ঋষি নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্তের জন্ম সার্ধশতবর্ষ উদযাপন।

মানভূমের স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্তের জন্ম সার্ধশতবর্ষ উদযাপনে পুরুলিয়ায় বৈঠক অনুষ্ঠিত। বিস্তারিত জানুন।


rishi nibaranchandra dasgupta janma sardhashatabarsha udjapan

ঋষি নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্তের জন্ম সার্ধশতবর্ষ উদযাপন শুরু পুরুলিয়ায় 🎉

পুরুলিয়া, ৩১ আগস্ট  – 

মানভূমের গর্ব ও মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী ঋষি নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্তের জন্মের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সারা বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

এই উপলক্ষে গঠিত হয়েছে “ঋষি নিবারণচন্দ্র সার্ধশতবর্ষ উদযাপন কমিটি”, যার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় পুরুলিয়া শহরের রাধাকৃষ্ণ মোড়ের একটি সভাকক্ষে।

এই বৈঠকে নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শুধু পুরুলিয়া নয়, সমগ্র মানভূম ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ঋষির আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে নানা সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। 

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঋষির পরিবারের সদস্য, সমাজসেবী, সাংবাদিকসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। 

এই উদযাপন শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা ও আগামী প্রজন্মের জন্য এক শিক্ষণীয় বার্তা।


বৈঠকের মূল সিদ্ধান্ত ও কমিটির গঠন 🏛

বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে নতুন কমিটির নেতৃত্ব গঠিত হয়। সভাপতি নির্বাচিত হন মানভূমের বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সেনাপতি কাজল সেন। 

কার্যকরী সভাপতি দীপক মাহাতো, সম্পাদক ডক্টর প্রদীপ কুমার মণ্ডল এবং মুখপাত্র দেবরাজ মাহাতো

এছাড়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঋষি নিবারণচন্দ্রের পৌত্র প্রসাদ দাশগুপ্ত, সমাজসেবী অত্রি চৌধুরী, সৌম্যনাথ মল্লিক, বর্ষীয়ান সাংবাদিক সমীর দত্ত, অনুপ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। 

বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সার্বিকভাবে জনগণকে যুক্ত করে উদযাপনকে সফল করে তুলতে সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন।

এই কমিটি শুধুমাত্র একটি সংগঠন নয়; এটি হবে এমন একটি মঞ্চ, যেখানে মানুষ ঋষির জীবনদর্শন নিয়ে আলোচনা করবে এবং স্বাধীনতার ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবে।


ঋষি নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্তের জীবন ও সংগ্রাম 🇮🇳

ঋষি নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত ছিলেন মানভূমের গর্ব, একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক। তিনি ১৯২১ সালে পুরুলিয়া জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ ত্যাগ করে মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। 

স্বাধীনতার জন্য বহুবার কারাবরণ করেন এবং অসংখ্য কষ্ট সহ্য করেন।

১৯২৫ সালে তিনি “মুক্তি” নামের পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন, যার মাধ্যমে স্বাধীনতার বাণী সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। 

তিনি শুধু স্বাধীনতার সৈনিকই নন, ছিলেন এক সমাজসংস্কারকও। মহাত্মা গান্ধী, মতিলাল নেহেরু, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মতো সর্বভারতীয় নেতাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল।

তার আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের গল্প আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি প্রমাণ করেছিলেন—দেশসেবা সর্বাগ্রে, ব্যক্তিগত স্বার্থ পরে।


সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি 🎯

এ বছর ঋষি নিবারণচন্দ্রের জন্মের ১৫০ বছর, তাই কমিটি বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করবে। মুখপাত্র দেবরাজ মাহাতো জানিয়েছেন:

“ঋষির জীবনদর্শন সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য পুরুলিয়া, পূর্ব সিংভূম, সারাইকেরলা-খরসওয়া, রাঁচি সহ বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি নেওয়া হবে।”

যেসব কর্মসূচি থাকবে:

✔ ঋষির জীবন ও আদর্শ নিয়ে সেমিনার।
✔ নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
✔ ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা।
✔ স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ।
✔ স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে প্রদর্শনী।

এই কর্মসূচি শুধু স্মরণ নয়, বর্তমান প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার এক অসাধারণ সুযোগ।


আজকের প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় দিক 📌

ঋষি নিবারণচন্দ্রের জীবন আমাদের শেখায়—দেশপ্রেম কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, কাজের মধ্যে প্রতিফলিত হতে হবে। তিনি যে সাহস ও ত্যাগ দেখিয়েছেন, তা আজকের দিনে সমাজের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

বর্তমান সময়ে মানুষ ব্যক্তিস্বার্থে ব্যস্ত, কিন্তু ঋষির জীবন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করাই প্রকৃত সেবা। তার সংগ্রামী জীবন নতুন প্রজন্মকে দায়িত্বশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে।


শেষ কথা 🙏

ঋষি নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত শুধু একটি নাম নয়, তিনি একটি ইতিহাস, একটি প্রেরণা। তার জীবনদর্শন ও আত্মত্যাগকে স্মরণ করা আমাদের কর্তব্য। 

সার্ধশতবর্ষ উদযাপন শুধুমাত্র অনুষ্ঠান নয়, এটি আমাদের কাছে ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গীকার।

তাই আসুন, সবাই মিলে এই মহৎ উদ্যোগকে সফল করে তুলি এবং ঋষির আদর্শকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিই। স্বাধীনতার আলো, মানবতার আলো—এই দুই-ই হোক আমাদের পথের প্রদীপ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url