সাধারণ শিক্ষা রক্ষায় এবিটিএ সম্মেলন পুরুলিয়ায়।
পুরুলিয়ায় এবিটিএ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষা রক্ষা, শিক্ষক ঘাটতি পূরণ, দুর্নীতি রোধ ও স্থায়ী নিয়োগের দাবি নিয়ে আলোচনা।
📰 সাধারণ শিক্ষা রক্ষায় এবিটিএ-র ত্রিবার্ষিক সম্মেলন
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ও আড়শা অঞ্চলে এবিটিএ (All Bengal Teachers’ Association)-র একাদশ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান সংকট তুলে ধরা এবং সেই সংকট সমাধানের জন্য দাবি পেশ করা।
রঘুনাথপুরের অনিলাদেবী ভবন এবং পুরুলিয়ার সত্যপ্রিয় ভবনে দুটি পৃথক সভা হয়। এই সভায় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার মান কমে যাওয়া, শিক্ষক স্বল্পতা, দুর্নীতি এবং সরকারি শিক্ষার বেসরকারিকরণের প্রবণতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়।
এবিটিএ স্পষ্ট জানায়, সাধারণ মানুষের শিক্ষার অধিকার রক্ষায় সরকারকে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, নাহলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
🏫 উদ্বোধন ও প্রধান বক্তারা
সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবিটিএর জেলা সহ-সভাপতি প্রণব নিয়োগী (রঘুনাথপুর শাখা) এবং সহ-সভাপতি হরপ্রসাদ পাত্র (আড়শা শাখা)।
উদ্বোধনী ভাষণে তারা শিক্ষার বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে সরব হন এবং সরকারি শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্পাদক ব্যোমকেশ দাস। তিনি জানান, সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
ফলে শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত ক্লাস পাচ্ছে না, এবং শিক্ষার মান নেমে যাচ্ছে। বক্তারা শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি, অযোগ্য প্রার্থী নিয়োগ এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেন।
⚠️ শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান সংকট
পুরুলিয়া জেলার সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক স্বল্পতা চরম আকার ধারণ করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও বিদ্যালয়ে প্রতিটি পিরিয়ড চালাতে ২০ জন শিক্ষকের প্রয়োজন হয়, বর্তমানে সেখানে মাত্র ১২ জন শিক্ষক রয়েছেন।
এর মানে হচ্ছে, প্রতিদিন গড়ে আটটি করে ক্লাস ফাঁকা যাচ্ছে। শুধু শিক্ষকই নয়, শিক্ষাকর্মীর সংখ্যা কম থাকায় প্রশাসনিক কাজেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
এবিটিএর মতে, এই ঘাটতির কারণে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এবং তারা পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারছে না। এই সংকট কাটাতে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগই একমাত্র সমাধান।
❗ দুর্নীতি ও তার প্রভাব
সম্মেলনে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়টি তীব্রভাবে তুলে ধরা হয়। জেলা সম্পাদক ব্যোমকেশ দাস জানান, “যে সরকার শিক্ষক নিয়োগ করেছে, সেই সরকারই পরে স্বীকার করেছে যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে।”
দুর্নীতির কারণে অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছেন, অথচ যোগ্যরা বঞ্চিত হয়েছেন। এর ফলে যোগ্য প্রার্থীরা চাকরি হারিয়ে বেকারত্বের শিকার হচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, শিক্ষার মান মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে, কারণ অযোগ্য শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের সঠিকভাবে গাইড করতে পারছেন না।
এবিটিএর দাবি, এই দুর্নীতি বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
🧠 শিক্ষার বেসরকারিকরণের আশঙ্কা
এবিটিএ নেতারা সম্মেলনে স্পষ্ট বার্তা দেন—সরকারি শিক্ষাকে ধীরে ধীরে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর হাতে স্কুল ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার সুযোগ তুলে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে যাদের অর্থ আছে তারা ভালো শিক্ষা পাবে, আর গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবার পিছিয়ে পড়বে।
শিক্ষার অধিকার সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। এজন্য সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং বিনামূল্যে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।
এবিটিএ জানিয়েছে, তারা এই বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামবে।
✅ সম্মেলনের দাবি বিস্তারিতভাবে
এবিটিএর এই ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে শিক্ষাক্ষেত্রের সংকট মোকাবিলার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি জোরালোভাবে তোলা হয়।
প্রথমত, বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা। বর্তমানে অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম, যার ফলে প্রতিদিন অসংখ্য ক্লাস ফাঁকা যাচ্ছে।
এবিটিএর দাবি, অবিলম্বে মেধার ভিত্তিতে স্থায়ী শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করতে হবে, যাতে শিক্ষার মান উন্নত হয়।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। তারা অভিযোগ করেছেন, অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের ফলে যোগ্য প্রার্থীরা চাকরি হারাচ্ছেন। এই অন্যায় বন্ধ করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
তৃতীয়ত, শিক্ষার বেসরকারিকরণ রোধ করতে হবে। এবিটিএ নেতারা বলেন, বড় কোম্পানির হাতে শিক্ষা ব্যবস্থা তুলে দিলে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা পিছিয়ে পড়বে।
তাই সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি।
সমিতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—এই দাবিগুলো মানা না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে।
🏁 উপসংহার
সম্মেলনের শেষে এবিটিএ জানায়, শিক্ষা কোনও বিলাসিতা নয়, এটা মৌলিক অধিকার। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, “শিক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে এবং শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।”
সরকারকে এই সংকট সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। নইলে আগামী দিনে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।