পুরুলিয়ায় শিক্ষক দিবসে চাকরি প্রস্তুতির নতুন মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন।
শিক্ষক দিবসে পুরুলিয়ার শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা। প্রান্তিক এলাকার ছাত্রছাত্রী ও চাকরি প্রার্থীদের জন্য উদ্বোধন হলো ‘প্রদীপন’ নামে এক বিশেষ মোবাইল অ্যাপ।
এই অ্যাপের মাধ্যমে বাড়িতে বসেই চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া যাবে। থাকছে লাইভ ক্লাস, রেকর্ডেড ভিডিও লেকচার, স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস এবং অনলাইন মক টেস্টের সুবিধা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্টজনেরা এবং তাঁরা উদ্যোগটির প্রশংসা করেন।
এখন আর শহরে গিয়ে কোচিংয়ের ঝক্কি নয়, স্মার্টফোনেই পাওয়া যাবে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি। অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে ডাউনলোডের জন্য এখনই উপলব্ধ।
🎓 পুরুলিয়ায় শিক্ষক দিবসে চাকরি প্রস্তুতির মোবাইল অ্যাপের সূচনা 📱
পুরুলিয়া, ৫ সেপ্টেম্বর – শিক্ষক দিবসের দিনটা এবার পুরুলিয়ার শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন ইতিহাস রচনা করল।
প্রান্তিক এলাকার ছাত্রছাত্রী ও চাকরি প্রার্থীদের জন্য অনলাইনে চাকরি প্রস্তুতির সুযোগ তৈরি হলো এক বিশেষ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে।
শিক্ষক দিবস মানেই শিক্ষার উন্নতির প্রতিশ্রুতি, আর সেই প্রতিশ্রুতিকেই বাস্তবে রূপ দিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আজকের দিনে শিক্ষার আধুনিকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রামীণ এলাকা বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করা তরুণ-তরুণীদের পক্ষে মানসম্মত গাইডলাইন বা কোচিং পাওয়া কঠিন।
অনেক সময় অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে মানসম্মত প্রস্তুতির সুযোগ থেকেও তারা বঞ্চিত হয়।
সেই বাস্তবতাকে সামনে রেখেই প্রদীপন নামের এই সংস্থা ডিজিটাল মাধ্যমের সাহায্যে সবাইকে এক সমান প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে উদ্যোগী হয়েছে।
শিক্ষক দিবসের মতো একটি ঐতিহাসিক দিনে এই মোবাইল অ্যাপের উদ্বোধন নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী ঘটনা।
শুধু চাকরি প্রস্তুতির জন্য নয়, এই অ্যাপ প্রমাণ করে দেবে যে পুরুলিয়ার শিক্ষাক্ষেত্রও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে।
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছিল পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রে, যা শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তির মেলবন্ধনের অন্যতম সেরা উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হলো আজকের দিনে।
🌟 অনুষ্ঠানের আয়োজন ও বিশেষ মুহূর্তের আবহ
পুরুলিয়া জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রে আজকের অনুষ্ঠানটি ছিল সত্যিই মনোমুগ্ধকর। শুরুতেই সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এটি ছিল শিক্ষক দিবসের আবেগঘন সূচনা। এরপর একটি ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা গান ও আবৃত্তির মাধ্যমে অতিথিদের মন জয় করে নেয়।
সাংস্কৃতিক আবহের সঙ্গে মিলিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ভরে ওঠে শিক্ষার নতুন স্বপ্নে। অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল মোবাইল অ্যাপটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন।
কেতিকা আশ্রমের স্বামী নির্বানানন্দ মহারাজ অ্যাপটির উদ্বোধন করেন এবং তিনি জানান, “শিক্ষক দিবসে এই ধরনের উদ্যোগ সত্যিই অনন্য। প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার সমান সুযোগ তৈরি হওয়া সমাজের উন্নতির পথে এক বড় পদক্ষেপ।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলার সুবল চন্দ্র দে, জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রের আধিকারিক ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, অধ্যাপক অপূর্ব সাহা এবং প্রধান শিক্ষক তাপস মাহাত সহ বহু বিশিষ্টজন।
তাঁদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানটিকে আরও মর্যাদাপূর্ণ করে তোলে। এই সমাবেশে শুধুমাত্র পুরুলিয়া নয়, আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষক-শিক্ষিকারা হাজির ছিলেন।
প্রত্যেকেই এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং জানান, প্রান্তিক এলাকার তরুণদের জন্য এটি সত্যিই এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
📱 নতুন মোবাইল অ্যাপের বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা
এই মোবাইল অ্যাপটির নাম ‘প্রদীপন’। প্রদীপন মানেই আলোর পথ দেখানো, আর নামের সঙ্গে মিলিয়েই অ্যাপটি প্রান্তিক এলাকার তরুণদের সামনে আলোর পথ খুলে দিচ্ছে।
সংস্থার উপদেষ্টা বিকাশ মাহাত জানিয়েছেন, “আমরা চেয়েছিলাম যে প্রত্যন্ত গ্রামে থাকা ছাত্রছাত্রীরাও যেন সমান সুযোগ পায়। তাই আমরা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি যেখানে তারা বাড়িতে বসেই চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারবে।”
এই অ্যাপটির মাধ্যমে যা যা সুবিধা পাওয়া যাবে:
✔ লাইভ অনলাইন ক্লাস – অভিজ্ঞ শিক্ষকদের থেকে রিয়েল টাইমে শেখার সুযোগ।
✔ রেকর্ডেড ভিডিও লেকচার – যারা ব্যস্ততার কারণে লাইভ ক্লাসে যোগ দিতে পারবেন না, তারা পরে ভিডিও দেখে শিখতে পারবেন।
✔ স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস – গুরুত্বপূর্ণ নোট, চ্যাপ্টারভিত্তিক PDF ও রেফারেন্স বুকের লিংক।
✔ অনলাইন মক টেস্ট – পরীক্ষার আগে নিজেকে যাচাই করার দারুণ সুযোগ।
✔ ডাউনলোড সুবিধা – শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় রিসোর্স নিজের মোবাইলে ডাউনলোড করে রাখতে পারবে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন? গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে ‘Pradipan’ লিখে সার্চ করতে হবে, ডাউনলোড করার পর নিবন্ধন সম্পূর্ণ করলেই পড়াশোনা শুরু।
এই অ্যাপটি এক কথায় পুরুলিয়ার তরুণদের জন্য শিক্ষার ডিজিটাল দরজা খুলে দিয়েছে।
💬 বিশিষ্টজনদের মতামত ও সামাজিক গুরুত্ব
এই উদ্যোগকে ঘিরে বিশিষ্টজনদের প্রশংসা ছিল চোখে পড়ার মতো। সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলার সুবল চন্দ্র দে বলেন, “পুরুলিয়ার মতো অঞ্চলে এমন একটি অ্যাপ চালু হওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি শুধু প্রযুক্তির ব্যবহার নয়, এটি একটি সামাজিক বিপ্লব।”
জেলা বিজ্ঞান কেন্দ্রের আধিকারিক ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় জানান, “এটি পুরুলিয়ার জন্য গর্বের মুহূর্ত। আমাদের জেলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক থেকে পিছিয়ে নেই, বরং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে।”
এই কথাগুলো প্রমাণ করে দেয় যে আজকের এই উদ্যোগ শুধু একটি অ্যাপ উদ্বোধন নয়, এটি সমাজের জন্য এক নতুন দিশা।
এর ফলে পুরুলিয়ার তরুণ-তরুণীরা আর কোচিং সেন্টারের জন্য শহরে ছুটতে হবে না। অর্থ সাশ্রয় হবে, সময় বাঁচবে এবং মানসিক চাপও কমবে।
👩🎓 সফল শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণার গল্প
এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন সেই সব শিক্ষার্থী, যারা এই সংস্থার পূর্ববর্তী কোচিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে আজ চাকরিরত। তাঁদের সাফল্যের গল্প শুনে উপস্থিত সবাই অনুপ্রাণিত হন।
ধনঞ্জয় মাহাত বলেন, “চাকরি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় আমি পুরোপুরি হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। তখন বিকাশ স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুনভাবে পড়াশোনা শুরু করি। আজ আমি শিক্ষক হিসেবে কাজ করছি।”
বিউটি অধিকারী জানান, “এই সংস্থার সাহায্য ছাড়া আমার পক্ষে চাকরি পাওয়া সম্ভব ছিল না।”
এমনকি রতন মাহাত বলেন, “অ্যাপের মাধ্যমে গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা অনেকটাই উপকৃত হবে।”
এই গল্পগুলো প্রমাণ করে দেয় যে সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে সাফল্য দূরে নয়। প্রদীপনের মতো উদ্যোগ শুধু চাকরি নয়, আত্মবিশ্বাসও জোগায়।
❤️ অনুষ্ঠানে আবেগের মুহূর্ত ও ভবিষ্যতের আশা
অনুষ্ঠানের আবহে আবেগও ছিল প্রবল। হুড়া ব্লকের শিক্ষিকা সোনালী চ্যাটার্জি চোখে জল নিয়ে বলেন, “আজকের এই উদ্যোগ দেখে আমি সত্যিই আনন্দিত। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এমন কিছু করা হয়েছে, এটা ভেবে আমি গর্বিত।”
তাঁর কণ্ঠে আবেগের ছোঁয়া স্পষ্ট ছিল। পুরুলিয়ার মতো একটি জেলায় শিক্ষার ডিজিটাল বিপ্লব শুরু হওয়া মানেই ভবিষ্যতের জন্য এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা।
আগামী দিনে এই অ্যাপের মাধ্যমে হাজারো শিক্ষার্থী উপকৃত হবে, তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে – এই আশাতেই অনুষ্ঠান শেষ হয় করতালির মাধ্যমে।