পুরুলিয়ায় শিক্ষক সম্মিলনীতে অক্ষয় ভগতকে সংবর্ধনা।

পুরুলিয়ার মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত শিক্ষক সম্মিলনীতে জেলার শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশগ্রহণ করেন। 

অনুষ্ঠানে শিক্ষক সমাজের সংহতি, কল্যাণ ও অধিকার রক্ষা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভ্রমণকারী “সাইকেল ম্যান” অক্ষয় ভগত, যিনি তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সকলকে অনুপ্রাণিত করেন। 

সভায় শিক্ষকদের প্রশাসনিক সমস্যা, রোস্টার সংশোধন, এবং গ্রুপ মেডিক্যাল ইন্স্যুরেন্স “ভরসা” নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, আবৃত্তি এবং সঙ্গীত অনুষ্ঠান শিক্ষকদের মধ্যে আনন্দ, উদ্দীপনা ও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করেছে। 

এই মিলনশীল সম্মিলনী শিক্ষক সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা ও শক্তি সঞ্চারের একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠেছে। 🎉


purulia shikkhok sammiloni akshay bhagat

পুরুলিয়ায় শিক্ষক সম্মিলনীতে অক্ষয় ভগতকে সংবর্ধনা

পুরুলিয়ার মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হল অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (APTWA)-এর জেলা সংগঠনের বিজয়া সম্মিলনী, যা শিক্ষক সমাজের জন্য একটি বিশেষ দিনের মতো ছিল। 

এই সম্মিলনীতে জেলার প্রায় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশগ্রহণ করেন এবং উপস্থিতরা শিক্ষকতার গুরুত্ব ও তাদের অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে আলোচনা ও বিনিময়মূলক মতামতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করেন। 🌟

এই সম্মিলনী মূলত শিক্ষকদের সংহতি, কল্যাণ এবং আত্মসম্মান রক্ষা কে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে। 

একদিকে যেমন শিক্ষকরা প্রশাসনিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন, তেমনই অন্যদিকে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও সামাজিক সংযোগ তাদের মানসিক শক্তি ও উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে। 

শিক্ষক সমাজের মধ্যে এই ধরনের সম্মিলনী শিক্ষক ও শিক্ষিকা হিসেবে তাদের পেশাগত এবং সামাজিক মর্যাদা আরও শক্তিশালী করে। 

শুভেচ্ছা বিনিময় ও আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তোলা এই অনুষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষকরা একে শুধু অফিসিয়াল আলোচনা নয়, বরং একটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং অনুপ্রেরণামূলক মিলন হিসেবে গ্রহণ করেন। 

অনুষ্ঠানটি শিক্ষকদের মধ্যে এক সামাজিক চেতনা এবং সহযোগিতার বোধ তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে যা তাদের দৈনন্দিন জীবন ও পেশাগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক।


শিক্ষক সমাজের সংহতি ও সাংস্কৃতিক আবহ

এই সম্মিলনীতে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শিক্ষকদের মধ্যে আনন্দ, উদ্দীপনা এবং সহমর্মিতা তৈরি করেছে। 🎶

প্রায়শই শিক্ষকরা দিনের বেশির ভাগ সময় ক্লাসরুম এবং অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাই এই ধরনের মিলন তাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং নতুন উদ্যম জোগাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

শিক্ষক সমাজের মধ্যে সংহতি এবং বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য অনুষ্ঠানটি কার্যকর। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা যেমন গান, আবৃত্তি এবং নাট্যাংশ, তা শিক্ষক সমাজকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনার উৎসাহ প্রদান করে।

জেলা সম্পাদক হর প্রসাদ রজক তার বক্তব্যে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া ও প্রশাসনিক সমস্যার বাস্তবতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন,

"আমরা শিক্ষকদের স্বার্থে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। সিএএস, ডাব্লুবিএইচএস এবং সম্প্রতি আলোচিত টিইটি ইস্যুতে আমরা ইতিবাচক ফল পাচ্ছি। রাজ্য নেতৃত্বের সহায়তা আমাদের আশা আরও শক্তিশালী করেছে।" 

এই বক্তব্য শিক্ষকদের মনে আত্মবিশ্বাস ও আশা জাগিয়েছে। শিক্ষকদের দাবির সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে শুধু তাদের পেশাগত উন্নয়ন নয়, বরং শিক্ষার মানও বৃদ্ধি পাবে।

অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক অংশ শিক্ষকদের মধ্যে মানসিক প্রশান্তি, সৃজনশীলতা এবং উদ্দীপনা তৈরি করে যা তাদের পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলে।


শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত

সম্মিলনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া ও প্রশাসনিক সমস্যা সমাধান নিয়ে আলোচনা। 

এই অংশটি শিক্ষক সমাজের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ন, কারণ এটি তাদের স্বাভাবিক অধিকার, রোস্টার সংশোধন এবং পোস্ট সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। 

সভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে গৃহীত হয় যে, শিক্ষকদের জন্য রোস্টার অফ অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনুযায়ী পোস্ট স্যাংশনিং মেমো প্রদান নিশ্চিত করতে আন্দোলন চলবে। 

এছাড়াও, বর্তমান রোস্টার সংশোধনের দাবিতে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে ডেপুটেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জেলা কনভেনর সাজিতব্য মাহাত শিক্ষকদের গ্রুপ মেডিক্যাল ইন্স্যুরেন্স “ভরসা” নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন,

"আমরা চাই, শিক্ষকদের জন্য প্রাপ্ত ইন্স্যুরেন্স সুবিধাগুলি আরও কার্যকর ও সহজলভ্য হোক। শিক্ষকেরা যেন নিরাপদে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন।" 

এই ধরনের পদক্ষেপ শিক্ষকদের মধ্যে নিরাপত্তা, আত্মবিশ্বাস এবং পেশাগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। 

শিক্ষকদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া, তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি লাভ এবং মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করে। 

প্রশাসনিক সমস্যা সমাধানে এই ধরনের মিলন শিক্ষকদের মধ্যে সংহতি এবং দৃঢ় প্রত্যয় তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


বিশেষ আকর্ষণ: সাইকেল ম্যান অক্ষয় ভগত

সম্মিলনীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল বিশ্বভ্রমণকারী অক্ষয় ভগতের বক্তব্য। 🚴‍♂️
অক্ষয় ভগত তাঁর সাইকেল যাত্রার মাধ্যমে বিশ্ব ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শিক্ষক সমাজের সঙ্গে ভাগ করেন। 

তিনি কিভাবে বিভিন্ন দেশে মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছেন, নতুন সংস্কৃতি অনুধাবন করেছেন এবং মানসিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন তা বর্ণনা করেন। জেলা সম্পাদক হর প্রসাদ রজক তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানান 

অক্ষয় ভগতের গল্প শিক্ষকদের মধ্যে সাহস, অধ্যবসায় এবং মানবিক মূল্যবোধকে উদ্দীপিত করে।

তার অভিজ্ঞতা শিক্ষকদের মনে অনুপ্রেরণা জাগায় যে, কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে জীবনকে নতুন উচ্চতায় নেওয়া সম্ভব। 

শিক্ষকেরা তার গল্প থেকে শেখেন কিভাবে নিজের স্বপ্ন অনুসরণ, পেশাগত উন্নয়ন এবং মানবিক সম্পর্ক সবকিছুর সমন্বয় করে সমাজে প্রভাব বিস্তার করা যায়। 

অক্ষয় ভগতের উপস্থিতি শুধু প্রেরণামূলকই নয়, এটি শিক্ষকদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং নতুন উদ্যম জাগানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

শিক্ষকদের মধ্যে নতুন সৃজনশীলতা এবং উদ্যমের জন্ম দেয় যা তাদের পেশাগত জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।


সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও অনুষ্ঠান সমাপ্তি

সম্মিলনীর শেষ পর্বে পুরুলিয়ার সুর সাধনা সঙ্গীত বিদ্যালয়ের শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশনা দেন। 🎵 

তাদের পরিবেশনা শিক্ষক সমাজে এক সৃজনশীলতা এবং আনন্দের অনুভূতি যোগ করে। এছাড়াও, অনুষ্ঠানে দিদিমনিদের আবৃত্তি শিক্ষকদের মধ্যে সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা জাগায়। 

শিক্ষকদের জন্য এই ধরনের সাংস্কৃতিক অংশগ্রহণ মানসিক প্রশান্তি এবং আবেগের সমৃদ্ধি প্রদান করে। 

শিক্ষকরা শুধু পাঠদানের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখেন না, বরং এই ধরনের মিলন এবং সাংস্কৃতিক অংশগ্রহণ তাদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষকদের মধ্যে বন্ধুত্ব, সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের ভাব বৃদ্ধি পায় যা তাদের দৈনন্দিন পেশাগত জীবনকে আরও শক্তিশালী করে।


সমাপনী মন্তব্য

পুরুলিয়ার এই বিজয়া সম্মিলনী শিক্ষকদের জন্য কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়; এটি একটি সংহতি, শিক্ষা, আনন্দ এবং প্রেরণার মিলনস্থল। 🎉 

শিক্ষক সমাজের দাবি-দাওয়া ও প্রশাসনিক সমস্যা সমাধান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এবং বিশেষ অতিথি অক্ষয় ভগতের অনুপ্রেরণামূলক অভিজ্ঞতা মিলিয়ে এটি একটি অতুলনীয় শিক্ষা ও আনন্দের মিলন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এই ধরনের সম্মিলনী শিক্ষকদের পেশাগত, সামাজিক ও মানসিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

শিক্ষকেরা শুধুমাত্র পাঠদানকারী নয়, বরং সমাজের আলোকবর্তিকা হিসেবে নিজেদের পরিচয় রাখে। 

শিক্ষক সমাজের এই ধরনের সম্মিলনী তাদের আত্মবিশ্বাস, উদ্যম এবং নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি করে যা সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে।


Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url