পুরুলিয়ায় ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটির বার্ষিক সভা।
পুরুলিয়ার বিজয় গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হলো ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটির বার্ষিক সাধারণ সভা। সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পর্যবেক্ষকরা এবং জেলার শতাধিক সদস্য।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সূচনা হওয়া এই সভায় আগামী তিন বছরের জন্য নতুন পরিচালন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সভাপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন হিরক কুমার সাউ, সহ-সভাপতি ড. দীপক চৌধুরী এবং কোষাধ্যক্ষ অজিত সারাওগি।
এছাড়া ১০ জনের মূল কমিটি ও ২২ জনের সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সভায় ভবিষ্যতের পরিকল্পনা হিসেবে রক্তদান কর্মসূচি, স্বাস্থ্য শিবির এবং দুর্যোগকালীন সেবা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পুরুলিয়ায় ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটির বার্ষিক সাধারণ সভা এবং নতুন পরিচালন কমিটি ঘোষণা 🏥
শুভ সূচনা ও আবেগঘন মুহূর্তের সূচনা
পুরুলিয়া, ৭ সেপ্টেম্বর – পুরুলিয়ার বিজয় গার্ডেনে আজকের দিনটি এক অনন্য তাৎপর্য নিয়ে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিল।
ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটির পুরুলিয়া ব্রাঞ্চের বার্ষিক সাধারণ সভা আজ অনুষ্ঠিত হলো একদম জমকালো এবং আবেগঘন পরিবেশে।
সকালবেলায় সূর্যের আলোয় বিজয় গার্ডেনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে শুরু হয় সভার আনুষ্ঠানিকতা।
প্রথমেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীতের সুমধুর সুরে সম্মেলন মঞ্চ মুখরিত হয়ে ওঠে।
উপস্থিত সকলের মুখে ছিল গর্বের হাসি, হৃদয়ে ছিল দেশপ্রেমের আবেগ। এই মুহূর্ত শুধু একটি আনুষ্ঠানিক সূচনা নয়, বরং মানবতার সেবার নতুন যাত্রার প্রতীক।
প্রায় শতাধিক সদস্যের উপস্থিতি এদিনের সভাকে করেছে ঐতিহাসিক। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন, যা প্রমাণ করে সংগঠনের প্রতি তাদের অগাধ বিশ্বাস এবং ভালোবাসা।
এই ধরনের সভা শুধু পুরনো কাজের মূল্যায়নই নয়, ভবিষ্যতের পরিকল্পনার দিকনির্দেশও দেয়। সেই দিক থেকেই এই সভা পুরুলিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
রাজ্য পর্যায়ের অতিথিদের বক্তব্য ও নির্দেশনা
সভায় বিশেষ আকর্ষণ ছিল ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটির রাজ্য পর্যায়ের দুই পর্যবেক্ষকের উপস্থিতি – কামরুল আলম এবং অনুপম পালটি।
তারা শুধুমাত্র শুভেচ্ছা বিনিময় করেই থেমে থাকেননি, বরং সভার প্রতিটি ধাপে অংশগ্রহণ করে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে মানবিক সেবার তাৎপর্য, রেডক্রসের আদর্শ এবং কীভাবে সমাজে আরও বেশি ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায় সেই বিষয়গুলি।
কামরুল আলম স্পষ্ট করে বলেন, “রেডক্রস কেবল একটি সংগঠন নয়, এটি মানবতার প্রতীক। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ মানুষের জন্য, মানবতার কল্যাণের জন্য।”
তিনি সংগঠনের বিভিন্ন নীতি ও নিয়মাবলী বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং সকল সদস্যদের সেই অনুযায়ী কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুপম পালটি তার বক্তব্যে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, রক্তদান, দুর্যোগকালীন সেবা, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং শিক্ষা প্রসারে রেডক্রসের ভূমিকা আরও প্রসারিত করা জরুরি।
তাদের বক্তব্যে যে আবেগ, দায়িত্ববোধ এবং মানবতার প্রতি অঙ্গীকার ছিল তা সভায় উপস্থিত প্রত্যেকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
নতুন পরিচালন সমিতি গঠন: দায়িত্বের নতুন অধ্যায়
সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হলো আগামী তিন বছরের জন্য নতুন পরিচালন সমিতি। পুরনো নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা এবং নতুন মুখের উদ্যম – এই দুইয়ের মেলবন্ধনে গঠিত হলো নতুন কমিটি।
সভাপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হলেন হিরক কুমার সাউ, যিনি তার দক্ষতা এবং নেতৃত্বের জন্য পূর্ববর্তী মেয়াদেই সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
সহ-সভাপতির পদে নির্বাচিত হলেন ডক্টর দীপক চৌধুরী, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেলেন অজিত সারাওগি। এছাড়া মোট দশজন সদস্যের একটি মূল পরিচালন সমিতি গঠন করা হয়েছে এবং পাশাপাশি বাইশ সদস্যের একটি সাব-কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এই নতুন কমিটি আগামী দিনে সংগঠনের কাজকে আরও গতিশীল এবং কার্যকর করে তুলবে। নেতৃত্বের পরিবর্তন মানেই নতুন উদ্যম, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং নতুন পরিকল্পনা।
তাই এদিনের সভা শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং রেডক্রসের কাজের ধারায় এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা: মানবতার সেবায় অঙ্গীকার
সভাপতি হিরক কুমার সাউ সভার শেষে তার বক্তব্যে ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
তিনি জানান, গত কয়েক মাসে রেডক্রসের সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা মানুষের আস্থা এবং মানবিক কাজে আগ্রহের পরিচয়।
আগামী দিনে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে রক্তদান কর্মসূচি বাড়ানো, যাতে জরুরি সময়ে কেউ রক্তের অভাবে প্রাণ না হারায়।
গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য শিবির আয়োজনের মাধ্যমে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ টিম গঠন করা হবে। এছাড়া যুব প্রজন্মকে মানবিক কাজে যুক্ত করতে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হবে।
হিরক কুমার সাউ বলেন, “আমরা চাই রেডক্রস হোক প্রতিটি মানুষের ভরসার নাম। সংকটের সময়ে যেন সবাই জানে, রেডক্রস তাদের পাশে আছে।”
এই পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত হলে পুরুলিয়া জেলায় মানবিক সেবার এক নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।
সভার গুরুত্ব ও মানবতার সেবায় রেডক্রসের ভূমিকা
এই সভা শুধুমাত্র বার্ষিক সাধারণ সভা নয়, বরং মানবিক কাজের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সূচনা।
ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটি সবসময় মানবতার সেবায় কাজ করে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও সেই কাজকে আরও প্রসারিত করার লক্ষ্য নিয়েছে।
যখন সমাজে দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য সংকট, দুর্ঘটনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো সমস্যা বেড়ে চলেছে, তখন রেডক্রসের মতো সংগঠন আমাদের নিরাপত্তার ঢাল হিসেবে কাজ করছে।
এই সভা সেই অঙ্গীকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। উপস্থিত সদস্যরা একবাক্যে আশ্বাস দিয়েছেন যে তারা মানবিক কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবেন।
মানবতার সেবা করার চেয়ে বড় ধর্ম কিছু নেই – এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে রেডক্রস আজও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
সভার সমাপ্তি হয়েছে নতুন উদ্যম, নতুন আশা এবং নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে।
পুরুলিয়ার মানুষ আশা করছে, আগামী দিনে রেডক্রসের কাজ আরও বিস্তৃত হবে এবং আরও বেশি মানুষ এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হবে।