বাঘমুন্ডি কৃষক বাজারে দোকান ঘর বণ্টনে কৃষক ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ।
বাঘমুন্ডি কৃষক বাজারে নতুন দোকান ঘর বণ্টন প্রক্রিয়াকে ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও ক্ষোভ।
স্থানীয় কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, ভাড়া নির্ভর নিয়মের ফলে গরিবরা বঞ্চিত হচ্ছেন আর ধনীরা সহজেই দোকান ঘর পাচ্ছেন।
আগে যেখানে লটারির মাধ্যমে ন্যায্যভাবে দোকান বণ্টন হতো, সেখানে এখন অর্থই হয়ে উঠেছে মূল নির্ধারক।
এতে করে কৃষক বাজারের আসল উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন সবাই। স্থানীয় নেতৃত্ব মানুষের পাশে দাঁড়ালেও অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
📰 বাঘমুন্ডি কৃষক বাজারে দোকান ঘর বণ্টন নিয়ে কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ
🌾 কৃষক বাজারে দোকান ঘর বণ্টনের শুরুতেই আশা ও হতাশার মিশ্র অনুভূতি
পুরুলিয়া জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি দীর্ঘদিন ধরেই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কৃষক বাজার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল।
এরই অংশ হিসেবে বাঘমুন্ডি ব্লকে নির্মিত হয়েছে বাঘমুন্ডি কৃষক বাজার, সুইসা উপবাজার এবং কালিমাটি উপবাজারে বেশ কিছু নতুন দোকান ঘর।
মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিক্রির সুযোগ করে দেওয়া এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য একটি স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা তৈরি করা।
তাই যখন বিজ্ঞপ্তি জারি হলো যে ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দোকান ঘর বণ্টনের প্রক্রিয়া চলবে, তখন স্থানীয় কৃষক থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ীরা স্বস্তি এবং আনন্দে ভরে উঠেছিলেন।
তাদের মনে হয়েছিল, অবশেষে একটি স্বপ্ন পূরণের পথে। নিজেরা দীর্ঘদিন ধরে যে কষ্ট করে উৎপাদন বা ক্ষুদ্র ব্যবসা চালাচ্ছেন, এবার সেই কাজকে আরও সুসংগঠিত রূপ দেওয়া সম্ভব হবে।
কিন্তু খুব দ্রুতই সেই আনন্দ মিলিয়ে গেল। কৃষি ও বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না নিজে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখে নির্দেশ দেন, পুজোর আগেই এই বণ্টন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
মন্ত্রীর সফর স্থানীয়দের মধ্যে আশার আলো জাগালেও যখন আবেদন ফর্মের দাম ও ভাড়ার অঙ্ক প্রকাশ পেল, তখনই হতাশার ছায়া নেমে এল।
কৃষকরা দেখলেন, যেটাকে তারা নিজেদের সুযোগ ভেবেছিলেন, সেটা বাস্তবে ধনীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
ফলে প্রথম দিনের আনন্দ ধীরে ধীরে পরিণত হলো ক্ষোভে এবং নিরানন্দে। এই পরিবর্তন এক কথায় তাদের জীবনে বড় ধাক্কা হিসেবে আঘাত হানল। 😟
💰 ফর্মের মূল্য ও ভাড়ার অঙ্ক কৃষক সমাজকে চাপে ফেলল
যখন আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হলো, তখন স্থানীয় বাসিন্দা কল্যাণ মুখার্জির মতো অনেকে স্পষ্ট জানালেন তাদের অসন্তোষ।
প্রথম ধাক্কা এল ফর্মের মূল্যে—মাত্র একটি ফর্ম কিনতেই দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। গ্রামের সাধারণ কৃষকের কাছে এই অঙ্কও ছোট নয়।
এরপর দেখা গেল প্রতিটি দোকান ঘরের জন্য আলাদা করে সরকারি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। দোকানভেদে এই ভাড়া ৬৩৩ টাকা থেকে শুরু করে ১০৮৭ টাকা পর্যন্ত।
শুধু দোকান নয়, যদি কেউ গুদাম ঘর নিতে চান তবে তাকে গুনতে হবে প্রায় ১৪,৭৯৮ টাকা। এত বড় অঙ্ক শুনে সাধারণ মানুষ অবাক হয়ে যান।
সবচেয়ে বড় সমস্যার জায়গা হলো, ফর্মে লিখতে হচ্ছে আবেদনকারী কত ভাড়া দিতে প্রস্তুত। অর্থাৎ, যিনি যত বেশি ভাড়া দিতে পারবেন তিনিই দোকান ঘর পাবেন।
এর ফলে ধনী ব্যবসায়ীদের জন্য পথ প্রশস্ত হচ্ছে, আর গরিব কৃষক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পিছিয়ে পড়ছেন।
আগে যেখানে লটারির মাধ্যমে সবার সমান সুযোগ ছিল, সেখানে এখন অর্থই হবে মূল নির্ণায়ক।
সাধারণ কৃষকরা মনে করছেন, এই ব্যবস্থার ফলে তারা কার্যত বাজার থেকে বিতাড়িত হবেন।
তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, পরিশ্রম আর দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা সবই এখন অর্থের কাছে হেরে যাচ্ছে।
তারা প্রশ্ন তুলছেন—এমন হলে কৃষক বাজারের মূল উদ্দেশ্যই বা কীভাবে সফল হবে? 🤔
😠 ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে
বাঘমুন্ডি, সুইসা ও কালিমাটি অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসার উপর নির্ভরশীল।
তাদের আয় সীমিত, ব্যবসার পুঁজি সামান্য, আর সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয় সেখানে অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়া কার্যত অসম্ভব।
কিন্তু নিয়ম এমন যে, বেশি ভাড়া না দিলে দোকান ঘর পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। এর মানে হলো স্থানীয় কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকান ঘর থেকে বঞ্চিত হবেন এবং ধনী ব্যবসায়ীরা একের পর এক দোকান দখল করে নেবেন।
এতে গ্রামীণ অর্থনীতি ও সামাজিক ভারসাম্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। কৃষক বাজার আসলে যাদের জন্য গড়ে উঠেছিল তারাই বাদ পড়বেন।
অনেকেই ক্ষোভে বলছেন, এটি কৃষকদের জন্য বাজার নয়, বরং ধনীদের নতুন ব্যবসা বাড়ানোর ক্ষেত্র।
এক কৃষক চোখ ভিজে যাওয়া অবস্থায় বললেন—“আমরা ভেবেছিলাম নিজেদের জন্য একটি স্থায়ী দোকান হবে, কিন্তু এখন বুঝছি সবকিছুই আমাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।”
এই কথাগুলো শুধু তার একার নয়, গোটা এলাকার ছোট ছোট ব্যবসায়ী ও কৃষকদের হৃদয়ের বেদনা। 😢
🗣️ স্থানীয় নেতৃত্ব মানুষের পাশে দাঁড়ালেও অনিশ্চয়তা রয়ে গেল
এই পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখাচ্ছেন স্থানীয় নেতৃত্ব। বাঘমুন্ডি পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ লক্ষ্মণ চন্দ্র টুডু স্পষ্ট জানিয়েছেন, স্থানীয় মানুষের দাবি একেবারেই যৌক্তিক।
গরিব কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হাতে দোকান ঘর পৌঁছানো উচিত এবং এই বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনবেন। তার এই বক্তব্য কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করেছে সাধারণ মানুষকে।
তবে মানুষের মনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, নেতারা কথা দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে কতটা পরিবর্তন আসবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
আগে বহুবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধনীদের স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে। এবারও সেই একই চিত্র দেখা দিলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠবে।
তবুও মানুষ আশা হারাতে চান না। তারা বিশ্বাস করতে চান যে, তাদের কণ্ঠস্বর প্রশাসন শুনবে এবং বাজারের প্রকৃত উদ্দেশ্য—কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাহায্য করা—পূরণ হবে। 🌟
📊 পুরনো লটারি পদ্ধতি বনাম নতুন ভাড়া নির্ভর পদ্ধতি
স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী, লটারির মাধ্যমে দোকান ঘর বণ্টনই ছিল সবচেয়ে ন্যায্য ব্যবস্থা। লটারিতে গরিব কিংবা ধনী—সবাই সমান সুযোগ পেতেন।
এতে অন্তত নিশ্চয়তা ছিল, অর্থ দিয়ে কাউকে সুযোগ কেড়ে নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু নতুন ভাড়া নির্ভর পদ্ধতি পুরোপুরি ধনীদের পক্ষেই সুবিধাজনক।
লটারিতে যেমন স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার ছিল, তেমনই স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। অন্যদিকে ভাড়া নির্ভর পদ্ধতিতে এখন ভয় দেখা দিচ্ছে।
মানুষ আশঙ্কা করছেন বাজার ধীরে ধীরে পুঁজিপতিদের দখলে চলে যাবে। এতে কৃষক বাজারের আসল উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাবে।
কারণ কৃষক বাজার মানেই ছিল—কৃষকের উৎপাদিত ফসল সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছানো এবং তাদের হাতে সঠিক দাম পৌঁছে দেওয়া।
কিন্তু ধনী ব্যবসায়ীরা যদি দোকান ঘর দখল করে নেন, তবে কৃষকদের সরাসরি লাভ হবে না।
বরং আবার মধ্যস্বত্বভোগীরাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য বড় আঘাত ছাড়া কিছুই নয়। 📉
🏪 বাজারের উন্নয়ন না কি পুঁজিপতিদের আধিপত্য
সরকার দাবি করছে, নতুন দোকান ঘর তৈরি এবং ভাড়া নির্ধারণ করার মাধ্যমে বাজারে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটবে।
তাদের মতে, এতে বাজার আরও সুসংগঠিত হবে, স্থায়ী কাঠামো তৈরি হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে কৃষকরাই উপকৃত হবেন।
কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, ধনীরা এই প্রক্রিয়ায় সহজেই দোকান ঘর দখল করে নিচ্ছেন, আর গরিব কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা থেকে যাচ্ছেন বঞ্চিত।
ফলে প্রশ্ন উঠছে, এটি কি আসলেই উন্নয়ন, নাকি পুঁজিপতিদের আধিপত্য কায়েমের নতুন উপায়?
অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, উন্নয়নের নামে গরিবদের স্বপ্ন ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। বাজারের নতুন রূপ এখন কৃষকদের জন্য নয়, বরং অর্থবান ব্যবসায়ীদের জন্য।
এই বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিগগিরই কৃষক বাজার তার আসল পরিচয় হারাবে।
তখন বাজার হবে ধনীদের জমি, আর কৃষকরা থাকবে বাইরে। এই ভবিষ্যৎচিত্র ভেবে স্থানীয় মানুষ আরও বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। 😟
🔮 সামনে কী হতে পারে মানুষের আশঙ্কা ও প্রত্যাশা
বর্তমানে এলাকায় অসন্তোষ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন না এলে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।
তাদের দাবি একটাই—দোকান ঘর যেন গরিব কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছায়। স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও বাস্তব পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তা এখনো অনিশ্চিত।
মানুষের প্রত্যাশা, প্রশাসন এই দাবি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে। কারণ কৃষক বাজারের মূল দর্শনই হলো কৃষকের স্বার্থরক্ষা।
যদি সেই দর্শন ভঙ্গ হয়, তবে বাজার তার প্রকৃত উদ্দেশ্য হারাবে। তাই এখন সবার নজর সরকারের সিদ্ধান্তে।
সরকার যদি মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তবে এই বাজার সত্যিই কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন পূরণের জায়গা হবে। আর যদি তা না হয়, তবে ক্ষোভ আরও বাড়বে এবং আন্দোলন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে। 🔥