পুরুলিয়ার সাহেব বাঁধ দূষণ নিয়ে পরিবেশ আদালতে যাচ্ছেন সুভাষ দত্ত।

পুরুলিয়ার সাহেব বাঁধ একসময় ছিল জেলার গর্ব, কিন্তু আজ ভয়াবহ দূষণের শিকার। শহরের নিকাশি জল, নার্সিংহোমের বর্জ্য ও অপরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে বাঁধের জলের মান ভীষণভাবে নষ্ট হয়েছে। 

এতে শুধু পরিবেশ নয়, জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে। মাছের মৃত্যু ঘটছে, পরিযায়ী পাখিরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। 

পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বাঁধের অবস্থা দেখে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং জানিয়েছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এর ফল ভয়াবহ হবে। 

তিনি জানিয়েছেন, এই বাঁধকে পুনরুদ্ধার করতে ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকা প্রয়োজন এবং এটি শুধুমাত্র আদালতের নির্দেশেই সম্ভব। তাই তিনি পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন।


purulia saheb bandh dushan paribesh adalat

পুরুলিয়ার সাহেব বাঁধের ভয়াবহ দূষণ নিয়ে সরব পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত আদালতের পথে প্রস্তুতি

🌍 পুরুলিয়া, ২ সেপ্টেম্বর: জেলার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাঁধ আজ ভয়াবহ দূষণের শিকার। একসময় যে জলাশয়টি শহরের গর্ব ছিল, আজ সেটিই মৃত্যুপথযাত্রী। 

দূষণের কারণে শুধু জলজ প্রাণী নয়, সমগ্র জীববৈচিত্র্য বিপন্ন। এরকম পরিস্থিতিতে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

মঙ্গলবার তিনি সাহেব বাঁধ পরিদর্শন করেন এবং ঘুরে দেখেন বাঁধের প্রতিটি প্রান্ত। 

কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা এই পরিদর্শনের পর তিনি জানান, “সাহেব বাঁধের বর্তমান অবস্থা ভয়াবহ। যদি এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, আগামী দিনে এর পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।” 

পুরুলিয়া শহরের সবচেয়ে বড় জলাশয় হিসেবে সাহেব বাঁধের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধু শহরের পানীয় জলের উৎস নয়, হাজার হাজার মানুষ এর উপর নির্ভরশীল। 

কিন্তু বর্তমানে এই বাঁধে শহরের নিকাশি জল ও বিভিন্ন জায়গার বর্জ্য প্রবেশ করছে। যার ফলে জলের মান একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। 

মানুষ এবং প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সুভাষ দত্তের মতে, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, এই বাঁধের অস্তিত্ব চরম সংকটে পড়বে।


💧 সাহেব বাঁধের ভয়াবহ দূষণ পরিস্থিতি – উদ্বেগের কারণ

একসময় যে সাহেব বাঁধ পুরুলিয়ার গর্ব ছিল, আজ তা দূষণের কারণে ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। বাঁধের জলে এখন অসংখ্য নোংরা বস্তুর স্তূপ, বর্জ্য পদার্থ, এমনকি রাসায়নিক মিশ্রণও দেখা যাচ্ছে। 

শহরের একাধিক নিকাশি নালা সরাসরি সাহেব বাঁধে মিশছে। এর ফলে বাঁধের জলের মান দ্রুত খারাপ হচ্ছে এবং পানীয় হিসেবে সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে। 

শুধুমাত্র নিকাশি জল নয়, বিভিন্ন নার্সিংহোম এবং হাইড্রেন থেকেও বিপুল পরিমাণ বর্জ্য পদার্থ এই বাঁধে প্রবেশ করছে। 

চিকিৎসাজনিত বর্জ্যের মিশ্রণে বাঁধের জলে ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষতিকর জীবাণুর সংখ্যা ভয়ানকভাবে বেড়েছে। 

জলে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, যা মানুষের পাশাপাশি পাখি এবং অন্যান্য প্রাণীর জীবনকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। 

এর সাথে যোগ হয়েছে অপরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করছেন, বহুদিন ধরে সাহেব বাঁধে কোনো বড় ধরনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ হয়নি। 

ফলে বাঁধের পাড় ভেঙে যাচ্ছে, জল ঘোলা হয়ে গেছে, আর দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। সুভাষ দত্ত জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাঁধের জলের মান পরীক্ষা করানো জরুরি। 

এর ফলাফল জানা গেলে বোঝা যাবে, সমস্যা কতটা গভীর এবং সমাধানের জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।


🐦 পরিযায়ী পাখিদের জন্য ভয়ঙ্কর সংকেত

সাহেব বাঁধ শুধু জলাশয় নয়, এটি ছিল একসময় পরিযায়ী পাখিদের অন্যতম আশ্রয়স্থল। শীতকালে এখানে অসংখ্য বিদেশি পাখি আসত। 

কিন্তু এখন সেই দৃশ্য প্রায় হারিয়ে গেছে। দূষণের কারণে পাখিদের সংখ্যা কমছে। 

পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, “সাহেব বাঁধ পরিযায়ী পাখিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কিন্তু যদি এই দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, পাখিরা আর এখানে ফিরবে না। আর যদি পাখিরা মুখ ঘুরিয়ে নেয়, একদিন প্রকৃতি এবং পরিবেশও মানুষের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।” 

বর্তমানে বাঁধের একাংশে কচুরিপানা রেখে পাখিদের জন্য বাসা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সুভাষবাবুর মতে এটি একেবারেই প্রয়োজনীয় নয়। 

বরং এই কচুরিপানা দূষণ বাড়াচ্ছে। জলাশয়ের ওপরের স্তরে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মাছ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবনহানি ঘটছে। 

এমনকি, জলজ উদ্ভিদেরও ক্ষতি হচ্ছে। পরিযায়ী পাখিরা সাধারণত পরিষ্কার এবং নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। 

কিন্তু এখন বাঁধের চারপাশে নোংরা, দুর্গন্ধ এবং আবর্জনা থাকায় পাখিরা সাহেব বাঁধ এড়িয়ে যাচ্ছে। এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। 

যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, আগামী দিনে এই বাঁধ থেকে পাখিদের সম্পূর্ণভাবে বিদায় নিতে হতে পারে।


🐟 মাছের মৃত্যু ও আর্থিক ক্ষতির ভয়াবহ চিত্র

দূষণের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে মাছ এবং জলজ প্রাণীর ওপর। বাঁধে নিয়মিত মাছ চাষ করা হয় এবং এখান থেকে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন। 

বাঁধের জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে এবং জলে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের কারণে মাছ মারা যাচ্ছে। 

মাছ চাষের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মীরা দাবি করেছেন, “দূষণের কারণে প্রচুর মাছ মারা যাচ্ছে। এর ফলে আমাদের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।” 

মাছের মৃত্যু মানে শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, এর সাথে যোগ হচ্ছে খাদ্য সংকটের সম্ভাবনাও। স্থানীয় বাজারে এই বাঁধের মাছের চাহিদা ছিল প্রচুর। 

এখন সেই চাহিদা মেটাতে বাইরে থেকে মাছ আনতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি মৃত মাছ পচে গিয়ে জলে আরও দূষণ ছড়াচ্ছে। 

ফলে একটি চক্রের মধ্যে বাঁধ আটকে যাচ্ছে—দূষণ বাড়ছে, মাছ মরছে, আর মাছ মরার ফলে দূষণ আরও বাড়ছে। এই চক্র ভাঙতে হলে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।


⚖️ আদালতের পথে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত – কেন জরুরি আইনি পদক্ষেপ

সুভাষ দত্তের মতে, এই সমস্যার সমাধান করতে গেলে শুধুমাত্র পুরসভার উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, “সাহেব বাঁধকে পুনরুদ্ধার করতে অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। এই কাজ মিউনিসিপ্যাল অ্যাফেয়ার্স এবং অন্যান্য দপ্তরের মাধ্যমে করতে হবে। আদালতের নির্দেশ ছাড়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।” 

তাই তিনি পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া এত বড় অর্থ বরাদ্দ এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন। 

তিনি মনে করেন, শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, আইনি কাঠামোর মাধ্যমেই সাহেব বাঁধকে বাঁচানো সম্ভব 

এই পদক্ষেপ শুধু সাহেব বাঁধের জন্য নয়, পুরো জেলার পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

আদালতের নির্দেশে যদি প্রকল্প শুরু হয়, তবে বাঁধের জলে পরিশোধন ব্যবস্থা চালু করা যাবে, নিকাশি এবং বর্জ্য জলের প্রবাহ বন্ধ করা সম্ভব হবে এবং বাঁধের পাড় পুনর্নির্মাণ করা যাবে।


✅ সমাধানের পথ – এখনই পদক্ষেপ প্রয়োজন

সাহেব বাঁধকে বাঁচাতে হলে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। প্রথমত, সমস্ত নিকাশি এবং বর্জ্য জলের প্রবাহ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। 

দ্বিতীয়ত, বাঁধের জল পরীক্ষার মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে এবং জল পরিশোধন প্রকল্প চালু করতে হবে। 

তৃতীয়ত, বাঁধের চারপাশ পরিষ্কার করা এবং কচুরিপানা অপসারণ করতে হবে। একইসাথে স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করতে হবে যাতে তারা বাঁধে আবর্জনা না ফেলে। 

পরিবেশবিদরা মনে করছেন, যদি এই সমস্ত পদক্ষেপ দ্রুত নেওয়া হয়, সাহেব বাঁধকে আবার তার পুরনো রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। 

কিন্তু যদি বিলম্ব হয়, তবে হয়তো একদিন সাহেব বাঁধের নামই কেবল থাকবে ইতিহাসে।


📢 প্রশ্ন আপনার জন্য

আপনি কি মনে করেন সাহেব বাঁধকে বাঁচাতে সরকারের বড় উদ্যোগ নেওয়া উচিত? মন্তব্য করে জানান আপনার মতামত।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url