ বিকাশ। 🌟💃
🌟 ২৫ বছরের পথচলা—শিক্ষার আলো থেকে সমাজের উন্নতি
২৫ বছরের পথচলায় কাশিপুর মাইকেল মধুসূদন কলেজ বহু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে।
শুরুর দিনে যেখানে পরিকাঠামো সীমিত ছিল, সেখানে আজ কলেজে রয়েছে উন্নত ল্যাবরেটরি, আধুনিক লাইব্রেরি, নতুন বিভাগ, দক্ষ শিক্ষকবৃন্দ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের উন্নতির জন্য নানা উদ্যোগ।
এই দীর্ঘ যাত্রায় কলেজ যেমন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তেমনই সমাজকেও সমানভাবে শিক্ষার আলো দিয়ে সমৃদ্ধ করেছে।
প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই আজ সরকারি, বেসরকারি, গবেষণা, শিক্ষাক্ষেত্র এবং নানা পেশায় প্রতিষ্ঠিত। তাঁরা জানান, কলেজ তাঁদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
আজ রজতজয়ন্তীর এই উৎসবে তাঁদের স্মৃতিচারণায় কলেজ চত্বর আরও আবেগময় হয়ে ওঠে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে আরও উন্নতির পরিকল্পনা করেছেন—নতুন কোর্স শুরু, আরও ভবন নির্মাণ, ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার এবং গবেষণাধর্মী কাজের সুযোগ বাড়ানো।
রজতজয়ন্তীর এই মুহূর্ত তাই শুধু অতীতের উদযাপন নয়, বরং আগামী দিনের স্বপ্নকে আরও দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরার প্রতীক। 🚀📘
