পুরুলিয়ায় পরিবেশ বার্তার সাইক্লোথন।
পুরুলিয়ায় শিশু দিবস উপলক্ষে বনদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত ৪০ কিলোমিটারের পরিবেশ-বার্তার সাইক্লোথনটি শুধু একটি সাইকেল রাইড ছিল না, বরং পরিবেশ রক্ষার প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতা জাগানোর এক মানবিক চেষ্টা।
বিভিন্ন ডিভিশনের প্রায় ৫০ জন কর্মী এই অভিযানে অংশ নিয়ে পথের ধারে দোকানদার, পথচারী ও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে প্লাস্টিক ব্যবহার কমানোর গুরুত্ব তুলে ধরেন।
শীতের পর্যটন মরসুমে প্লাস্টিক বোতল ও একবার ব্যবহারযোগ্য ব্যাগের ব্যবহার কমাতে সবাইকে সচেতন করার বার্তাও ছড়ানো হয়।
শিশু দিবসে অনুষ্ঠিত এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল—আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য, সুস্থ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা।
পুরুলিয়ায় পরিবেশ বার্তার সাইক্লোথন শিশুদের সবুজ ভবিষ্যৎ রক্ষায় বনদপ্তরের অনন্য উদ্যোগ 🚴♂️🌿
⭐ পরিবেশ রক্ষার অঙ্গীকারে পুরুলিয়ার ৪০ কিলোমিটারের সাইকেল যাত্রা
শিশু দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক দিনে পুরুলিয়া জেলায় অনুষ্ঠিত হল পরিবেশ–সচেতনতার এক অসাধারণ উদ্যোগ, যার নাম পরিবেশ–বার্তার সাইক্লোথন।
এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষকে জানানো যে পরিবেশ যদি আজ রক্ষা না করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে শিশুদের জন্য সুস্থ পৃথিবী রেখে যাওয়া সম্ভব হবে না।
সকালে পুরুলিয়ার পাড়া ফরেস্ট রেঞ্জ অফিস থেকে শুরু হওয়া এই ৪০ কিলোমিটারের দীর্ঘ সাইক্লোথন ছিল শুধুই একটি সাইকেল রাইড নয়, বরং পরিবেশ রক্ষার জন্য এক কার্যকর সামাজিক আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি।
বনদপ্তরের পুরুলিয়া ডিভিশন, কংসাবতী নর্থ-সাউথ ডিভিশন, এক্সটেনশন ফরেস্ট্রি ডিভিশন এবং পুরুলিয়া ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড—এই চারটি বিভাগের ৪৫–৫০ জন কর্মী এবং আধিকারিকরা সকালের নরম রোদের মধ্যে পাথরঢালা রাস্তা ধরে সাইকেল চালিয়ে যাত্রা শুরু করেন।
অযোধ্যার পাহাড়ি ঢাল, গ্রামের সরু রাস্তা এবং বাজারঘাটা পেরোনোর সময় প্রত্যেকের চোখে-মুখে ছিল এক অদ্ভুত আগ্রহ ও দায়িত্ববোধ।
তারা জানতেন, মানুষের মনে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আজ তাদেরই।
সেই কারণেই পথের প্রতিটি মোড়ে, ছোট ছোট বাজারে এবং চায়ের দোকানগুলোর সামনে থেমে তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতায় সময় দেন, যাতে তাদের বার্তা আরও বেশি মানুষের কানে পৌঁছায়।
এই ৪০ কিলোমিটারের যাত্রা শেষ হয় হুড়া ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসে, যেখানে পৌঁছে সকল অংশগ্রহণকারী নিজেদের ক্লান্তি ভুলে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন।
পরিবেশ রক্ষার এই অভিযাত্রা অংশগ্রহণকারীদের কাছে যেমন আনন্দের, তেমনি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে। 🌍💚
⭐ দোকানদার থেকে পথচারী—সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া পরিবেশ সচেতনতার বার্তা
এই সাইক্লোথনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল যে এটি শুধু রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাওয়া একটি প্রচার কর্মসূচি ছিল না; বরং তা ছিল মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের মনোভাব বদলানোর এক বাস্তবসম্মত উদ্যোগ।
পরিবেশ সচেতনতা মানুষের জীবনে ঢুকবে তখনই যখন তারা বুঝবে যে এই পৃথিবী রক্ষার দায়িত্ব কেবল সরকারের নয়—প্রত্যেক নাগরিকের।
সেই কারণেই বনদপ্তরের কর্মীরা পথে চলতে চলতেই দোকানদার, চায়ের দোকানের মালিক, বাজারের বিক্রেতা এবং পথচলতি সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে স্পষ্টভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন—প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এখন সময়ের দাবি।
তারা দোকানদারদের বলেন, “পর্যটকদের কাছে যতটা সম্ভব পরিবেশবান্ধব ব্যবহারের বার্তা পৌঁছে দিন। প্লাস্টিক বোতল বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগ না দেওয়াই ভালো।”
অনেক দোকানদার আবার এই বার্তা শুনে বলেন যে তাঁরা শীতের পর্যটন মরসুমে প্লাস্টিক-মুক্ত দোকান হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চান।
গ্রামের মানুষও বলেন—“প্লাস্টিকের ক্ষতি আমরা আগে এত গভীরভাবে ভাবিনি। আপনারা এসে বলায় আমরা এখন থেকে আরও সতর্ক থাকব।”
এই কথোপকথনগুলি প্রমাণ করে যে পরিবেশ রক্ষা শুধু পোস্টার বা প্রচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং মানুষের সঙ্গে সোজাসুজি কথা বললে তারা বিষয়টি ভালোভাবে বোঝেন এবং পরিবর্তন আনতে আগ্রহী হন।
মানুষের এই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া বনদপ্তরের কর্মীদের মনেও নতুন উদ্যম সৃষ্টি করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় উদ্যোগ নেওয়ার অনুপ্রেরণা দেবে। 🌱🤝
⭐ পর্যটন মরসুমের আগে প্লাস্টিক-মুক্ত পুরুলিয়া গড়ার ডাক
শীত এলেই পুরুলিয়া জেলাজুড়ে পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ে। অযোধ্যা পাহাড়, মায়াবতী জলাধার, খুঁটিঘাট, বরনগর—সব জায়গাতেই মানুষ ছুটে আসেন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
কিন্তু এই বাড়তি মানুষের আনাগোনার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে প্লাস্টিক, বোতল, র্যাপার এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্যাকেট ফেলার প্রবণতা।
এই প্লাস্টিক জমে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন নষ্ট করে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদে বনজ প্রাণীর জীবন এবং মাটির গুণমানের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
সেই কারণেই সাইক্লোথনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল—এই পর্যটন মরসুমের আগে পুরুলিয়ার মানুষকে জানানো যে তাদের ছোট ছোট সিদ্ধান্ত পরিবেশ রক্ষায় বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।
কর্মীরা দোকানদারদের বলেছিলেন—“আপনারা যদি পর্যটকদের কাছে নিজেরাই প্লাস্টিক-বিরোধী বার্তা দেন, তাহলে তার প্রভাব অনেক বেশি হবে।”
তাঁরা আরও বলেন, “একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বন্ধ হয়ে গেলে পুরুলিয়ার পাহাড়ি অঞ্চল বাঁচবে এবং পর্যটকরাও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন।”
এর সঙ্গে দোকানদারদের হাতে দেওয়া হয় পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহারের অনুরোধ। অনেক দোকানদার আবার নিজেরাই জানান, তাঁরা কাপড়ের ব্যাগ রাখার ব্যবস্থা করবেন।
এই অংশগ্রহণ দেখিয়ে দেয়—মানুষ সচেতন হলে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা খুব কঠিন কাজ নয়।
এই সাইক্লোথন তাই শুধু একটি দিনের কর্মসূচি নয়; বরং এই বার্তায় জেগে উঠেছে প্লাস্টিক-মুক্ত পুরুলিয়া গড়ার নতুন স্বপ্ন। 🌿♻️
⭐ সাইক্লোথনে নিরাপত্তার জন্য বিশেষ মোবাইল ভ্যান–সুবিধা
যেকোনো বড় সামাজিক উদ্যোগের মতোই এই সাইক্লোথনের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেই কারণেই পুরো পথজুড়ে একটি মোবাইল সাপোর্ট ভ্যান অংশগ্রহণকারীদের পাশে থেকে তাদের সর্বক্ষণ সহায়তা করে।
এই ভ্যানে ছিলেন দক্ষ সহায়ক কর্মীরা, যারা সাইকেল নষ্ট হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা মেরামত করে দিতেন।
এছাড়াও কারও শরীর খারাপ হলে বা কারও শ্বাসকষ্ট বাড়লে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা রাখা ছিল।
এমনকি সাইক্লিংয়ের দীর্ঘ পথের মাঝে ক্লান্তি দূর করতে জল, ওআরএস, খাবার এবং বিশ্রামের সুবিধাও দেওয়া হয়।
এর পাশাপাশি ভ্যানে ছিল যোগাযোগ–ব্যবস্থা, যাতে কোনো অংশগ্রহণকারী সমস্যায় পড়লে তৎক্ষণাৎ সাহায্য পৌঁছে যায়।
এই ব্যবস্থা সাইক্লোথনের অংশগ্রহণকারীদের মনে ভরসা জুগিয়েছে। অনেক অংশগ্রহণকারী জানান—“এই সাপোর্ট সিস্টেম না থাকলে এত বড় পথ সাইকেল চালানো কঠিন হত। কিন্তু ভ্যান থাকার কারণে আমাদের ভিতরে আত্মবিশ্বাস ছিল যে কোনও সমস্যা হলেই সহযোগিতা মিলবে।”
এই সুরক্ষিত পরিবেশ সাইক্লোথনকে আরও সফল করে তুলেছে এবং দেখিয়েছে যে বড় উদ্যোগের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 🚑🚴♀️
⭐ শিশু দিবসে পরিবেশ সুরক্ষার বার্তা—ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা
এই বছরের সাইক্লোথনকে বিশেষ করে তুলেছে যে বিষয়টি, তা হল—এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে শিশু দিবসের দিন।
শিশু দিবস সাধারণত খেলা, মজা, পড়াশোনা ও আনন্দের দিন হলেও, বনদপ্তর এই দিনে একটি গুরুতর বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছে—“আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই পরিবেশকে সুস্থ রাখা আমাদের দায়িত্ব।”
এডিএফও সায়নী নন্দী আবেগঘন কণ্ঠে বলেন—“আজ শিশু দিবস। এই শিশুদের ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে সুস্থ ও বাসযোগ্য রাখা আমাদের সবার কর্তব্য। সেই বার্তাই ছড়িয়ে দিতে আজকের এই পরিবেশ–অভিযান।”
তাঁর কথায় উঠে আসে দায়িত্ববোধ, মমত্ব এবং বাস্তবতা।
শিশুরা যেমন মাটিতে দৌড়ায়, গাছে চড়ে, নদীর ধারে খেলে, ঠিক তেমনই সুস্থ পরিবেশ ছাড়া তাদের বড় হওয়া অসম্ভব।
কিন্তু ক্রমবর্ধমান দূষণ, বনভূমি ধ্বংস, নদী দূষণ ও প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহার ভবিষ্যৎকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
সেই কারণে এই সাইক্লোথন মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিল—“আপনি আজ পরিবেশ রক্ষায় ছোট একটি পদক্ষেপ নিলে, তা আগামী দিনের শিশুদের জন্য বড় উপহার।”
এই বার্তা নিয়ে যখন বনদপ্তরের কর্মীরা সাইকেল চালাচ্ছিলেন, তখন পথের ধারে থাকা শিশুদের চোখে ছিল বিস্ময় ও আনন্দ। তারা হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিল।
অনেকেই বলছিল—“দাদারা পরিবেশ বাঁচাতে যাচ্ছেন!”
এই ছোট ছোট প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে—পরিবেশ রক্ষার বার্তা শিশুদের মধ্যেও পৌঁছে গেছে এবং তারা বড় হয়ে এই পৃথিবীকে সুন্দর রাখতে আরও এগিয়ে আসবে। 🌍👧👦
