নারীশক্তির জাগরণে ঝালদা স্টেশন রোড দুর্গাপূজা।
ঝালদা স্টেশন রোড সর্বজনীনের দুর্গোৎসব এবারে নারীশক্তির জাগরণ থিমে চমকে দিল।
মণ্ডপসজ্জা থেকে প্রতিমা পর্যন্ত প্রতিটি অংশে ফুটে উঠেছে নারীর শক্তি, সৃজনশীলতা ও সমাজে তাঁদের অবদান।
চারশো স্লেটে খোদাই করা হয়েছে কৃতী নারীদের নাম, পাশাপাশি দুর্গা, কালী, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর প্রতিমূর্তি মণ্ডপে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।
উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন সেনা জওয়ান ও বিশিষ্টজনেরা, যা উৎসবকে আরও গৌরবময় করেছে। এবারের পূজো শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং নারীশক্তিকে সম্মান জানানোর এক সামাজিক উদ্যোগ।
নারীশক্তির জাগরণে মণ্ডপসজ্জায় চমকে দিল ঝালদা স্টেশন রোড 🙏✨
ঝালদা শহরের স্টেশন রোড এবারের দুর্গোৎসবে এমন এক থিম উপহার দিল যা গোটা শহরকেই মুগ্ধ করেছে এবং সমাজে এক নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।
নারীশক্তির জাগরণই যে প্রকৃত মাতৃআরাধনা, সেই ভাবনাকেই কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে এবারের পূজোমণ্ডপ।
সুবর্ণজয়ন্তী অতিক্রম করে ৫২ বছরে পা দেওয়া স্টেশন রোড সর্বজনীনের দুর্গোৎসব তাই এবারে যেন ইতিহাস গড়ল।
শনিবার সন্ধ্যায় পূজার উদ্বোধন হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর একঝাঁক জওয়ানের উপস্থিতিতে, যা উৎসবকে আরও মর্যাদাপূর্ণ করে তুলেছিল।
তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ঝালদা পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল এবং এলাকার বিশিষ্টজনেরা।
এই মিলনমেলায় স্থানীয়রা যেমন গর্ব অনুভব করেছেন, তেমনি দর্শনার্থীরাও বুঝতে পেরেছেন যে পূজো মানেই শুধু আচার-অনুষ্ঠান নয়, বরং সমাজকে নতুন বার্তা দেওয়ারও একটি সোনালী সুযোগ।
এবারে সেই বার্তাই এসেছে নারীশক্তির আবাহনের মাধ্যমে। 🌸
নারীশক্তির অভিনব প্রতিফলন 🌺
এবারের পূজোয় নারীশক্তিকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে প্রতিটি অংশ।
উদ্যোক্তাদের মতে, পূজোমণ্ডপ থেকে প্রতিমা পর্যন্ত সবকিছুতেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নারীর শক্তি ও সৃষ্টিশীলতার বহিঃপ্রকাশ।
চারশো স্লেটের ওপর খোদাই করে লেখা হয়েছে দেশের কৃতী নারীদের নাম— বিজ্ঞানী, ক্রীড়াবিদ, সমাজকর্মী, শিল্পী থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রের সাফল্য অর্জনকারী নারীরা।
প্রতিটি নাম যেন সমাজের কাছে এক অনন্য অনুপ্রেরণা। মণ্ডপে প্রবেশ করলে দর্শনার্থীরা শুধু শিল্পকর্মই দেখেন না, তাঁরা অনুভব করেন নারীর মহিমার বার্তা।
প্রতিমার মূর্তিগুলিও এই ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করেছে— দুর্গা, কালী, লক্ষ্মী ও সরস্বতী দেবীর রূপে ধরা দিয়েছে নারীর জাগ্রত শক্তি, ধ্বংসের শক্তি, সম্পদের শক্তি এবং বিদ্যার শক্তি।
মণ্ডপের ভেতর ঢুকেই যে অনুভূতি তৈরি হয়, তা হলো নারীকে সম্মান না করলে সমাজ কখনও এগোতে পারে না।
দর্শনার্থীদের মতে, এই পূজোর ভাবনা তাঁদের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলেছে এবং একে অন্য সব বছরের থেকে আলাদা করে তুলেছে।
শিক্ষার আলোয় নারীর অবদান 🎓
শিক্ষা সমাজ পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শক্তি, আর সেই শিক্ষায় নারীর অবদান অনস্বীকার্য।
ঝালদা গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা অপর্ণা চট্টোপাধ্যায় তাই যথার্থই বলেছেন, “বর্তমান সময়ে নারীরা সমাজকে নতুন দিশা দেখাচ্ছেন। তাই পূজোর থিমে নারীশক্তিকেই তুলে ধরা হয়েছে।”
তাঁর এই বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে শিক্ষা ও সমাজ গঠনে নারীর ভূমিকার গুরুত্ব।
আজকের দিনে নারীরা শুধু ঘর সামলাচ্ছেন না, তাঁরা সমান তালে কাজ করছেন শিক্ষাক্ষেত্রে, বিজ্ঞান গবেষণায়, প্রশাসনে এবং কর্পোরেট জগতে।
পূজোর এই থিম সেই পরিবর্তনকেই সমাজের সামনে তুলে ধরেছে। সেনা জওয়ান মুন্না চট্টোপাধ্যায়ও উদ্যোক্তাদের এই ভাবনাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
তাঁর মতে, প্রতিটি নারীই একেকজন শক্তির প্রতীক, আর তাঁদের অবদান ছাড়া জাতির অগ্রগতি সম্ভব নয়।
তাই এই পূজো শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং নারীদের প্রতি সম্মান জানানোর এক বিশেষ উপলক্ষ হয়ে উঠেছে।
দর্শনার্থীরা মণ্ডপ দেখে যেমন আনন্দিত হচ্ছেন, তেমনি তাঁদের মনে সমাজে নারীশক্তির স্বীকৃতি নিয়ে নতুন সচেতনতার জন্ম হচ্ছে।
সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এক বিশেষ তাৎপর্য 🇮🇳
ঝালদা স্টেশন রোডের পূজায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এবারের উৎসবকে আরও গৌরবময় করে তুলেছে।
পূজার উদ্বোধনে সেনা জওয়ানদের অংশগ্রহণ কেবল অনুষ্ঠানের আয়োজনকেই সমৃদ্ধ করেনি, বরং এটির ভেতরে এক প্রতীকী বার্তা লুকিয়ে আছে।
দেশের নিরাপত্তায় যেমন সেনাদের অবদান অনস্বীকার্য, তেমনি সমাজ গঠনে নারীদের অবদানও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ।
সেনা জওয়ান ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মীরা উপস্থিত থাকায় পূজোর তাৎপর্য আরও বেড়েছে।
দর্শনার্থীরা মনে করছেন, নারীশক্তির সঙ্গে সেনাশক্তির এই মিলন আসলে দেশের প্রতি দায়িত্ব ও ত্যাগের প্রতীক।
স্থানীয়দের কেউ কেউ বলেছেন, “স্টেশন রোড সর্বজনীনের পূজো প্রতি বছরই চমক আনে, তবে এবারের ভাবনা অন্য সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।”
উৎসব মানেই আনন্দ, তবে আনন্দের পাশাপাশি যদি সমাজকে সচেতন করার বার্তাও পৌঁছে দেওয়া যায়, তবে সেটিই হয় আসল অর্জন। এবারের পূজো সেই দিক থেকে নিঃসন্দেহে সফল।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও সমাজের প্রত্যাশা ✨
পূজো কমিটির সভাপতি অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামী দিনেও তাঁরা এভাবেই নতুন ভাবনার মাধ্যমে সমাজকে চমক দিতে চান।
তাঁদের মতে, পূজো শুধু উৎসব নয়, বরং সমাজকে একত্রিত করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এবারের নারীশক্তি থিম তাই কেবল দর্শনীয় নয়, বরং শিক্ষণীয়ও।
ভবিষ্যতে তাঁরা আরও নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসবেন যাতে মানুষ শুধু আনন্দই না পান, বরং ভাবতেও শিখেন। ঝালদা পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়ালও এই উদ্যোগকে প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেন, নারীশক্তির আরাধনায় এমন উদ্যোগ সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক এবং আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।
দর্শনার্থীরাও আশা করছেন, আগামী বছরগুলোতেও স্টেশন রোড সর্বজনীন তাদের অভিনব থিমের মাধ্যমে সমাজকে আলো দেখাবে।
এমন এক সময়ে যখন সমাজে সমতা ও সম্মানের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে, তখন এই পূজো নিঃসন্দেহে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। 🌺
উপসংহার 🙌
ঝালদা শহরের স্টেশন রোড সর্বজনীনের এবারের দুর্গোৎসব স্পষ্ট করে দিয়েছে যে নারীশক্তির জাগরণই প্রকৃত মাতৃআরাধনা।
মণ্ডপসজ্জা থেকে প্রতিমা, সেনাবাহিনীর উপস্থিতি থেকে কৃতী নারীদের নাম— প্রতিটি দিকেই ধরা পড়েছে নারীর অপরিহার্য ভূমিকা।
সমাজের প্রতিটি স্তরে নারী যেমন নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছেন, তেমনি তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এখন সময়ের দাবি।
এই পূজো সেই দাবি পূরণ করেই শুধু উৎসবের আনন্দ দেয়নি, বরং সমাজে নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গিও এনে দিয়েছে।
দর্শনার্থীরা তাই মনে করছেন, এবারের পূজো তাঁদের হৃদয়ে দীর্ঘদিন গেঁথে থাকবে। ভবিষ্যতেও স্টেশন রোড সর্বজনীন এভাবেই সমাজকে নতুন বার্তা দিতে পারুক— এটাই সকলের প্রত্যাশা। 🌟