নিতুড়িয়ায় শহীদ স্মরণ সভায় মীনাক্ষী মুখার্জীর তীব্র আক্রমণ।

নিতুড়িয়ার শহীদ স্মরণ সভায় মীনাক্ষী মুখার্জীর তীব্র আক্রমণ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। এসএসসি কাণ্ড থেকে শহীদদের স্মরণ – পড়ুন বিস্তারিত।


neturia shahid smoron sobha minakshi mukherjee

🔴 ১. নিতুড়িয়ায় রাজনৈতিক উত্তাপ – মীনাক্ষীর উপস্থিতি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

পুরুলিয়ার ছোট্ট গ্রাম নিতুড়িয়া ৩০ আগস্ট বিকেলে লাল পতাকার সমুদ্রে ভেসে গিয়েছিল। 

মহেশনদী চেকপোস্টের কাছে যখন ৩৭তম শহীদ স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়, তখন এলাকার প্রতিটি রাস্তা জুড়ে মানুষের ঢল নামে। 

এই সভা ছিল শুধু স্মরণ নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রও। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জী। তার উপস্থিতি সভায় ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়।

গ্রামীণ রাজনীতিতে মীনাক্ষীর গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। তিনি নতুন প্রজন্মের মুখ হিসেবে পরিচিত। তার ভাষণে সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা থাকে, থাকছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার বার্তা। 

ফলে, শহীদ স্মরণ সভায় তার আগমন শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিপিআইএম-এর গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করার কৌশল

এই সভা ঘিরে এলাকায় ব্যাপক উৎসাহ ছিল। সকাল থেকেই মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। পতাকা, ব্যানার, স্লোগানে মুখরিত হয় চারপাশ। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এদিনের সভা শুধুই অতীত স্মরণ নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রস্তুতি।


🏛 ২. রাজ্য ও কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ – কী বললেন মীনাক্ষী?

মীনাক্ষীর বক্তৃতা ছিল ক্ষোভে ভরা। তিনি প্রথমেই রাজ্য সরকারের দিকে তীর ছুড়লেন। বললেন,

“একটার পর একটা রায় আসছে সুপ্রিম কোর্ট থেকে। আর রাজ্য সরকার ঠাস ঠাস করে চড় খাচ্ছে।”

এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গে মীনাক্ষী বলেন, এই ঘটনা শুধু দুর্নীতি নয়, ছাত্র-যুবদের জীবনের সঙ্গে ছলচাতুরি। 

এরপর কেন্দ্রীয় সরকারকেও রেহাই দেননি। বলেছেন, কেন্দ্র ও রাজ্যের পারস্পরিক দোষারোপের খেলায় সাধারণ মানুষ পিষ্ট হচ্ছে।

তার বক্তব্যে উঠে আসে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু –
✔ শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করা। 
✔ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। 
✔ গণতন্ত্রে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা। 

তিনি জানান, সিপিআইএম ন্যায়বিচারের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাবে। দুর্নীতি যেখানেই হোক, তা মেনে নেওয়া হবে না। তার এই স্পষ্ট অবস্থান সভায় উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি করে।


🌹 ৩. শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা – সভার মূল উদ্দেশ্য

সভা শুরুর আগে শহীদ বেদীতে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। শহীদদের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। 

লাল পতাকার নিচে, আবেগঘন স্লোগানে মুখরিত পরিবেশে উপস্থিত ছিলেন শতাধিক সিপিআইএম কর্মী। 

মঞ্চে ছিলেন সিপিআইএম নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জী, শহীদ স্মরণ সভা কমিটির সভাপতি উমারানী বাউরি, সম্পাদক মদন মণ্ডল, পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

শহীদদের নাম উচ্চারণ করে শ্রদ্ধা জানানোর সময় অনেকে চোখের জল লুকোতে পারেননি। শহীদ পরিবারগুলির উপস্থিতি সভায় আবেগ বাড়িয়ে দেয়। শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে মীনাক্ষী বলেন:

“ওরা শুধু দলীয় কর্মী ছিল না, ওরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক।”

শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত এই সভা সিপিআইএম-এর জন্য শুধু ঐতিহ্য নয়, বরং নতুন প্রজন্মকে আন্দোলনের ইতিহাস শেখানোর মাধ্যম।


৪. সকাল থেকে সন্ধ্যা – কী কী কর্মসূচি ছিল?

শহীদ স্মরণ দিবসের কর্মসূচি সকাল থেকেই শুরু হয়। দিনের প্রথমেই অনুষ্ঠিত হয় বসো আঁকো প্রতিযোগিতা। 

এলাকার ছোট ছোট শিশুদের অংশগ্রহণে এই প্রতিযোগিতা জমে ওঠে। বিভিন্ন রঙের আঁকায় ফুটে ওঠে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বার্তা।

বিকেলে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। চারদিক থেকে মানুষ সমবেত হন মহেশনদী চেকপোস্টের মাঠে। সভা মঞ্চের চারপাশে সিপিআইএম-এর লাল পতাকা উড়ছিল। 

স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পরিবেশ। শহীদদের নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে শোনা যায়,

“শহীদ তোমার স্মৃতি অমর থাকুক।”

সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলে সভা শেষ হয় মীনাক্ষীর ভাষণের মাধ্যমে। দিনভর আবেগ আর উদ্দীপনায় ভরা কর্মসূচি মানুষকে আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত করে।


📖 ৫. ১৯৮৯ সালের ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষাপট

১৯৮৯ সালের ৩০ আগস্ট ভারতের রাজনীতি কেঁপে উঠেছিল বোফর্স দুর্নীতির প্রতিবাদে। সিপিআইএম সহ বিভিন্ন বিরোধী দল ভারত বনধের ডাক দেয়। 

সেই বনধ সফল করতে গিয়ে নিতুড়িয়ার কয়েকজন কর্মী প্রাণ হারান।

সেদিন বিহার পুলিশের গুলি এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির আক্রমণে শহীদ হন –
মথুর বাউরি। 
নগেন। 
লুবোধ। 
গোবদ্ধর্ন। 

তাদের রক্তে রাঙা হয়েছিল আন্দোলনের পথ। সেই আত্মত্যাগের স্মরণেই প্রতি বছর ৩০ আগস্ট এই শহীদ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

শুধু স্মরণ নয়, এই দিন নতুন করে শপথ নেওয়ার দিন – অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শপথ।


💬 ৬. মীনাক্ষীর বক্তব্যের ৫টি মূল বার্তা

মীনাক্ষীর ভাষণ ছিল ধারালো এবং বাস্তব সমস্যার সঙ্গে সংযুক্ত। 

তার বক্তব্যের মূল পয়েন্টগুলি হলো –

দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ে আপসহীন থাকা। 
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির বিচার দাবি। 
শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা। 
গণতন্ত্রে মানুষের অধিকার সুরক্ষিত করা। 
শহীদদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন প্রজন্মকে সংগঠিত করা। 

তিনি স্পষ্ট করে জানান, “আমরা ভয় পাই না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব।” এই দৃঢ় অবস্থান সভায় উপস্থিত প্রত্যেককে উজ্জীবিত করে তোলে।


🗣 ৭. সভার আবেগঘন পরিবেশ – মানুষের প্রতিক্রিয়া

সভায় উপস্থিত মানুষের প্রতিক্রিয়া ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে বলেন, মীনাক্ষীর ভাষণ নতুন করে আন্দোলনের চেতনা জাগিয়েছে। কর্মীরা স্লোগান দেন,

“লাল সেলাম শহীদদের।”

বয়স্ক কর্মীরা স্মৃতিচারণ করেন অতীতের আন্দোলনের। তরুণরা জানান, তারা শহীদদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে লড়াই চালিয়ে যাবে।


❤️ ৮. শহীদ পরিবারের কথা – আবেগে ভরা মুহূর্ত

সভায় সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত ছিল শহীদ পরিবারের বক্তব্য। তারা বলেন,

“আমাদের ছেলেরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছিল। আমরা চাই নতুন প্রজন্মও সেই লড়াই শিখুক।”

এই বক্তব্য শুনে অনেকের চোখে জল আসে। মীনাক্ষী নিজে গিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন এবং তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।


🔍 ৯. রাজনৈতিক তাৎপর্য – আগামী নির্বাচনের ইঙ্গিত

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সভা শুধুই ঐতিহ্য নয়, বরং রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। 

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সিপিআইএম গ্রামীণ অঞ্চলে নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চাইছে। মীনাক্ষীর উপস্থিতি সেই দিকেই ইঙ্গিত দেয়।


📢 ১০. শেষ বার্তায় কী বললেন মীনাক্ষী মুখার্জী?

সভা শেষ করার আগে মীনাক্ষী বলেন,

“শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের প্রেরণা। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ব। লড়াই হবে মানুষের অধিকারের জন্য।”

তার এই দৃঢ় বার্তা কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে।


FAQ:

❓ ১. নিতুড়িয়ায় শহীদ স্মরণ সভা কেন আয়োজন করা হয়?
✅ ১৯৮৯ সালের ৩০ আগস্ট বোফর্স দুর্নীতির প্রতিবাদে ভারত বনধ সফল করতে গিয়ে কয়েকজন সিপিআইএম কর্মী শহীদ হন। তাদের স্মরণে প্রতি বছর এই সভা হয়।

❓ ২. কারা শহীদ হয়েছিলেন?
✅ মথুর বাউরি, নগেন, লুবোধ এবং গোবদ্ধর্ন শহীদ হন।

❓ ৩. এ বছরের শহীদ স্মরণ সভায় কারা উপস্থিত ছিলেন?
✅ সিপিআইএম নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জী সহ জেলা নেতৃত্ব, শহীদ স্মরণ সভা কমিটির সভাপতি উমারানী বাউরি, সম্পাদক মদন মণ্ডল, এবং অন্যান্য কর্মী।

❓ ৪. মীনাক্ষীর বক্তব্যের মূল বিষয় কী ছিল?
✅ দুর্নীতি বিরোধী লড়াই, এসএসসি কাণ্ডের বিচার, শিক্ষা ও চাকরিতে স্বচ্ছতা, শহীদদের আদর্শে অনুপ্রেরণা।

❓ ৫. রাজনৈতিকভাবে এর গুরুত্ব কী?
✅ আসন্ন নির্বাচনের আগে সিপিআইএম গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করার চেষ্টা করছে। তাই এই সভা রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।


শেষকথা:

নিতুড়িয়ার মহেশনদী চেকপোস্টে অনুষ্ঠিত এই শহীদ স্মরণ সভা আবারও প্রমাণ করল, শহীদদের আদর্শ আজও সমান প্রাসঙ্গিক। 

১৯৮৯ সালের সেই রক্তাক্ত ইতিহাস আমাদের শেখায় – অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই কখনও থেমে থাকতে পারে না। 

এ বছরের সভায় মীনাক্ষী মুখার্জীর বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং নতুন প্রজন্মকে সংগঠিত করার ডাক।

সভায় শহীদ পরিবারের আবেগ, কর্মীদের উদ্দীপনা এবং লাল পতাকার নিচে উচ্চারিত স্লোগান – সব মিলিয়ে এক অন্যরকম দৃশ্যের সাক্ষী হল পুরুলিয়া। 

আগামী দিনে এই আন্দোলন কতটা ফলপ্রসূ হয়, তা সময় বলবে। তবে একথা স্পষ্ট, সিপিআইএম নিজেদের শক্তি পুনর্গঠনে এই স্মরণ সভাকে হাতিয়ার করছে।

আপনার মতামত কী? আপনি কি মনে করেন এই ধরনের সভা আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে?

নিচে কমেন্টে জানান। লাল সেলাম শহীদদের। ✊🌹


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url