পুরুলিয়ায় এসএসসি নিয়োগ পরীক্ষায় বিহার দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের পরীক্ষার্থীদের ভিড়।

পুরুলিয়ায় অনুষ্ঠিত এসএসসি নিয়োগ পরীক্ষায় শুধু বাংলার নয়, বিহার, দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ থেকে শতাধিক পরীক্ষার্থী অংশ নিলেন। 

রবিবার জেলার ২৭টি পরীক্ষাকেন্দ্রে মোট ১২,৩১৬ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেন নির্বিঘ্নে। ভিনরাজ্যের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বাংলার মানুষের আন্তরিকতা এবং সহযোগিতা তাদের মুগ্ধ করেছে। 

পুঞ্চা, জয়পুর, ঝালদা সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের শিক্ষার্থীরা জানান, কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে তারা এতদূর এসেছেন। 

ভাষাগত বাধা থাকলেও তারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছেন। প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কোনও অসুবিধা হয়নি। পরীক্ষা শেষে সবাই খুশি।


ssc nioyog pariksha purulia


📌 বাংলার পরীক্ষার কেন্দ্রে ভিনরাজ্যের শিক্ষার্থীদের আগমন

পুরুলিয়া, ৭ সেপ্টেম্বর — এ বছরের এসএসসি নিয়োগ পরীক্ষা শুধু বাংলার শিক্ষার্থীদের নয়, ভিনরাজ্যের শিক্ষার্থীদের জন্যও একটি বিশেষ সুযোগ হয়ে উঠেছে। 

শিক্ষক নিয়োগের স্বপ্ন পূরণের আশায় বহু শিক্ষার্থী এসেছেন বিহার, দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে। 

রবিবার অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় পুরুলিয়া জেলার ২৭টি কেন্দ্রে মোট ১২,৩১৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। 

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যা এসেছে অন্য রাজ্য থেকে। উত্তরপ্রদেশ থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী এসেছে, এমনকি দিল্লি ও বিহার থেকেও বহু পরীক্ষার্থী একদিন আগে পুরুলিয়া পৌঁছেছেন শুধুমাত্র এই পরীক্ষায় অংশ নিতে।

এই আগমনের পেছনে মূল কারণ হলো কর্মসংস্থানের অভাব। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে সরকারি চাকরির সুযোগ তুলনামূলকভাবে সীমিত। 

ফলে শিক্ষক নিয়োগের মতো সুযোগ পেতে তারা দূরদূরান্ত ভ্রমণ করতে বাধ্য হয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ভাষাগত বাধা থাকা সত্ত্বেও তারা বাংলায় পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত হয়েছেন। 

অনেকেই জানিয়েছেন, বাংলায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাওয়া তাদের জন্য নতুন দিক উন্মোচন করেছে। 

শহরের স্কুল ছাড়াও জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কেন্দ্রগুলোতেও তাদের পরীক্ষা ছিল। এই পুরো প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে এবং নিরাপত্তা ছিল কড়া। 

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা কোনও সমস্যার সম্মুখীন হননি, বরং বাংলার মানুষের সহায়তা ও আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছেন।


📌 পরীক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা এবং বাংলার আতিথেয়তা

যখন একজন শিক্ষার্থী নতুন রাজ্যে গিয়ে পরীক্ষা দেন, তখন তার মনে নানা শঙ্কা কাজ করে। 

কিন্তু পুরুলিয়ার পরীক্ষাকেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ভিনরাজ্যের শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। 

উত্তরপ্রদেশের গাজীপুরের প্রবীণ কুমার জানান, “আমরা এখানে এসে একেবারেই কোনও অসুবিধার মুখোমুখি হইনি। বাংলার মানুষ আমাদের আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছে। খাবার থেকে শুরু করে থাকার জায়গা পর্যন্ত সবকিছুতে সহযোগিতা পেয়েছি।”

ভূগোলের পরীক্ষা দিতে আসা জ্যোতি চোরাশিয়াও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “আমরা উত্তরপ্রদেশ থেকে এতদূর ভ্রমণ করে এসেছি। ভেবেছিলাম হয়তো সমস্যায় পড়ব, কিন্তু এখানে এসে দেখলাম বাংলার মানুষ অত্যন্ত আন্তরিক। ভিনরাজ্যে এসে এমন সহযোগিতা পাওয়া সত্যিই বিরল।”

শিক্ষার্থীরা বাংলার মানুষের আন্তরিকতায় এতটাই মুগ্ধ যে অনেকে জানিয়েছেন, যদি সুযোগ পান তবে ভবিষ্যতেও এখানে পরীক্ষা দিতে আসবেন। 

পুরুলিয়ার আতিথেয়তা তাদের মন জয় করেছে। শুধুমাত্র নিরাপত্তা নয়, সাধারণ মানুষের আচরণও ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। 

এমনকি স্থানীয়রা তাদের সাহায্য করেছে সঠিক পরীক্ষাকেন্দ্র খুঁজে পেতে। এই অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মনে বাংলার প্রতি এক বিশেষ শ্রদ্ধা তৈরি করেছে।


📌 পরীক্ষাকেন্দ্রের ভৌগোলিক বিস্তার এবং শিক্ষার্থীদের যাত্রাপথ

পুরুলিয়ার পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো শুধু শহরে সীমাবদ্ধ ছিল না। পুঞ্চা, জয়পুর, ঝালদা প্রভৃতি ব্লকেও অনেক সেন্টার ছিল, যেখানে ভিনরাজ্যের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েছে। 

উত্তরপ্রদেশের অলক ত্রিপাঠির সেন্টার পড়েছিল মানভূম ভিক্টোরিয়া স্কুলে। তিনি জানান, “উত্তরপ্রদেশে চাকরির সুযোগ নেই। বেকারত্বের সংখ্যা ভয়ানক হারে বাড়ছে। তাই আমরা বিহার, রাজস্থান ঘুরে পরীক্ষা দিয়েছি। এবার বাংলায় এসে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে আমরা খুশি।”

প্রয়াগরাজের সঙ্গীতা মৌর্য জানান, “আমাদের রাজ্যে চাকরির সুযোগ একেবারেই সীমিত। তাই এতদূর আসতে হয়েছে। যদিও প্রথমে ভয় ছিল, কিন্তু পুরুলিয়ায় এসে সবকিছু সহজ হয়ে গেছে। স্থানীয় মানুষ আমাদের সহযোগিতা করেছে।”

এই কথাগুলো স্পষ্ট করে দেয় যে কর্মসংস্থানের সংকট কিভাবে যুবসমাজকে অন্য রাজ্যে গিয়ে চাকরির পরীক্ষা দিতে বাধ্য করছে। 

বাংলার এই পরীক্ষা তাদের জন্য এক নতুন আশা হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, পুরুলিয়ার মানুষ তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে যে উদাহরণ তৈরি করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।


📌 কর্মসংস্থানের অভাব ও দূরদূরান্ত থেকে পরীক্ষার্থীদের আগমন

উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং দিল্লির মতো রাজ্যে চাকরির সুযোগের সংকট ভয়াবহ। সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি সেখানে খুবই সীমিত, আর প্রতিযোগিতা অত্যন্ত বেশি। 

এই কারণে শিক্ষক নিয়োগের মতো পরীক্ষার জন্য অনেকে নিজেদের রাজ্য ছেড়ে দূরে আসছেন। বাংলার এসএসসি পরীক্ষা তাদের কাছে নতুন সুযোগ হয়ে উঠেছে।

অলক ত্রিপাঠি বলেন, “আমাদের রাজ্যে চাকরি নেই। তাই অন্য রাজ্যে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।” 

এই বক্তব্য অনেকের পরিস্থিতি প্রকাশ করে। ভিনরাজ্যের শতাধিক শিক্ষার্থী পুরুলিয়ায় এসে পরীক্ষা দিয়েছে, যা বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের সুযোগের গুরুত্ব তুলে ধরে।


📌 শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

পুরুলিয়ায় পরীক্ষাটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। ভিনরাজ্যের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে যে কোনওরকম অসুবিধা হয়নি। 

পরীক্ষার পরিবেশ স্বচ্ছ ছিল, এবং সবাই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।

একজন পরীক্ষার্থী বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম এতদূরে এসে সমস্যায় পড়ব, কিন্তু এমন কোনও অসুবিধা হয়নি। বরং আমরা খুব খুশি।” 

তাদের চোখে আশা, পরীক্ষায় ভালো ফল করে তারা চাকরি পাবে। এই স্বপ্ন শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং বেকারত্বের বিরুদ্ধে এক সংগ্রামের প্রতীক।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url