আড়শায় ভোটার তালিকায় ভয়ংকর গরমিল।
পুরুলিয়ার আড়শার ২৫৩ নম্বর বুথে ভোটার তালিকায় এমন ভয়ঙ্কর গরমিল ধরা পড়েছে, যা পুরো এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে দিয়েছে।
জীবিত মানুষকে মৃত দেখানো হয়েছে, আবার বহু আগে প্রয়াত ব্যক্তিদের নাম তালিকায় জীবিত হিসেবে রাখা হয়েছে—যা সাধারণ মানুষের পরিচয়, অধিকার এবং প্রশাসনিক বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে চলা বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়ার মধ্যেই এই ভুল সামনে আসে, যখন BLO–রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিলি করেন।
গ্রামের বাসিন্দারা এই ঘটনায় অপমানিত ও দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত বোধ করছেন, কারণ ভোটার তালিকা শুধু ভোট দেওয়ার মাধ্যম নয়, সরকারি সুবিধা ও পরিচয়ের এক অপরিহার্য নথিও।
ঘটনাটি প্রশাসনের অসতর্কতা ও তথ্য যাচাই প্রক্রিয়ার ত্রুটি স্পষ্ট করেছে। বিডিও আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত সমাধান হবে।
🟦 আড়শায় ভোটার তালিকায় ভয়ঙ্কর ভুল জ্যান্তরা মৃত আর মৃতরা জিয়ন্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে আতঙ্ক
পুরুলিয়ার জয়পুর বিধানসভার অন্তর্গত আড়শা অঞ্চল যেন হঠাৎই অদৃশ্য অশান্তির ঘূর্ণিতে পড়ে গেছে।
ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ পর্যায় (SIR) চলাকালীন যে বিপুল গরমিল ধরা পড়েছে, তা এতটাই অবিশ্বাস্য যে সাধারণ মানুষ আক্ষরিক অর্থে হতবাক হয়ে গেছেন।
ভোটার তালিকা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি, যা নাগরিকের পরিচয়ের সঙ্গে জড়িত, অধিকার প্রয়োগের সঙ্গে যুক্ত, আবার সরকারি সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও অপরিহার্য।
অথচ এই তালিকাতেই জীবিত মানুষকে মৃত দেখানো হয়েছে আর বহু আগেই প্রয়াত মানুষদের নাম তালিকায় জিয়ন্ত হিসেবে রাখা হয়েছে—যা শুধু একটি ভুল নয়, মানুষের অস্তিত্ব ও পরিচয়কে নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। 🆘😟
এই ঘটনার জেরে আড়শা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের বিশ্বাস ভেঙে পড়েছে প্রশাসনিক নির্ভুলতার ওপর।
ধারণা করা হচ্ছে, ভোটার তালিকার ডিজিটাল আপডেটের সময় তথ্য যাচাই প্রক্রিয়ায় গুরুতর অসাবধানতা, পর্যাপ্ত মাঠ পর্যায়ের সমীক্ষার অভাব এবং সফটওয়্যার পরিচালনার ত্রুটির কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।
মানুষ ভাবছেন—যদি জীবিত মানুষকে 'মৃত' বানিয়ে দেওয়া যায়, তবে ভবিষ্যতে আরও বড় ভুল হলে তাঁদের ভোটাধিকার কি রক্ষা পাবে?
আর মৃত মানুষকে ‘জীবিত’ দেখানোটা তো আরও ভয়ানক, কারণ এতে অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে কেউ মৃত মানুষের নামে ভোট দেওয়া বা ফর্ম ব্যবহার করার সুযোগও পেতে পারে।
এই ভয়, প্রশ্ন, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পুরো এলাকা যেন এক অদৃশ্য উদ্বেগে ঢেকে গেছে। 😰⚠️
🟦 ২৫৩ নম্বর বুথে বিস্ময়কর গরমিল জীবিত তিনজনকে মৃত দেখানো হলো
আড়শার ২৫৩ নম্বর বুথের ঘটনাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মোট ৬৯৭ ভোটার থাকা এই বুথেই সামনে এসেছে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ভুল।
এখানকার তিন বাসিন্দা—সাহেব কুমার, বিজলা কুমার, এবং রেণুবালা কুমার—যাঁরা একদম স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন কাজকর্ম করেন, সবার সঙ্গে মিশছেন, সামাজিক অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন—তাঁদেরই ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
BLO–রা যখন বাড়িতে ফর্ম দিতে আসেন তখনই ধরা পড়ে ভয়ঙ্কর গরমিল। তাঁদের নাম তালিকা থেকে সম্পূর্ণ বাদ।
এই ভুলের কারণে পরিবারগুলো ভীষণভাবে আতঙ্কিত ও মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। গ্রামের মানুষের ভাষায়—“বেঁচে থেকেও নাকি আমরা মৃত!”—এই বাক্য উচ্চারণ করতে গিয়েই অনেকে কেঁপে উঠেছেন।
কারণ গ্রামে পরিচয় মানে সম্মান, সরকারি সুবিধা, নানান প্রমাণপত্রের ভিত্তি—সবকিছুর সঙ্গে জড়িত এই ভোটার কার্ড।
কেউ বেঁচে থেকেও যদি সরকারি নথিতে ‘মৃত’ হিসেবে চিহ্নিত হন, তবে তিনি সুবিধা বঞ্চিত হতে পারেন, এমনকি দরকার হলে নিজের পরিচয় প্রমাণ করতেও সমস্যায় পড়তে পারেন।
অনেকের মুখেই ক্ষোভ—
“আমরা জীবিত, কথা বলছি, বাড়িতে রয়েছি—তবুও ভোটার তালিকায় মৃত!”
এই ভুল শুধু কর্মকুশলতার অভাব নয়, এটি নাগরিকদের মানসিকভাবে অপমান করারই সামিল।
BLO–দের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠছে, তেমনই পুরনো ডেটা আপডেটের প্রক্রিয়া নিয়েও মানুষের সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ডিজিটাল সিস্টেমের গরমিল কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা এবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ঘটনা। 😡📝
🟦 মৃত তিনজনকে জীবিত দেখানো আরও বড় বিপত্তি
যেখানে জীবিত মানুষকে মৃত বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখানে উল্টো ঘটনাটিও ঘটেছে—প্রয়াত ব্যক্তিদের নাম তালিকায় জীবিত হিসেবে রাখা হয়েছে।
দীর্ঘদিন আগে মারা গেছেন উমাচরণ কুমার, গতিলাল কুমার, এবং দীনেশ কুমার। তাঁদের পরিবার বহু বছর ধরে শোক বহন করছে, স্মৃতি আঁকড়ে রেখেছে।
অথচ সেই প্রিয়জনদের নাম আবার জীবিত ভোটার তালিকায় দেখে পরিবারের লোকজন শোকের সঙ্গে ক্ষোভও অনুভব করছেন।
একজন পরিবারের সদস্য বলেন—
“যে মানুষটা আর আমাদের মধ্যে নেই, তাঁর নামে ফর্ম বিলি হচ্ছে। এটা কি মর্যাদার অপমান নয়?”
মৃত মানুষের নাম সক্রিয় থাকা নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর বড় প্রশ্ন তুলে দেয়। এতে অসাধু লোকেরা প্রয়াত ব্যক্তির নামে ভোট দেওয়া বা সরকারি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
এই ধরনের ভুল ভোটার তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতাকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গ্রামের প্রবীণরা বলছেন— আগে যখন সব কিছু লিখে রাখা হতো তখন এত ভুল হতো না।
এখন ডিজিটাল যুগে ভুল যেন আরও বেড়েছে। তাদের মতে, প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, মানুষের যাচাই ছাড়া ব্যবস্থা কখনও নির্ভুল হতে পারে না।
পুরো গ্রামবাসীর মতে, এই ভুল অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য। এতে শুধুমাত্র প্রযোজ্য ভোটারের সম্মান ক্ষুণ্ণ হয় না, প্রয়াত মানুষের প্রতি অবমাননাও ঘটে।
সমাজের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধেও আঘাত লাগে। তাই দ্রুত সংশোধন ও দায়িত্ব নির্ধারণের দাবি ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। 😔⚰️
🟦 স্থানীয়দের ক্ষোভ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
আড়শার মানুষ আজ শুধু হতবাকই নন, ক্ষোভে উত্তপ্ত। গ্রামের আড্ডা, চায়ের দোকান, রাস্তাঘাট—যেখানেই যাবেন সেখানেই শোনা যাচ্ছে একই কথা—“এই ভুল কীভাবে হলো?”।
মানুষের মতে, যে সরকারি কর্মীরা এমন গুরুতর দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। ভোটার তালিকা সংশোধন কোনো সাধারণ কাজ নয়, এটি মানুষের পরিচয় নির্ধারণের বিষয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ—
-
BLO–রা অনেক ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই না করেই আপডেট করেন।
-
পুরনো তথ্য বাদ দিতে গিয়েও ভুল হয়।
-
তালিকা আপডেটের সময় যথেষ্ট সময় দেওয়া হয় না।
-
প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখলে তৎক্ষণাৎ আপডেট বা রিপোর্ট করা হয় না।
গ্রামে একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন—
“ভোটার তালিকার মতো বড় কাজে ভুল হলে তো মানুষের অস্তিত্বই বদলে যাওয়ার ভয় থাকে!”
আবার তরুণ প্রজন্মের বক্তব্য—এ ধরনের ভুল নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর মানুষের বিশ্বাস কমিয়ে দেয়। ভবিষ্যতে ভোটের সময় যদি আরও এমন সমস্যা দেখা দেয়, তবে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।
গ্রামবাসীর মধ্যে ভয়, ক্ষোভ, অপমান—সব অনুভূতিই মিলেমিশে আছে এই ঘটনার পর। তারা দাবি করছেন, শুধু ভুল সংশোধন নয়, এমন ভুলের কারণ চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
🟦 প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া বিডিওর আশ্বাস এবং ভবিষ্যতের করণীয়
ঘটনা সামনে আসতেই আড়শা ব্লকের বিডিও গোপাল সরকার অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন—
“যাদের নাম তালিকায় নেই তাঁদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জীবিতদের নাম তালিকায় থাকবে, মৃতদের বাদ দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।”
বিডিওর এই আশ্বাসে কিছুটা স্বস্তি এলেও মানুষের ভরসা পুরোপুরি ফিরতে সময় লাগবে। কারণ এই ভুল শুধু একটি নাম-অনুপস্থিতি নয়—এটি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরিচয়ের ত্রুটি।
বিশেষজ্ঞদের মতে—
-
প্রতিটি বুথে দ্বিতীয় পর্যায়ের যাচাই করা জরুরি।
-
BLO–দের আরও প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
-
ডিজিটাল আপডেট দু'ধাপে পরীক্ষা করা উচিত।
-
প্রতিটি বাড়ি ভিজিট বাধ্যতামূলক করা উচিত।
যদি এভাবে সংশোধনের সময় আরও কঠোর পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এরকম ভুল অনেকটাই কমে যাবে।
প্রশাসনও এই ঘটনার পর সতর্ক হয়েছে এবং জেলার অন্যান্য অঞ্চলেও অতিরিক্ত যাচাই শুরু করেছে।
