পুরুলিয়ার দীপাবলি বাজারে লাড্ডু প্রদীপের নতুন ট্রেন্ড।
পুরুলিয়ার দীপাবলি বাজারে এসেছে নতুন ট্রেন্ড — রাজস্থানি ছোঁয়ায় তৈরি লাড্ডু প্রদীপ ও হাতি প্রদীপ এখন সবার পছন্দের তালিকায়।
দীপাবলির আগে জঙ্গলমহলের প্রতিটি বাজারে চলছে কেনাকাটার উৎসব, আলো আর রঙের মেলায় মেতে উঠেছে মানুষ।
ঐতিহ্যের মাটির প্রদীপের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই অভিনব লাড্ডু প্রদীপ এনেছে নতুন মাত্রা। পিতল-কাঁসার মূর্তি থেকে কালীপুজোর প্রস্তুতি—সব মিলিয়ে আলোর উৎসবে ঝলমল করছে পুরো পুরুলিয়া। 🪔✨
🎆 পুরুলিয়ায় দীপাবলির নতুন ট্রেন্ড — লাড্ডু প্রদীপে জ্বলছে আলো 🌟
পুরুলিয়া জেলায় দীপাবলি এলেই শহর ও গ্রামজুড়ে আলোর উত্সব শুরু হয়। এই বছর সেই আলোর উত্সবে নতুন সংযোজন ঘটিয়েছে এক অভিনব ট্রেন্ড—লাড্ডুর মতো দেখতে প্রদীপ।
আলোর ঝলকে জঙ্গলমহল যেমন উজ্জ্বল, তেমনই পুরুলিয়ার প্রতিটি বাজারে দেখা যাচ্ছে মানুষের ভিড়। বুধবার থেকেই শুরু হয়েছে এই কেনাকাটার উৎসব।
প্যান্ডেল, দোকান, ফুটপাত—যেদিকেই তাকানো যায়, আলো, হাসি, ও উচ্ছ্বাসের মেলা। তবে এইবারের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে রাজস্থানি ছোঁয়ায় তৈরি “লাড্ডু প্রদীপ” ও “হাতি প্রদীপ”।
যোধপুর থেকে আসা এই বিশেষ প্রদীপগুলো দেখতে এমনই আকর্ষণীয় যে মানুষ একবার দেখলেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
কারও হাতে মোবাইল, কেউ ছবি তুলছে, কেউ আবার ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছে। দীপাবলির আগে এমন অভিনব আইডিয়ার প্রদীপ পুরুলিয়ার বাজারে এর আগে দেখা যায়নি।
স্থানীয় দোকানদারদের মুখেও হাসি—তাঁরা বলছেন, “এই নতুন ডিজাইনগুলো আমাদের বিক্রিতে নতুন প্রাণ এনে দিয়েছে।”
দীপাবলির প্রস্তুতিতে এভাবেই পুরুলিয়া এখন উৎসবমুখর, আর এই নতুন লাড্ডু প্রদীপ যেন আলোয় মিষ্টি ছোঁয়া যোগ করছে।
🍬 রাজস্থানি লাড্ডু প্রদীপে উৎসবের নতুন ছোঁয়া
দীপাবলি মানেই আলো ও মিষ্টির উৎসব। এবার সেই দুই আনন্দকে মিলিয়ে ফেলেছে এই লাড্ডু প্রদীপ।
যোধপুরের বিখ্যাত হলুদ লাড্ডুর মতো দেখতে এই প্রদীপগুলো তৈরি করা হয়েছে বিশেষ রাজস্থানি হস্তশিল্পে।
বাইরে চকচকে সোনালি রঙের প্রলেপ, মাঝখানে ছোট সলতে, আর ভিতরে হালকা তেলের ঘ্রাণ—সব মিলিয়ে একেবারে মিষ্টির মতো অনুভূতি।
কেউ দেখলে ভুল করতেই পারেন, আসল লাড্ডু নাকি প্রদীপ! শুধু তাই নয়, সঙ্গে আছে জিলিপি ও কাজু বরফির আদলে বানানো আরও কিছু ডিজাইন, যা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার নতুন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে।
দোকানগুলোয় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতার ভিড়। কেউ কিনছে ঘর সাজানোর জন্য, কেউ আবার উপহার হিসেবে বন্ধুবান্ধবকে দিতে চাইছে।
অন্যদিকে, “হাতির পিঠে বসানো প্রদীপ” একেবারে রাজকীয় ছোঁয়া এনেছে। রাজস্থানের কারিগরদের হাতে বানানো এই হস্তশিল্পে ছোট হাতির পিঠে বসানো আছে সোনালি প্রদীপ, যার প্রতিটি কোণায় নিখুঁত নকশা।
এমন সূক্ষ্ম কাজ দেখে অনেকেই বলছেন, “এ যেন প্রদীপ নয়, একখণ্ড শিল্পকর্ম।” দোকানদার নরেশ ফোগলা জানান, “মানুষ এখন অভিনব কিছু চায়, তাই এই লাড্ডু আর হাতি প্রদীপই সবচেয়ে জনপ্রিয়।”
দীপাবলির আনন্দে এই নতুনত্ব যেন সবার মনে আরও আলো ছড়াচ্ছে।
🪔 ঐতিহ্যের মাটির প্রদীপ এখনও টিকে আছে 💫
নতুনত্বের ঝলক যতই চোখে পড়ুক, পুরুলিয়ার ঐতিহ্যবাহী মাটির প্রদীপের কদর এখনও অটুট।
শহরের পোস্ট অফিস মোড়, হাটতলা, স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় এখনও দেখা যায় পুরনো মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা।
তাঁদের হাতে তৈরি মাটির প্রদীপে দীপাবলির আলাদা সৌন্দর্য। মাত্র ১০ টাকায় আটটি প্রদীপ, আর ছোটগুলো এক টাকা পিসে পাওয়া যায়—এ যেন সাধারণ মানুষের দীপাবলি সাজানোর আশীর্বাদ।
এক বিক্রেতা হাসিমুখে বললেন, “অনেকেই নতুন ডিজাইন দেখছে, কিন্তু শেষে এসে আমাদের মাটির প্রদীপই কিনছে। পুরনো ঐতিহ্যের টানটা এখনও জীবন্ত।”
পুরুলিয়ার বিখ্যাত পুতুল প্রদীপও তার জায়গা ধরে রেখেছে। ছোট মাটির পুতুল, যার হাতে জ্বলছে প্রদীপের আলো—এই চিত্র আজও বহু বাড়িতে দেখা যায়।
গ্রামের মানুষ থেকে শহুরে ক্রেতা—সবাই এখনও এই পুতুল প্রদীপে নিজেদের শিকড় খুঁজে পান।
ঐতিহ্য, মাটির গন্ধ আর ঘরের উষ্ণতা—এই তিনের মেলবন্ধনেই পুরুলিয়ার দীপাবলি এখনও আলাদা।
আধুনিকতার ঢেউ যতই আসুক, মাটির প্রদীপের আলোতেই বাঙালির উৎসব সম্পূর্ণ হয়।
🏺 পিতল-কাঁসার দোকানে জমজমাট কেনাকাটা
দীপাবলির সঙ্গে লক্ষ্মী-গণেশের পূজা যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই এই সময়ে পিতল-কাঁসার দোকানগুলোতেও ভিড় উপচে পড়ছে।
দোকানজুড়ে সাজানো রয়েছে নানা আকারের লক্ষ্মী-গণেশের যুগল মূর্তি—কেউ ছোট, কেউ আবার বিশাল।
দামও রকমভেদে ভিন্ন—কেউ কিনছেন ৬০০ টাকায়, আবার কেউ ১০,০০০ টাকায় কিনছেন শিল্পসমৃদ্ধ প্রিমিয়াম মূর্তি।
দোকান মালিক কার্তিক চন্দ্র হালদার বলেন, “লক্ষ্মী-গণেশ ছাড়া দীপাবলি অসম্পূর্ণ। দাম বাড়লেও মানুষ মূর্তি কিনতেই আসছে।”
ক্রেতাদের মুখে হাসি, হাতে ফুল, মন ভরা আলো। অনেকে আবার এই মূর্তিগুলোকে উপহার হিসেবে দিচ্ছেন প্রিয়জনকে।
কারও বাড়িতে নববধূর প্রথম দীপাবলি, কারও আবার সন্তানের নতুন দোকান—সব উপলক্ষেই এই মূর্তিগুলো হয়ে উঠছে সৌভাগ্যের প্রতীক।
দোকানের ভেতর পিতলের গন্ধ, ঘণ্টাধ্বনি, আর মানুষের কোলাহল—সব মিলিয়ে এক অপূর্ব উৎসবের আবহ। এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প আজও জীবন্ত আছে পুরুলিয়ার রাস্তায়।
🌺 কালীপুজোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা
দীপাবলির সঙ্গে সঙ্গে পুরুলিয়ায় কালীপুজোর প্রস্তুতিও পুরোদমে চলছে। মৃৎশিল্পীরা দিনরাত এক করে তৈরি করছেন দেবী প্রতিমা, পাত্র, আর ছোট ছোট উপকরণ।
শহরের উপকণ্ঠ থেকে গ্রামাঞ্চল—সব জায়গাতেই চলছে প্রস্তুতির ব্যস্ততা। তবে এই বছর শিল্পীরা পড়েছেন এক বড় সমস্যায়—বাজারে জবা ফুলের তীব্র আকাল।
পূজার সময় জবা ছাড়া কালীপুজো ভাবাই যায় না, কিন্তু ফুলের সরবরাহ কমে যাওয়ায় অনেকেই বাধ্য হয়ে নিচ্ছেন প্লাস্টিকের জবা।
দোকানদার বর্ষা দত্ত জানালেন, “দেখতে সুন্দর, টেকসইও, আর দামও কম। তাই সবাই প্লাস্টিকের জবা নিচ্ছে।”
যদিও অনেকে মনে করছেন, আসল ফুলের ঘ্রাণের বিকল্প কিছুই হতে পারে না, তবুও বাস্তব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে হচ্ছে।
শিল্পীরা বলছেন, “এই বছর বিক্রি কম হলেও উৎসাহ কম নয়। কালীমার পুজো মানেই মাটির ছোঁয়া, সেটাই আমাদের শক্তি।”
প্রতিটি ঘরে এখন চলছে রঙের ছোঁয়া, প্রতিমার চোখ আঁকার প্রস্তুতি, আর চারদিকে পুজোর আনন্দ।
🎉 আলো, রঙ, ও আনন্দে মেতে উঠেছে পুরুলিয়ার বাজার
পুরুলিয়ার প্রতিটি বাজারে এখন উৎসবের সাজ। ঝালর, বন্দরবার, আলপনা, রঙোলি, মটকা ক্যান্ডেল, রঙিন লাইট—সব মিলিয়ে এক অসাধারণ পরিবেশ।
কেউ দোকানে লাইট সাজাচ্ছে, কেউ বাড়ির উঠোনে রঙোলি আঁকছে। বাজারজুড়ে মানুষের ভিড়, হাসির শব্দ, আর বাচ্চাদের আনন্দ যেন পুরো শহরকে উজ্জ্বল করে তুলেছে।
পুরুলিয়ার বড়বাজার থেকে ছোট হাট—সবখানেই চলছে সাজসজ্জার প্রতিযোগিতা।
দোকানদাররা বলছেন, “এই বছর বিক্রি আগের বছরের চেয়ে অনেক বেশি।”
মানুষ এখন ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধন খুঁজছে—কেউ মাটির প্রদীপ কিনছেন, কেউ আবার LED লাইট বা রাজস্থানি ডিজাইনের প্রদীপ।
শহরের প্রতিটি কোণে আলোর ছটা, বাজির শব্দ আর মিষ্টির গন্ধ—সব মিলিয়ে এক উৎসবমুখর পুরুলিয়া। দীপাবলির এই আনন্দ যেন মানুষের মনে নতুন আশার আলো জ্বালাচ্ছে।
🌄 ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে দীপাবলির আলো
পুরুলিয়ার দীপাবলি এ বছর যেন এক নতুন দিক ছুঁয়েছে। একদিকে আধুনিক রাজস্থানি হস্তশিল্পের ছোঁয়ায় “লাড্ডু প্রদীপ” এনেছে অভিনবত্ব, অন্যদিকে মাটির প্রদীপে জ্বলছে ঐতিহ্যের আলো।
এই দুইয়ের মেলবন্ধনই পুরুলিয়াকে করে তুলেছে অনন্য। শহরের প্রতিটি মানুষ আজ আলোর আনন্দে মগ্ন। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবার চোখে একটাই ঝলক, উৎসবের আনন্দ।
মানুষ যেমন নতুনত্বে মুগ্ধ, তেমনই ঐতিহ্যের টানও অনুভব করছে। পুরুলিয়ার দীপাবলি তাই কেবল আলোর নয়, সম্পর্ক, আনন্দ ও সংস্কৃতির এক চিরন্তন প্রতীক।
এই দীপাবলির আলো যেমন ঘর উজ্জ্বল করছে, তেমনই মানুষের মনেও জ্বালাচ্ছে আশার প্রদীপ। 🌠