সাঁওতালডি ডহরে করম উৎসবে আদিবাসী কুড়মী সমাজের জমজমাট আয়োজন।

সাঁওতালডি তে আদিবাসী কুড়মী সমাজের উদ্যোগে পালিত হলো করম পরবের ডহরে করম। ঢোল, মাদল ও গানের তালে জমলো সাংস্কৃতিক উৎসব।


santaldi kurmi samaj dohore karm utsob

সাঁওতালডি তে আদিবাসী কুড়মী সমাজের উদ্যোগে ডহরে করম উৎসব 🎉

রবিবার, ৩১শে আগস্ট সাঁওতালডি এলাকা পরিণত হয়েছিল উৎসবের নগরীতে। 

কারণ, সেদিন আদিবাসী কুড়মী সমাজের উদ্যোগে পালিত হলো তাদের ঐতিহ্যবাহী করম পরবের অন্যতম বিশেষ অনুষ্ঠান – “ডহরে করম”। এ যেন আনন্দ, সংস্কৃতি আর ঐক্যের এক অনন্য মিলনমেলা।


🌸 করম পরবের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

করম পরব কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি কৃষিনির্ভর সমাজের জীবনধারা ও প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক। 

প্রতি বছর শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে এই উৎসব পালিত হয়। প্রকৃতিকে রক্ষা, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করা এবং সমাজে সম্প্রীতি বজায় রাখাই করম পরবের মূল উদ্দেশ্য।


📍 কোথায় অনুষ্ঠিত হলো অনুষ্ঠান?

এবারের ডহরে করমের আসর বসেছিল সাঁওতালডি থানার বিরসা চক থেকে পাহাড়িগোড়া মোড় পর্যন্ত। দুপুর ৩টা থেকে শুরু হওয়া এই মহোৎসব শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর। 

গোটা এলাকা রঙিন সাজে সেজে উঠেছিল। সর্বত্র মানুষের ভিড়, আনন্দ আর উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।


🎶 শোভাযাত্রার ঝলক – সুরে, তালে, গানে

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিরসা চকে শহীদ বিরসা মুন্ডার মূর্তিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। এরপর শুরু হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। 

হাজারো মানুষ একসাথে ঢোল, মাদল, বাঁশির সুরে গাইতে শুরু করে করম গান। 👣

শোভাযাত্রায় অংশ নেন – 

✅ শিশুরা রঙিন পোশাক পরে নেচেছে।
✅ যুবকরা মাদল বাজিয়েছে।
✅ মহিলারা ঐতিহ্যবাহী সাজে অংশ নিয়েছে।

প্রতিটি পদক্ষেপে ফুটে উঠেছে আদিবাসী সমাজের সংস্কৃতি, কৃষি নির্ভর জীবনধারা এবং ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি


🌾 সংস্কৃতির ঝলক – লোকসংগীত থেকে পোশাক

এই অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়েছে –

  • লোকসংগীত ও নৃত্য

  • প্রাচীন কৃষি সংস্কৃতি

  • ঐতিহ্যবাহী পোশাক-আশাক

  • করম গান

এ যেন শুধু এক উৎসব নয়, বরং আদিবাসী সমাজের অস্তিত্বকে জাগিয়ে তোলার এক মহান প্রচেষ্টা।


🗣 উপস্থিত অতিথিদের বক্তব্য

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী কুড়মী সমাজের মূখ্য উপদেষ্টা অজিত প্রসাদ মাহাতো সহ বহু বিশিষ্টজন। অজিত বাবু বলেন –

“করম উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, এটি সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক। আধুনিকতার চাপে প্রাচীন সংস্কৃতি যেন হারিয়ে না যায়, সেই বার্তাই আমরা পৌঁছে দিতে চাই।”

তাঁর এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে এই উৎসব আদিবাসী সংস্কৃতির পুনর্জাগরণে কতটা গুরুত্বপূর্ণ


🤝 সম্প্রীতির বার্তা – সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ একসাথে

ডহরে করম উৎসবে কেবল আদিবাসী সমাজ নয়, বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রিত হয়েছিলেন।

  • পাড়া ও রঘুনাথপুর ব্লক কমিটির পক্ষ থেকেও ব্যাপক সহযোগিতা করা হয়।

  • এটি পরিণত হয়েছিল এক বর্ণাঢ্য মিলনমেলায়


🎊 উৎসবের শেষ মুহূর্ত – আনন্দে ভরা সমাপ্তি

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই করম গানের তালে শুরু হয় শেষ পর্বের অনুষ্ঠান। নাচে-গানে মেতে ওঠেন সবাই। হাসি-আনন্দে ভরে ওঠে চারপাশ। অবশেষে, ডহরে করম ২০২৫ এর পর্দা নামে এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি রেখে


ডহরে করমের মূল আকর্ষণ এক নজরে

  • ✔️ বিরসা মুন্ডার মূর্তিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

  • ✔️ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।

  • ✔️ করম গান ও নৃত্য।

  • ✔️ ঐতিহ্যবাহী পোশাক।

  • ✔️ সংস্কৃতির উজ্জ্বল প্রদর্শন।


শেষ কথা

করম পরব শুধুমাত্র একটি উৎসব নয়, এটি প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন এবং সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক। 

আধুনিকতার চাপে যখন আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা, তখন এমন উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয় নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষার গুরুত্ব

সাঁওতালডি তে আয়োজিত ডহরে করম শুধু আনন্দের উৎসব নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক জাগরণের ডাক। 

হাজার মানুষের অংশগ্রহণ, ঢোল-মাদলের তালে নাচ-গান—সব মিলিয়ে এই অনুষ্ঠান প্রমাণ করেছে, সংস্কৃতি কখনো হারায় না, যদি আমরা একসাথে তাকে আঁকড়ে ধরি

আমরা আশা করি এই ঐতিহ্যবাহী করম পরব আগামী প্রজন্মের কাছেও সমানভাবে জনপ্রিয় থাকবে এবং আদিবাসী সমাজের এই ঐতিহ্য বিশ্বের দরবারে গৌরবের সাথে স্থান করে নেবে। 🌸


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url