শেষ ডাক রানার কালিপদ মুড়া।
🌄অযোধ্যা পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে হাঁটেন শেষ ডাক রানার কালিপদ মুড়া। জানুন তাঁর জীবন সংগ্রাম, মানবিক গল্প আর ইতিহাসের শেষ দৌড়ের কাহিনি।
শেষ ডাক রানার কালিপদ দা – অযোধ্যা পাহাড়ের শেষ দৌড়বিদের অনন্য কাহিনি
অযোধ্যা পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে প্রতিদিন এক বৃদ্ধ মানুষ হাঁটেন—হাতে চিঠির ঝুলি, কাঁধে দায়িত্বের ভার।
তিনি কালিপদ মুড়া, যাকে সকলে চেনে কালিপদ দা নামে। বয়স সত্তরের কোঠায় হলেও তাঁর মধ্যে ক্লান্তি নেই।
পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তিনি পৌঁছে দেন চিঠি, মানি অর্ডার, মানুষের খবর।
যখন পৃথিবী মোবাইল ফোনে এক মুহূর্তে যুক্ত, তখনও কালিপদ দা মনে করিয়ে দেন—সংযোগ শুধু প্রযুক্তির নয়, হৃদয়ের সম্পর্কের সেতু।
তাঁকে নিয়েই তৈরি হয়েছে ডকুমেন্টারি The Last Run। কালিপদ দা কেবল একজন ডাকবাহক নন, তিনি জীবন্ত ইতিহাস, যিনি আমাদের শেখান নিষ্ঠা, মানবিকতা ও দায়িত্ববোধের প্রকৃত অর্থ।
📖 ভূমিকা – যখন মানুষই ছিল খবরের একমাত্র বাহক
এক সময়ের গ্রামবাংলায় ডাক রানার মানেই ছিল জীবনের সঙ্গে খবরের সেতুবন্ধন। হাতে চিঠির ঝুলি, পায়ে ঘুঙুর বাঁধা, আর কণ্ঠে অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে তাঁরা ছুটে বেড়াতেন গ্রাম থেকে গ্রামে।
কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতির এই যুগে যখন খবর পৌঁছায় এক ক্লিকে, তখনও এমন একজন আছেন যিনি পাহাড়ি পথে হাঁটছেন মানুষের খবর পৌঁছে দিতে।
সেই মানুষটি হলেন কালিপদ মুড়া, যাঁকে সবাই ভালোবেসে ডাকে কালিপদ দা।
🌄 অযোধ্যা পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে, সত্তরের কোঠার এক মানুষ আজও ধরে রেখেছেন খবর পৌঁছানোর ঐতিহ্য।
👣 কালিপদ দা – ইতিহাসের শেষ দৌড়বিদ
কালিপদ মুড়া শুধুই একজন ডাকবাহক নন, তিনি এক জীবন্ত কিংবদন্তি। বয়স সত্তরের কাছাকাছি, তবুও তাঁর পদক্ষেপে ক্লান্তি নেই।
প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার অরণ্য আর পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে তিনি পৌঁছে দেন—
✔ চিঠি
✔ মানি অর্ডার
✔ ছোটখাটো পার্সেল
📍 কর্মস্থল:
অযোধ্যা হিলটপ পোস্ট অফিস, সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর প্রতিদিনের পথচলা।
🌧️ রোদ-বৃষ্টি ঝড় – কিছুই থামাতে পারে না তাঁকে
পাহাড়ি পথে হাঁটতে হলে কত চ্যালেঞ্জ থাকে! কখনও মুষলধারে বৃষ্টি, কখনও হাড়কাঁপানো শীত, আবার কখনও দমকা ঝড়।
তবুও কালিপদ দা থেমে যান না। কারণ, তিনি জানেন—
“কেউ অপেক্ষা করছে আমার হাতে খবরের আশায়।”
✔ গ্রামের মানুষ তাঁর আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন।
✔ তাঁর হাতেই আসে আনন্দের সংবাদ, আবার কখনও শোকের খবর।
❤️ কেন এত কষ্ট করেও তিনি থেমে যান না?
তাঁর মুখে একটাই উত্তর:
“মানুষের হাসি দেখতে ভালো লাগে। চিঠি হাতে পেয়ে যে খুশি তারা পায়, সেই খুশিই আমার প্রেরণা।”
এই কথার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক গভীর সত্য—সংযোগ শুধু প্রযুক্তির কাজ নয়, এটি হৃদয়ের সম্পর্কের বন্ধন।
📜 ইতিহাসের সঙ্গে কালিপদ দার মিল
কালিপদ দার জীবনের গল্প যেন হুবহু মেলে যায় সুকান্ত ভট্টাচার্যের সেই বিখ্যাত কবিতা “রানার”-এর সঙ্গে।
কবিতার লাইনগুলো—
“রানার! গ্রামের রানার!
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার...”
এই কথাগুলো যেন তাঁর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতিফলিত হয়।
📺 ডকুমেন্টারিতে ধরা পড়েছে তাঁর জীবন
তাঁর গল্প শুধু স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ছাপ ফেলেছে। Telegraph India ২০২১ সালে তৈরি করেছে একটি ডকুমেন্টারি—
🎬 “The Last Run”
এই ডকুমেন্টারিতে ফুটে উঠেছে—
✔ তাঁর প্রতিদিনের সংগ্রাম
✔ একাকিত্ব
✔ ডাক পৌঁছে দেওয়ার প্রতি অদম্য ভালোবাসা
⚠️ ডাক রানারের ভবিষ্যৎ – হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্য
আজকের দিনে ডাক রানার প্রথা প্রায় বিলুপ্ত।
✔ মোবাইল ফোন।
✔ ইন্টারনেট।
✔ আধুনিক ডাকব্যবস্থা।
এসবের ভিড়ে কোথাও যেন হারিয়ে যাচ্ছে এই পেশা।
তবুও অযোধ্যা পাহাড়ের বুকের মধ্যে আজও বেঁচে আছে এক নাম—কালিপদ মুড়া।
🎯 কালিপদ দার প্রেরণা আমাদের জন্য কী শেখায়?
এই গল্প থেকে আমরা শিখি—
✔ কাজের প্রতি নিষ্ঠা কখনও বয়স দেখে না।
✔ সম্পর্কের আসল শক্তি মানুষের হাতে।
✔ প্রযুক্তি যতই এগোক, মানবিকতার মূল্য চিরকাল অমলিন।
📌 মূল তথ্য এক নজরে
বিষয় | তথ্য |
---|---|
নাম | কালিপদ মুড়া (কালিপদ দা) |
বয়স | আনুমানিক ৭০ বছর |
পেশা | ডাক রানার |
কর্মস্থল | অযোধ্যা হিলটপ পোস্ট অফিস |
কাজের ধরন | পাহাড়ি গ্রামে ডাক পৌঁছে দেওয়া |
ডকুমেন্টারি | The Last Run (Telegraph India, 2021) |
💭 আবেগের শেষ কথা
আজ আমরা যখন এক ক্লিকে খবর পাঠাই, তখনও কালিপদ দার নিরলস পথচলা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—
সংযোগ মানে শুধু নেটওয়ার্ক নয়, সংযোগ মানে হৃদয়ের সম্পর্ক।
হয়তো একদিন ইতিহাস তাঁকে বলবে “শেষ ডাক রানার”, কিন্তু তাঁর গ্রামের মানুষের কাছে তিনি আজও —
✔ খবরের বাহক।
✔ আশার আলো।
✔ প্রাণের মানুষ।
🙏 কালিপদ দা, আপনিই আমাদের অনুপ্রেরণা।