কোটশিলায় প্রশাসনের তৎপরতায় রুখে গেল বাল্যবিবাহ।
চিতরপুর গ্রামের মতো শান্ত, অপ্রচলিত একটি জায়গায় হঠাৎই বাল্যবিবাহের তোড়জোড়ের খবর পৌঁছায় প্রশাসনের কাছে।
ঝালদা ২ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত কোটশিলা থানার এই গ্রামে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আগেই দ্রুত পদক্ষেপ নেয় প্রশাসন।
গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৎক্ষণাৎ সেখানে পৌঁছে যান চাইল্ড ম্যারেজ প্রিভেনশন অফিসার অর্ণব চক্রবর্তী ও কোটশিলা থানার কয়েকজন পুলিশকর্মী।
অভিযোগ অনুযায়ী, নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল পরিবারের অজান্তে নয়, বরং সামাজিক চাপের মধ্যেই।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রথমেই মেয়েটির বয়স যাচাইয়ের উদ্যোগ নেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। পরিবারের দেওয়া নথিপত্র পর্যালোচনা করতেই পরিষ্কার হয়ে যায়, মেয়েটির বয়স এখনও আঠারো হয়নি।
পরিবারের পক্ষ থেকেও এই তথ্য অস্বীকার করা হয়নি। তাই আর কোনও দেরি না করে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ আইন, ২০০৬ অনুযায়ী সম্ভাব্য শাস্তি সম্পর্কে স্পষ্ট সতর্ক করা হয় অভিভাবকদের।
প্রশাসন বোঝায়, নাবালিকা মেয়ের বিয়ে শুধুমাত্র আইনের বিরুদ্ধে নয়, এর সামাজিক ও মানসিক ক্ষতিও গভীর হতে পারে—যা বহু পরিবার আজও উপেক্ষা করে।
আধিকারিকদের এই হস্তক্ষেপের পরই থেমে যায় বিয়ের সমস্ত প্রস্তুতি। মেয়ের পরিবার লিখিত অঙ্গীকারপত্রে জানিয়ে দেয়, মেয়ের ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনওভাবেই বিয়ে দেবে না। এই প্রতিশ্রুতির মাধ্যমেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিন শুধুমাত্র অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়নি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামবাসীকেও বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক ও আইনি ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা হয়।
বহু মানুষই এই আলোচনা থেকে উপকৃত হন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে সাহায্যের আশ্বাস দেন।
কোটশিলার মতো এলাকায় বহু সময়ে নজরের বাইরে এমন ঘটনা ঘটে যায়। তবে প্রশাসনের এই তৎপরতা প্রমাণ করল—সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিলে কোনও নাবালিকার জীবন অন্ধকারের দিক থেকে ফেরানো সম্ভব।
এ ধরনের সচেতনতা ও নজরদারি সমাজে বাল্যবিবাহ রোধে আরও কার্যকরী ভূমিকা নেবে, এমনটাই আশা স্থানীয় মহলের।
