পুরুলিয়ার বলরামপুরের নাটুয়া নৃত্য জাপানের আন্তর্জাতিক মঞ্চে।
পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লকের চারজন নাটুয়া শিল্পী এবার জাপানের আন্তর্জাতিক মঞ্চ মাতাবেন।
তারা শুধু নিজেদের পরিবার নয়, বরং সমগ্র বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্যকে বিশ্বজুড়ে পরিচিত করবেন।
গ্রামীণ সমস্যার মধ্যেও কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য্য এবং প্রতিভার মাধ্যমে এই চার শিল্পী আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি উৎসবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
টোকিও শহরের দুর্গাপুজোর মণ্ডপে তারা নাটুয়া নৃত্য পরিবেশন করবেন, যেখানে দর্শকরা বাংলার নাচ, গান ও নাট্য ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হবেন।
এই যাত্রা পুরুলিয়ার লোকসংস্কৃতির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং বাংলার গৌরবের প্রতীক। 🌏💃
দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ, পুজোয় জাপান মাতাবে বলরামপুরের নাটুয়া
পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লকের চারজন নাটুয়া শিল্পী এবার তাদের গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরবেন।
এই চারজন শিল্পী কেবল নিজেদের পরিবারের নয়, বরং সমগ্র বাংলার লোকসংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছেন।
বলরামপুর, পাড়দ্দা, বেলা এবং জবলা গ্রামের এই শিল্পীরা ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবে নাটুয়া নৃত্য অনুশীলন করে আসছেন।
তাঁদের কঠোর পরিশ্রম, সংগ্রাম এবং আত্মনিয়ন্ত্রণই তাদেরকে এই আন্তর্জাতিক সুযোগ এনে দিয়েছে।
গ্রাম্য পরিবেশ, সীমিত অনুশীলনের স্থান এবং পরিবারের সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও এই শিল্পীরা থেমে থাকেননি। বরং এই সীমাবদ্ধতাগুলো তাদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।
এবার তারা জাপানের আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি উৎসবে অংশগ্রহণ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দর্শকের কাছে পুরুলিয়ার লোকনৃত্যের নতুন পরিচয় উপস্থাপন করবেন।
তাদের পদচারণা, অভিব্যক্তি এবং নাচের সৌন্দর্য কেবল একটি পারফরম্যান্স নয়, বরং এটি বাংলার প্রাণময় ঐতিহ্যের একটি প্রদর্শন।
বলরামপুরের চার নাটুয়া শিল্পী
বলরামপুর ব্লকের চারজন শিল্পী হলেন জগন্নাথ কালিন্দী, নৃপেন কালিন্দী, শিকার মাহাতো এবং বৈদ্যনাথ মাহাতো।
জগন্নাথ ও নৃপেন পাড়দ্দা গ্রামের বাসিন্দা, শিকার মাহাতো বেলা গ্রামের এবং বৈদ্যনাথ মাহাতো জবলা গ্রামের। এই চারজন শিল্পী ছোটবেলা থেকেই নাটুয়া নৃত্য শেখার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
জগন্নাথ কালিন্দী বলেন, “ছৌ নাচ নিয়ে আগেও বিদেশে গিয়েছি, তবে নাটুয়া নিয়ে এবারই প্রথম বিদেশ যাচ্ছি। এটি আমাদের পরিবারের গর্ব এবং ঐতিহ্য। আমার দাদা প্রয়াত হাঁড়িরাম কালিন্দী নাটুয়া শিল্পী ছিলেন এবং ছোটবেলা থেকেই তাদের দেখেই বড় হয়েছি।”
তাঁদের প্রতিটি ধাপেই পরিবার, গ্রামের মানুষ এবং সমাজের সমর্থন ছিল। সেই সমর্থন এবং নিজের প্রচেষ্টা মিলিয়ে আজ তারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছেছেন।
এই চার শিল্পীর গল্প আমাদের শেখায়, সীমিত সম্পদ থাকলেও প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রম থাকলে বিশ্বমঞ্চে জায়গা করে নেওয়া সম্ভব।
নাটুয়া নৃত্য: পুরুলিয়ার প্রাণবন্ত ঐতিহ্য
নাটুয়া নৃত্য পুরুলিয়ার অন্যতম পরিচিত লোকনৃত্য। এটি কেবল নাচ নয়, বরং এতে নাটকের উপাদানও থাকে।
মূলত দলগতভাবে এটি পরিবেশিত হয়, যেখানে নৃত্য, গান ও নাট্যরূপ একত্রিত হয়ে বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় কাহিনী ও রামায়ণ-মহাভারতের গল্পের প্রতিফলন ঘটায়।
নাটুয়া নৃত্যের মাধ্যমে গ্রামীণ জীবন, ধর্মীয় উৎসব এবং সামাজিক মূল্যবোধ দর্শকের কাছে পৌঁছায়।
শিল্পীরা গল্পের মাধ্যমে শুধু বিনোদন দেয় না, বরং গ্রামের ইতিহাস, বিশ্বাস এবং সামাজিক বাস্তবতাকেও তুলে ধরে।
এই নৃত্য কেবল স্থানীয় লোকসংস্কৃতির অংশ নয়, এটি গ্রামের মানুষদের জীবনের প্রতিফলন। প্রতিটি পদক্ষেপ, হাবভাব, এবং সংগীতের সুর দর্শককে ঐতিহ্যের ভেতর নিয়ে যায়।
নাটুয়া নৃত্য বিশ্বমঞ্চে প্রদর্শনের মাধ্যমে এই সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরা সম্ভব। 🎭💫
আন্তর্জাতিক যাত্রা এবং উৎসব
বলরামপুরের এই চার শিল্পীর আন্তর্জাতিক যাত্রা শুরু হয় গ্রামীণ রাস্তা পেরিয়ে। প্রথমে তারা বাসে কলকাতা পৌঁছে, সেখান থেকে দিল্লি, এবং অবশেষে বিমানযোগে জাপান পাড়ি দেন।
২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলা আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি উৎসবে তারা অংশগ্রহণ করবেন।
ভারত সরকারের লোক সংস্কৃতি বিভাগ এই অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট ২৫ জন শিল্পীকে বেছে নিয়েছে, এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত এই চারজন শিল্পীই হলেন বলরামপুরের গর্ব।
এই যাত্রা শুধু পারফরম্যান্স নয়, বরং এটি প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রমের ফল। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে তারা বাংলার লোকনৃত্যকে বিশ্বজনের কাছে পরিচিত করবেন। 🌏🕺
বিদেশেও বাংলার দুর্গাপুজো
এই সফরের একটি অনন্য দিক হলো জাপানের টোকিও শহরের দুর্গাপুজোর মণ্ডপে প্রদর্শনী। এখানে চার শিল্পী দুর্গাপুজোর সঙ্গে নাটুয়া নৃত্য মেলান।
এটি শুধুমাত্র নৃত্য প্রদর্শনী নয়, বরং বাংলার ধর্মীয় ও সামাজিক ঐতিহ্যকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরার সুযোগ।
দর্শকরা বাংলাদেশের, জাপানসহ অন্যান্য দেশের মানুষের সঙ্গে বাংলার উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেবেন।
শিকার মাহাতো বলেন, “গ্রামে নানা সমস্যা, অভাব থাকা সত্ত্বেও আমরা থেমে থাকিনি। আজ আন্তর্জাতিক মঞ্চে নাচ প্রদর্শন করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।” ❤️
এই ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে, গ্রামীণ শিল্প ও সংস্কৃতি সঠিক প্রচেষ্টা এবং সমর্থনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেতে পারে।
সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়া শিল্পী জীবন
বলরামপুরের চারজন শিল্পীর জীবনের গল্প সত্যিই অনুপ্রেরণামূলক।
তারা সাধারণ পরিবারের সন্তান, যারা ছোটবেলা থেকেই সীমিত সম্পদ, পর্যাপ্ত অনুশীলনের স্থান এবং মঞ্চে সুযোগের অভাব সত্ত্বেও নিজের প্রতিভা বিকাশ করেছেন।
তারা দেখিয়েছেন যে, কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য্য এবং ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসা থাকলে কোনো সীমা বা বাধা তাদের উন্নতি আটকাতে পারে না।
জগন্নাথ কালিন্দী, নৃপেন কালিন্দী, শিকার মাহাতো এবং বৈদ্যনাথ মাহাতো—চারজনই প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে অনুশীলন করে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করেছেন।
তাঁদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, ধৈর্য্য এবং আত্মবিশ্বাসই তাদের আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। 🌟
নাটুয়া নৃত্যের বৈশিষ্ট্য
নাটুয়া নৃত্যকে অন্য সকল লোকনৃত্য থেকে আলাদা করে যে বৈশিষ্ট্যগুলো তা হলো:
-
গান ও সঙ্গীত: নাট্যনৃত্যের প্রাণ।
-
দলগত নৃত্য: একাধিক শিল্পীর মিলিত পরিবেশনা।
-
গল্পকথা: রামায়ণ, মহাভারত ও স্থানীয় গল্পের প্রতিফলন।
-
সামাজিক বার্তা: নৃত্য ও নাট্যরূপের মাধ্যমে সচেতনতা।
-
লোকসংস্কৃতি: গ্রাম্য ঐতিহ্য এবং উৎসবের জীবন্ত পরিচয়।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো নাটুয়া নৃত্যকে আন্তর্জাতিক মঞ্চের জন্য প্রাপ্য করে। দর্শকরা শুধু নৃত্য উপভোগ করবেন না, বরং বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের সাথে পরিচিত হবেন। 🎶🎭
আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলার গৌরব
টোকিওর আন্তর্জাতিক মঞ্চে বলরামপুরের চারজন শিল্পীর উপস্থিতি কেবল তাদের পরিবার ও গ্রামের জন্য নয়, সমগ্র বাংলার জন্য গর্বের।
তারা দর্শকের কাছে বাংলার লোকসংস্কৃতি তুলে ধরবেন এবং পুরুলিয়ার নৃত্যকে নতুন পরিচয় দান করবেন। এই অভিজ্ঞতা তাদের ব্যক্তিগত উন্নতির পাশাপাশি বাংলার ঐতিহ্যকে বিশ্বে পরিচিত করাবে। 🌍💪
উপসংহার
পুরুলিয়ার বলরামপুর ব্লকের চারজন নাটুয়া শিল্পী এবার দেশ ছাড়িয়ে জাপান মাতাবেন।
তাদের প্রতিভা, সংগ্রাম এবং নৃত্যশিল্পের প্রতি অনুরাগ কেবল তাদের পরিবারের নয়, সমগ্র বাংলার জন্য গর্বের বিষয়।
এই যাত্রা প্রমাণ করে যে, সঠিক প্রচেষ্টা, ধৈর্য্য এবং ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসা থাকলে, স্থানীয় সংস্কৃতিকেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরা সম্ভব।
বাংলার নাচ, গীত ও নাট্য ঐতিহ্য এবার বিশ্বের দর্শকের কাছে পৌঁছাবে বলরামপুরের চারজন কৃতীশিল্পীর হাত ধরে। 🎉🇮🇳