পুরুলিয়ায় আগাম শীতের দাপট নভেম্বরেই।

পুরুলিয়ায় এ বছর শীত আগেভাগেই নিজের খোঁজ দিল। নভেম্বরের মাঝামাঝিতেই তাপমাত্রা নেমে এল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ দিকে দেখা যায়। 

হঠাৎ এই তাপমাত্রা পতনে জেলাজুড়ে কুয়াশা, ঘন শিশির এবং শিরশিরে ঠান্ডা হাওয়ার দাপট স্পষ্ট। সকাল থেকে রাত—প্রতিটি মুহূর্তেই শীতের চাপ বাড়ছে, ফলে প্রবীণ, শিশু ও দিনমজুরদের ভোগান্তি বেড়েছে। 

বাঘমুন্ডি, বরাবাজার, ঝালদা ও জয়পুরের মতো পশ্চিমাঞ্চলের এলাকায় ঠান্ডা আরও তীব্র।আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, লা নিনা–র প্রভাবে এ বছর শীত আরও স্থায়ী ও তীব্র হতে পারে। 

ডিসেম্বরের শুরুতেই পারদ আরও নীচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পুরুলিয়ার আগাম শীতের সবশেষ আপডেট জেনে নিন।


purulia weather november

📰 নভেম্বরের মাঝামাঝিতেই কাঁপছে পুরুলিয়া—পারদ নামল ৯ ডিগ্রিতে 🥶❄️

পুরুলিয়ায় শীতের আগমন এ বছর যেন প্রকৃতির নিজস্ব ঘড়িকে পেছনে ফেলে আরও আগেভাগেই এসে পড়েছে। 

নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়টুকু সাধারণত মৃদু শীতের ইঙ্গিত দেয়, কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন। 

ভোরের আলো ফুটতেই জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে কুয়াশার মোটা চাদর, যে কুয়াশা কখনো কখনো দুপুর পর্যন্ত কাটছে না। 

বৃহস্পতিবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ৯.০°C, যা নভেম্বর মাসের জন্য অবাক করার মতো কম। 

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬°C হলেও তা মানুষের কাছে তেমন উষ্ণতা এনে দিতে পারছে না। বাতাসে রয়েছে শিরশিরে ঠান্ডার স্পর্শ, আর সকাল–সন্ধের তাপমাত্রা পতনে সাধারণ মানুষের গায়ে কাঁপুনি লেগে যাচ্ছে। 

স্কুলপড়ুয়া থেকে প্রবীণ—কারও পক্ষেই সকালে বাইরে বের হওয়া সহজ হচ্ছে না। অনেকে সকালে বেশ কয়েক স্তরের পোশাক পরে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন। 

বাজার-ঘাটের পরিবেশেও শীতের ছাপ স্পষ্ট—চায়ে ভিড়, গরম পোশাকের দোকানে উত্তেজনা, আর স্টোভ-চুলোর পাশে বসে মানুষের গল্পগুজব। 

এ বছরের শীত যেন পুরুলিয়াকে নতুনভাবে চমকে দিয়েছে। মানুষের মনে একদিকে যতই শীতের কষ্ট থাকুক, অন্যদিকে শীতের আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর নস্টালজিয়া মিলেমিশে তৈরি করেছে এক অনন্য আবহ।


🌁 শীতের দাপট—কুয়াশা, শিশির আর ঠান্ডা হাওয়ায় জমে যাচ্ছে জেলাজুড়ে সকাল–সন্ধে 🌫️❄️

গত কয়েক দিনে পুরুলিয়ায় শীতের মতোই দৃশ্য আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন সকালবেলা রাস্তায় বেরোলে প্রথমেই চোখে পড়ে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পথঘাট। 

অনেক জায়গায় দৃশ্যমানতা এতটাই কমে যায় যে গাড়িচালকদের গতি কমিয়ে এগোতে হচ্ছে। গ্রামের দিকে তো পরিস্থিতি আরও ঘন—পথের দু’ধার জুড়ে সাদা কুয়াশার দেয়ালের মতো দৃশ্য দাঁড়িয়ে থাকে। 

শিশিরপাত এত বেশি যে ঘাসের ডগায় ছোট ছোট পানির দানা জমে ঝিলমিল করছে। কৃষকেরা সকালবেলা মাঠে গেলে দেখছেন ধানের গাছ থেকে শুরু করে সবজির পাতায় টপটপ করে শিশির ঝরছে, যেন রাতভর শীত নিজে এসে গাছেদের ছুঁয়ে গেছে। 

দুপুরের দিকে কিছুটা রোদ উঠলেও ঠান্ডার দাপট কমছে না। অনেকে বলছেন, “রোদটা যেন উষ্ণ নয়, শুধু আলো।” 

বিকেল গড়াতে না গড়াতেই আবার ঠান্ডা হাওয়া ঝাপটা মেরে মানুষকে ঘরে ঢুকতে বাধ্য করছে। দোকানপাটেও সন্ধের পর থেকে আগুন জ্বালিয়ে গরম নেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ছে। 

শীতের আগমন পুরুলিয়ায় যেমন প্রকৃতির রূপ ফুটিয়ে তুলেছে, তেমনই সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও এনেছে নতুন গতি—কেউ শীতকে উপভোগ করছেন, কেউ আবার শীতের তীব্রতায় একটু সমস্যায় পড়ছেন, কিন্তু শীতের আমেজ সর্বত্রই একরকম ছড়িয়ে পড়েছে।


🏔️ বাঘমুন্ডি, বরাবাজার, ঝালদা ও জয়পুর—পশ্চিমাঞ্চলে শীতের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি 🏞️❄️

পুরুলিয়ার শীতপ্রবণ এলাকা নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। বরাবরের মতোই এ বছরও জেলার পশ্চিমাঞ্চল—বিশেষত বাঘমুন্ডি, বরাবাজার, ঝালদা ও জয়পুর সবচেয়ে বেশি ঠান্ডার কবলে পড়েছে। 

এই সব এলাকায় জঙ্গলের বিস্তৃতি বেশি এবং পাহাড়ি ভূখণ্ড থাকার কারণে শীতের সময় ঠান্ডা হাওয়া সহজেই নীচের দিকে নেমে আসে। 

ফলে দিনের বেলা যেখানে গরম সামান্য টের পাওয়া যায়, রাত নামলেই তাপমাত্রা দ্রুত নিম্নগামী হয়। 

গত ১৩ নভেম্বর এই অঞ্চলগুলির কিছু জায়গায় তাপমাত্রা নেমেছিল ৮.৫°C–এ, যা সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ দিকে দেখা যায়। 

স্থানীয় মানুষজনের মতে, “রাতে যেন হাওয়া নয়, বরফের ছুরি গায়ে লাগছে।” এই এলাকায় সকালবেলা চাষিরা মাঠে গেলে দেখছেন শীতের কুয়াশায় জমির উপর সাদা চাদরের মতো আবরণ পড়ে রয়েছে। 

খড়কাঠি, গাছের পাতায় শিশির জমে ঝুলে আছে। বিকেলের পরে বাইরের কাজে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। অনেক পরিবার সন্ধে হলেই ঘরে ঢুকে কম্বল জড়িয়ে বসে যাচ্ছেন। 

একদিকে যেমন মানুষ ঠান্ডার কষ্ট পাচ্ছেন, অন্যদিকে পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে শীতের সৌন্দর্য ফ্রেমবন্দি হচ্ছে—অযোধ্যা পাহাড়ের ঢালে কুয়াশা, জঙ্গলের মধ্যে হালকা আলো, আর শীতের শান্ত নীরবতা। 

ফলে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এই সময়টি এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।


🌡️ কেন এত ঠান্ডা? লা নিনা–র প্রভাবেই বদলে যাচ্ছে পুরুলিয়ার শীতের ধরন 🌍❄️

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছরের শীতের তীব্রতা ও আগমন—দুটোই আগেভাগে ঘটেছে, আর এর মূল কারণ হল লা নিনা (La Niña)। 

লা নিনা একটি জলবায়ুজনিত আন্তর্জাতিক ঘটনা, যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যবর্তী অঞ্চলের জলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় দ্রুত কমে যায়। 

এই ঠান্ডা জল পুরো বিশ্বের আবহাওয়া ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। এর ফলে বায়ুচাপ, বাতাসের গতি, আর্দ্রতা—সবকিছুতেই পরিবর্তন আসে। 

পূর্ব ভারতের দিকে ঠান্ডা ও শুষ্ক উত্তর-পশ্চিমের হাওয়া বেশি প্রবেশ করে, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে পাহাড়বেষ্টিত অঞ্চলে, বিশেষত পুরুলিয়ায়। 

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এ বছর লা নিনার শক্তি বেশি, তাই শীত হতে চলেছে দীর্ঘস্থায়ী ও বেশি তীব্র। 

আরও বলা হচ্ছে, নভেম্বরের মাঝামাঝিতেই পুরুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯°C–এ নেমে যাওয়া আসলে ডিসেম্বর–জানুয়ারিতে কী আসছে তার আগাম সংকেত। 

যদি লা নিনার প্রভাব একইভাবে সক্রিয় থাকে, তাহলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শীত নিজের চূড়ান্ত তেজ দেখাতে পারে। 

এমনকি অনেকের ধারণা, এ বছর পুরুলিয়ার তাপমাত্রা ৩°C–এরও নিচে নেমে যেতে পারে। 

পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা যেতে পারে ভূমি তুষার (Ground Frost), যা এখানে অত্যন্ত বিরল। ফলে প্রশাসন, কৃষক, সাধারণ মানুষ—সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।


Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url