বেহাল রাস্তার দাবিতে কুমারডি গ্রামে পথ অবরোধ।

📰 🚧পুরুলিয়ার কুমারডি গ্রামে দীর্ঘদিনের বেহাল রাস্তা মেরামতের দাবিতে গ্রামবাসীর পথ অবরোধ। প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার। জানুন পুরো ঘটনা ও মানুষের বক্তব্য।


kumardi poth oborodh

🗓️ তারিখ: ৮ আগস্ট। 
📍 স্থান: কুমারডি, মানবাজার-১ ব্লক, পুরুলিয়া। 


🌟কুমারডি গ্রামে বেহাল রাস্তার দাবিতে পথ অবরোধ

পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম কুমারডি—যেখানে প্রতিদিন মানুষ নিত্যযাত্রার জন্য একমাত্র ভরসা সেই গ্রামীণ রাস্তা। 

কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে রাস্তার অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বৃষ্টি হলেই সেটি পরিণত হয় কাদা-পানির সাগরে। 

গর্তে ভরা রাস্তায় পা ফেললেই পিছলে পড়ার ভয়, সাইকেল বা মোটরসাইকেল চালানো আরও বিপজ্জনক। 

আজ অবশেষে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে, গ্রামবাসীরা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে, বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে এলেন ‘পথ অবরোধে’। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলন প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে।


📌 অবরোধের মূল কারণ

গ্রামবাসীর অভিযোগ, রাধামাধবপুর মোড় থেকে কুমারডি পর্যন্ত প্রায় ৩ কিমি রাস্তা গত পাঁচ বছর ধরে একবারও সংস্কার হয়নি।

  • বর্ষায় গর্তে জল জমে বড় বড় পুকুর তৈরি হয়। 

  • পিচ উঠে যাওয়ায় ধুলো ও কাদা—দুটোই সমস্যা। 

  • দুর্ঘটনার ঝুঁকি মারাত্মক বেড়েছে। 

  • জরুরি রোগীকে হাসপাতালে নিতে সময় বেশি লাগে। 

  • স্কুলপড়ুয়া বাচ্চারা প্রতিদিনই বিপদের মুখে। 

একজন কৃষক জানান —

"ধান কাটা বা বীজ রোপণের মৌসুমে গাড়ি এই রাস্তা দিয়ে যেতে পারে না। ফলে আমরা ফসল আনা-নেওয়ায় ভীষণ সমস্যায় পড়ি।"


💬 গ্রামবাসীর অভিজ্ঞতা ও আবেগ

  • ফুলচাঁদ মাহাতো (স্থানীয় বাসিন্দা):

    "প্রশাসনকে বহুবার জানিয়েছি। ব্লক অফিসে গিয়েছি, ফোন করেছি—কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। আজ রাস্তায় নেমে দাবির কথা জোরে বলতে হল।"

  • শান্তি দেবী (গ্রামের প্রবীণ মহিলা):

    "স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন কাদা, জল আর গর্তের ভেতর দিয়ে হাঁটে। অনেকবার পিছলে পড়েছে। তাই আজ আমরা সবাই রাস্তায় নেমেছি, বৃষ্টি হলেও।"

  • অঞ্জলি কুমারী (গৃহবধূ):

    "প্রসব বেদনা ওঠা এক মহিলাকে একবার বাঁশের খাটিয়ায় বেঁধে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল, কারণ গাড়ি ঢুকতে পারেনি।"


🌧️ আন্দোলনের চিত্র

  • মানুষ মাথায় গামছা বা ছাতা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। 

  • কেউ হাতে হাতে প্ল্যাকার্ডে লিখেছে — "আমাদের রাস্তা চাই, এখনই চাই"। 

  • শিশুদের হাতে ছোট পোস্টার। 

  • মহিলারা শাড়ি ভিজিয়েই প্রতিবাদে বসে আছেন। 

  • বৃষ্টির মধ্যে স্লোগান ধ্বনিতে মুখর গোটা এলাকা। 

এই দৃশ্যটি শুধু একটি রাস্তার দাবি নয়, বরং গ্রামীণ ঐক্যের প্রতীক। ✊🌧️


🚔 প্রশাসনের হস্তক্ষেপ

অবরোধের খবর পেয়ে মানবাজার থানার পুলিশ প্রথমে আসে। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছান মানবাজার-১ ব্লকের বিডিও দেবাশীষ ধর এবং জয়েন্ট বিডিও ধনঞ্জয় কুমার। 

প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামবাসীকে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ আশ্বাস দেওয়া হয় —

  1. অস্থায়ী মেরামতির কাজ দ্রুত শুরু হবে। 

  2. বরাদ্দ পাওয়া মাত্র পূর্ণাঙ্গ রাস্তা সংস্কার হবে। 

⌛ এই প্রতিশ্রুতির পর সকাল ১১টার দিকে অবরোধ তুলে নেন গ্রামবাসীরা।


📊 পুরুলিয়ায় রাস্তা উন্নয়নের পরিসংখ্যান (গত ৫ বছরে)

বছর মেরামত হওয়া রাস্তা (সংখ্যা) নতুন রাস্তা নির্মাণ (কিমি) বাজেট বরাদ্দ (কোটি টাকা)
২০২০ ১৮ ১২ ৫.৪
২০২১ ১৫ ১০ ৪.৮
২০২২ ২২ ১৪ ৬.১
২০২৩ ১৯ ১৬ ৫.৯
২০২৫ চলমান চলমান প্রক্রিয়াধীন

📷 দৃশ্যপটের বর্ণনা

যদি কেউ আজ কুমারডি গ্রামে উপস্থিত থাকত, তাহলে তার চোখে ধরা পড়ত —

  • বৃষ্টিভেজা কাঁচা রাস্তার মাঝে বসে থাকা মানুষ। 

  • পাশে দাঁড়ানো পুলিশ ও প্রশাসনিক গাড়ি।🚓

  • ছেলেমেয়েরা স্লোগান তুলছে। 

  • পিছনে কাঁচা ঘরবাড়ি আর সবুজ গাছপালা। 

  • রাস্তায় জল জমে বড় বড় গর্ত। 


উপসংহার

কুমারডি গ্রামবাসীর আজকের আন্দোলন প্রমাণ করল — গ্রামীণ মানুষও নিজের অধিকারের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে জানে

এখন মূল প্রশ্ন, প্রশাসনের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কত তাড়াতাড়ি বাস্তবে রূপ পাবে। 

গ্রামবাসীর আশা—আগামী বর্ষার আগেই তারা মসৃণ, নিরাপদ রাস্তায় হাঁটতে পারবেন। 🚜


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url