পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্নদের কর্মবিরতি।
পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এমএলএ-র বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে বসেছেন।
তারা দাবি করছেন হাসপাতালের সমস্ত চিকিৎসা বিভাগ শহরের ক্যাম্পাস থেকে হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হোক এবং নিরাপত্তা ও পরিকাঠামো উন্নত করা হোক।
দুই ক্যাম্পাসের মধ্যে দৈনিক যাতায়াত, নিরাপত্তার অভাব ও অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো তাদের পড়াশোনা ও রোগী পরিষেবা উভয়েই ব্যাহত করছে।
কলেজ প্রশাসন ইতিমধ্যেই বিষয়টি উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে এবং দ্রুত সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই আন্দোলন শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য নয়, ভবিষ্যতের চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
বিস্তারিত জানতে পড়ুন, কেন ইন্টার্নরা হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থগিত করে আন্দোলনে নামল এবং প্রশাসন কি পদক্ষেপ নিচ্ছে।
পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্নদের কর্মবিরতি, এমএলএ-র বিরুদ্ধে অভিযোগ
পুরুলিয়া শহরের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের দুটি ক্যাম্পাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা চলছিল।
শহরের এমএলএ-র বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে বসেছেন।
এই আন্দোলন শুধুই প্রশাসনিক সমস্যার কারণে নয়, বরং এটি একটি সামাজিক ও শিক্ষাগত ইস্যু।
হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা সোমবার বিকেল থেকে ব্যাহত হয়েছে, ফলে রোগীরা কষ্টে পড়েছেন।
ইন্টার্নরা বলছেন, শুধুমাত্র হাতে-কলমে চিকিৎসা শেখার জন্য নয়, নিরাপদ ও উন্নত পরিকাঠামোর জন্যও তাদের দাবি ন্যায়সঙ্গত।
শহরের ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, এবং পরিকাঠামোর অভাব দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা তৈরি করেছে।
হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে সমস্ত বিভাগ একত্রিত হলে শিক্ষক, ইন্টার্ন ও রোগী সকলের জন্য সুবিধা হবে।
এই আন্দোলনের মাধ্যমে ইন্টার্নরা প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের কাছে তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরতে চাইছে।
দুই ক্যাম্পাসের সমস্যার চিত্র 🏥
পুরুলিয়া গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের দুটি ক্যাম্পাসের মধ্যে যাতায়াত ইন্টার্নদের জন্য এক দীর্ঘ ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া।
শহরের ক্যাম্পাসে রোগীর সংখ্যা বেশি এবং পরিকাঠামো অনেকাংশে পুরানো, যেখানে চিকিৎসকরা দৈনিকভাবে নানা সমস্যার মুখোমুখি হন।
হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে নতুন সংযোগ এবং উন্নয়ন কাজ চলছে, কিন্তু সেখানে এখনও সেবা কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
প্রতিদিন ইন্টার্নদের দুই ক্যাম্পাসের মধ্যে যাতায়াত করতে হয়, যার ফলে পড়াশোনা ও চিকিৎসা পরিষেবা উভয়ই প্রভাবিত হচ্ছে।
বিশেষ করে রাতের যাতায়াতের সময় নিরাপত্তার অভাব বড় সমস্যা। অনেক সময়ই ইন্টার্নরা নিরাপত্তাহীন পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যার কারণে ক্ষোভ জমে উঠেছে, যা শেষ পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে রূপ নিয়েছে।
এই দুই ক্যাম্পাসের ভিন্ন অবকাঠামো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার পার্থক্য হাসপাতালের সাধারণ কার্যক্রমকে জটিল করে তুলেছে এবং প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে।
ইন্টার্নদের মূল দাবি ✊
ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কয়েকটি প্রধান দাবির মাধ্যমে আন্দোলন চালাচ্ছেন।
তাদের মূল দাবি হল হাসপাতালের সমস্ত চিকিৎসা বিভাগ হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে একত্রিত করা হোক, যাতে পড়াশোনা এবং রোগীর সেবা সহজ হয়।
তারা আরও বলছেন, হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে পরিকাঠামো উন্নয়ন করা জরুরি, যাতে ছাত্র-ছাত্রী ও রোগী সকলেই সুবিধা পায়।
এছাড়া রাতের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত করা হোক, যাতে যাতায়াতের সময় কোন দুর্ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।
ইন্টার্ন তুহিন চক্রবর্তী উল্লেখ করেছেন, “আমাদের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ঘটেছিল। পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছিল, কিন্তু এটি প্রতিরোধ করা যেত। শহরের ক্যাম্পাস নোংরা এবং অনিরাপদ। হাতোয়াড়া ক্যাম্পাস উন্নয়নের জন্য তৈরি, তাই সমস্ত বিভাগ সেখানে স্থানান্তর করা হোক।”
একই সঙ্গে ইন্টার্ন দেবাঙ্গনা কোলে সরকার বলেন, “দুটি ক্যাম্পাসে প্রতিদিন যাতায়াত করতে গিয়ে আমাদের পড়াশোনা এবং পরিষেবা উভয়ই ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের দাবি, সব বিভাগ হাতোয়াড়াতেই একত্রিত হোক।”
এই দাবিগুলি শুধুমাত্র ছাত্রদের সুবিধার জন্য নয়, বরং হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও সুষ্ঠু করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যক্ষ ও কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া 📝
কলেজের অধ্যক্ষ সব্যসাচী দাস বলেন, “ইন্টার্নদের দাবিগুলি যথার্থ। বিষয়টি ইতিমধ্যেই উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সমস্ত বিভাগ একত্রে হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে আনা একটি জটিল প্রক্রিয়া, কিন্তু দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা করছি।”
অধ্যক্ষ আরও জানান যে, আপাতত কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশা করা যাচ্ছে যে, দ্রুত ব্যবস্থা নিলে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে।
উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মনিটর করছে এবং নিরাপত্তা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এই পদক্ষেপ ইন্টার্নদের মনোভাবকে প্রভাবিত করবে এবং আগামী দিনে রোগী সেবা আরও উন্নত হবে।
কর্মবিরতির প্রভাব ⚠️
এই কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। রোগীরা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেতে দেরি করছেন, এবং প্রতিদিনের কার্যক্রম স্থগিত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি হাসপাতালের প্রশাসনের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
ইন্টার্নদের আন্দোলন শুধুমাত্র দাবির জন্য নয়, বরং এটি প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত করছে।
দীর্ঘ সময় ধরে এই সমস্যার সমাধান না হওয়া রোগী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইন্টার্নদের সংগ্রাম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা 💪
ইন্টার্নরা দৃঢ়ভাবে তাদের দাবিতে অনড়। তারা বলছেন, কর্মবিরতির মাধ্যমে প্রশাসনকে ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা হবে।
সমস্ত বিভাগের হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে স্থানান্তর সম্পন্ন হলে ইন্টার্নরা আবার তাদের কাজ শুরু করবেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না মজবুত হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
ইন্টার্নদের বক্তব্য অনুযায়ী, “আমরা শুধু চিকিৎসা করি না, আমাদের সুরক্ষা ও শিক্ষা নিরাপদ পরিবেশে পাওয়ার অধিকারও আছে। আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের দাবি তুলে ধরছি।”
এই আন্দোলন শুধু ইন্টার্নদের জন্য নয়, ভবিষ্যতের চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।
সমাধানের সম্ভাবনা ও প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি 🔹
অধ্যক্ষ ইতিমধ্যেই বিষয়টি উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। সমস্ত বিভাগের স্থানান্তরের প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করা হচ্ছে, এবং নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোর উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত সমাধান হলে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে।
তবে ইন্টার্নদের আন্দোলন শহরের এমএলএ এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যা ভবিষ্যতে চিকিৎসা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
