পুরুলিয়ায় দুর্গাপুজো ২০২৫ গাইড ম্যাপ প্রকাশ।
পুরুলিয়া শহর ও আশেপাশের এলাকায় দুর্গাপুজোর সময়ে যান চলাচল ও নিরাপত্তার জন্য প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ কিউআর কোড গাইড ম্যাপ।
এতে শহরের কোন কোন রাস্তা ওয়ান-ওয়ে বা নো-এন্ট্রি করা হয়েছে, কোথায় ড্রপ গেট, পার্কিং ও পুলিশ বুথ রয়েছে তা সহজেই জানা যাবে।
নিতুড়িয়া, ঝালদা ও আদ্রা এলাকার পূজা গাইডও প্রকাশ করা হয়েছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশ বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে।
এই গাইডের মাধ্যমে দর্শনার্থীরা নিরাপদে ও আনন্দময়ভাবে পুজোর দিনগুলি উপভোগ করতে পারবেন।
🪔 পুরুলিয়া দুর্গা পুজো ২০২৫ গাইডম্যাপ ও নির্দেশিকা
🚩 পূজোর আনন্দের সাথে বাড়তি নিরাপত্তা
পুরুলিয়ায় দুর্গা পুজো মানেই শহরের প্রতিটি গলি আর মোড় ভরে ওঠে আলো, আনন্দ আর মানুষের ভিড়ে।
প্রতি বছরই এই উৎসবে অংশ নিতে স্থানীয় মানুষ ছাড়াও আশেপাশের জেলা থেকে প্রচুর ভক্ত ও দর্শনার্থী ভিড় করেন।
কিন্তু এই বিপুল ভিড়ের ফলে একদিকে যেমন শহর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে, অন্যদিকে যানজট আর নিরাপত্তা সমস্যাও দেখা দেয়।
সেই কারণেই এ বছর পুরুলিয়া জেলা পুলিশ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকাশ করা হয়েছে QR কোড ভিত্তিক পূজা গাইডম্যাপ, যা স্ক্যান করলেই দর্শনার্থীরা সহজে জেনে যাবেন কোন রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ, কোন রাস্তায় ওয়ানওয়ে এবং কোথায় কোথায় নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
এই গাইডম্যাপের উদ্বোধন করা হয়েছে বেলগুমা পুলিশ লাইনে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকরা।
পুলিশের দাবি, এই গাইডম্যাপের মাধ্যমে শুধু ভিড় নিয়ন্ত্রণই নয়, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
কারণ প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষ খুব দ্রুত তথ্য পেয়ে যাবেন এবং নিজেদের চলাফেরা সেই অনুযায়ী গুছিয়ে নিতে পারবেন।
সব মিলিয়ে, এবারের দুর্গা পুজোয় পুরুলিয়া শহরকে আরও নিরাপদ ও আনন্দঘন করে তোলাই প্রশাসনের মূল লক্ষ্য।
🚦 পুরুলিয়া শহরের রাস্তাঘাট ও যান চলাচলের নিয়ম
পুরুলিয়া শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণের জন্য এ বছর পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু কঠোর নিয়ম জারি করা হয়েছে।
পূজোর সময়কালে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যানবাহন প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন—পোস্ট অফিস মোড় থেকে গোশালা, পোস্ট অফিস মোড় থেকে রথতলা, পোস্ট অফিস মোড় থেকে হাটের মোড় এবং পুরুলিয়া রেলস্টেশন থেকে ভগৎ সিং মোড় পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
এমনকি পুলিশের অফিসাররাও এই রাস্তাগুলোতে গাড়ি ব্যবহার করবেন না, তাঁদের বাইক ও সাইকেল ব্যবহার করতে হবে যাতে দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়।
অন্যদিকে, তিন ও চার চাকার গাড়ির জন্য প্রবেশের একমাত্র রাস্তা নির্ধারণ করা হয়েছে পাতকুম হাউস হয়ে রাঁচি রোডের উপর দিয়ে।
দুই চাকার জন্য রাখা হয়েছে ভিন্ন নিয়ম—দুলমি থেকে ভিক্টোরিয়া স্কুল মোড় পর্যন্ত রাস্তা থাকবে একমুখী বা Single Way।
পুলিশের যুক্তি, এই নিয়মগুলো মানলে শহরের যানবাহন চলাচল অনেক সহজ হবে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে আসবে।
এছাড়া, যানবাহন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে।
থাকছে অতিরিক্ত পুলিশ বুথ ও CCTV ক্যামেরা, যাতে জরুরি পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবিলা করা যায়।
এভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে দর্শনার্থীরা নির্ভয়ে ও স্বস্তিতে দুর্গা পুজো উপভোগ করতে পারবেন।
🛡️ নিতুড়িয়া এলাকার পূজা গাইড
নিতুড়িয়া থানার অধীনে দুর্গা পুজোর সময়ে ভিড় সামলানো সবসময়েই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
কারণ এই এলাকায় রয়েছে বহু প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পূজা, যেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় করেন।
এবারও সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে পুলিশ। এখানে কয়েকটি প্রধান রাস্তায় যানবাহনের প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য, নিতুড়িয়ার অনেক রাস্তা সরু এবং সেগুলোতে একসঙ্গে গাড়ি চললে যানজট তো হবেই, সঙ্গে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বাড়বে।
তাই এখানে দর্শনার্থীদের পায়ে হেঁটে মণ্ডপে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তবে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ছাড়—৭৫ বছরের ঊর্ধ্বে মানুষরা প্রয়োজনে পুলিশের সহযোগিতা পেতে পারেন।
ছোট শিশুদের নিরাপত্তার জন্য থাকছে বিশেষ কার্ড, যেটি তাদের গলায় ঝোলানো হবে। সেই কার্ডে লেখা থাকবে নাম, ঠিকানা এবং অভিভাবকের ফোন নম্বর।
এতে যদি কোনো শিশু ভিড়ে হারিয়ে যায়, তবে দ্রুত তার বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে।
পাশাপাশি দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে পুলিশের পরামর্শ হলো—যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করবেন না, পার্কিংয়ের সময় হ্যান্ডেল লক ব্যবহার করুন, মানিব্যাগ ও মোবাইলের মতো মূল্যবান জিনিসপত্র সাবধানে রাখুন এবং প্রয়োজনে পুলিশ বুথ থেকে সাহায্য নিন।
এই ব্যবস্থাগুলো মানা হলে নিতুড়িয়া এলাকায় দুর্গা পুজো উপভোগ হবে আরও স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ।
🛡️ ঝালদা এলাকার পূজা গাইড
ঝালদা থানার অধীনে দুর্গা পুজোও সমানভাবে মানুষের আকর্ষণ কাড়ে। স্থানীয় পূজা ছাড়াও আশেপাশের গ্রাম থেকে অনেক দর্শনার্থী এখানে আসেন, ফলে ভিড় আরও বেড়ে যায়।
এই অতিরিক্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ বছর ঝালদা এলাকার জন্যও আলাদা পূজা গাইড প্রকাশ করা হয়েছে।
পুলিশের নির্দেশ অনুযায়ী, ঝালদার কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে এবং কোথাও কোথাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এর ফলে মানুষ বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে মণ্ডপে যাবেন, যা নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল হবে। ঝালদা এলাকায়ও শিশুদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রতিটি শিশুর গলায় ঝোলানো কার্ডে লেখা থাকবে নাম, ঠিকানা এবং অভিভাবকের ফোন নম্বর। এর ফলে ভিড়ে কোনো শিশু হারিয়ে গেলেও দ্রুত তাকে অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে।
দর্শনার্থীদের জন্য পুলিশের নির্দেশের মধ্যে রয়েছে—যত্রতত্র গাড়ি পার্ক না করা, নির্দিষ্ট পার্কিং স্পট ব্যবহার করা, পার্কিংয়ের সময় গাড়ির হ্যান্ডেল লক লাগানো এবং মূল্যবান জিনিস সাবধানে রাখা।
প্রয়োজনে নিকটবর্তী পুলিশ বুথ থেকে সাহায্য নেওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে। ঝালদা এলাকায় নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করতে টহলদারি দল ও CCTV নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
একইসঙ্গে দর্শনার্থীদের “সহায়” অ্যাপ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা জরুরি পরিস্থিতিতে কাজে লাগবে।
সব মিলিয়ে, ঝালদার পূজা গাইড নিশ্চিত করছে যে দর্শনার্থীরা যেন ভিড়ের মধ্যেও নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে দুর্গা পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
🚘 আদ্রা এলাকার পার্কিং নির্দেশিকা
আদ্রা অঞ্চলে দর্শনার্থীদের জন্য আলাদা পার্কিং ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে যাতে শহরে অযথা গাড়ি দাঁড় করিয়ে যানজট তৈরি না হয়।
এখানে চারচাকা গাড়ির জন্য দুটি নির্দিষ্ট পার্কিং এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে—জি.ই.এল চার্চ পার্কিং এবং সার্কাস ময়দান (জি.ই.এল চার্চের কাছাকাছি)।
দুইচাকা গাড়ির জন্যও আলাদা আলাদা দিক চিহ্নিত করা হয়েছে। উত্তরের দিকে নির্দিষ্ট পার্কিং জায়গা হলো গোশালা রেল ক্রশিং সংলগ্ন এলাকা ও সাহেব বাঁধের উত্তর পাড়।
দক্ষিণের দিকে এম.এস.এ. ময়দান, পূর্বের দিকে পুরুলিয়া রেলওয়ে স্টেশন পার্কিং এবং পশ্চিমের দিকে ভিক্টোরিয়া স্কুল গ্রাউন্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এসব পার্কিং জোনে পর্যাপ্ত আলো, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং পুলিশ বুথ থাকবে যাতে দর্শনার্থীরা গাড়ি রেখে নিশ্চিন্তে পুজো উপভোগ করতে পারেন।
এভাবে সুশৃঙ্খল পার্কিং ব্যবস্থা শহরের যান চলাচল সহজ করবে এবং দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও অনেক কমাবে।
🙏 নিরাপদ ও আনন্দময় পূজোর বার্তা
পুরুলিয়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে বার্তা হলো—“দুর্গা পুজো আনন্দের উৎসব, কিন্তু নিরাপত্তা আর শৃঙ্খলা বজায় রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়ম মানুন, শিশু ও প্রবীণদের দিকে খেয়াল রাখুন, নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি রাখুন এবং প্রয়োজনে পুলিশের সহযোগিতা নিন।”
প্রযুক্তির ব্যবহার, সুশৃঙ্খল যান নিয়ন্ত্রণ আর বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা—সব মিলিয়ে এবারের দুর্গা পুজো হবে আরও নিরাপদ, আধুনিক এবং আনন্দময়।