আদ্রা রেল স্টেশনে স্বচ্ছতা অভিযান ও সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২৫।

আদ্রা রেলওয়ে ডিভিশনে পালিত হলো স্বচ্ছতাই সেবা ২০২৫ কর্মসূচি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অঙ্কন, প্রবন্ধ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বসেছিল গানের আসর। 

রেল কর্মী, আরপিএফ ও যাত্রীরা মিলিত কণ্ঠে পরিচ্ছন্নতার ডাক ছড়িয়ে দিলেন সুরের মাধ্যমে। একইসঙ্গে রেল কলোনি, স্টেশন ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চালানো হয় নিবিড় পরিচ্ছন্নতা অভিযান। 

এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা তৈরি, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই উন্নয়নের পথে সমাজকে উদ্বুদ্ধ করা। 

গান, সংস্কৃতি ও পরিচ্ছন্নতার মিলিত আবহ এক অনন্য উদাহরণ গড়ল আদ্রা রেল স্টেশন।


adra rail station swachhata utsab 2025

এ কী কাণ্ড আদ্রায় প্ল্যাটফর্মেই বসলো গানের আসর 🎶✨

স্বচ্ছতাই সেবা ২০২৫ আদ্রা রেল ডিভিশনের অভিনব উদ্যোগ 🌿

আদ্রা রেল ডিভিশনের নাম শুনলেই সাধারণত চোখের সামনে ভেসে ওঠে ব্যস্ত স্টেশনের চিত্র, যেখানে যাত্রীরা ছুটছেন ট্রেন ধরার জন্য, হুইসেলের আওয়াজে কাঁপছে বাতাস, আর প্রতিটি মুহূর্ত যেন গতির ছন্দে ভরপুর। 

কিন্তু এই চেনা দৃশ্য হঠাৎই বদলে গেল শনিবারের দিনে। কারণ, দেশজুড়ে পালিত সর্বভারতীয় স্বচ্ছতা অভিযান “স্বচ্ছোৎসব ২০২৫”-এর অংশ হিসেবে আদ্রা রেল ডিভিশন আয়োজন করলো একগুচ্ছ অনন্য কর্মসূচি। 

কর্মসূচির মধ্যে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ছাত্রছাত্রীদের প্রতিযোগিতা, পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং সবচেয়ে বড় আকর্ষণ—স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বসানো হলো গানের আসর। 

এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। যাত্রীরা যেখান দিয়ে প্রতিদিন তাড়াহুড়ো করে যাতায়াত করেন, সেই জায়গাটিই হয়ে উঠলো গান, সুর আর আবেগের মঞ্চ। 

১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত চলা এই দেশব্যাপী উদ্যোগকে কেন্দ্র করে আদ্রার প্রতিটি প্রান্তে যেন এক নবজাগরণের আবহ তৈরি হলো।


প্রতিযোগিতার রঙে রঙিন শিক্ষাঙ্গন 🎨📖

“স্বচ্ছতাই সেবা ২০২৫”-এর অন্যতম দিক ছিল ছাত্রছাত্রীদের সম্পৃক্ততা। আদ্রা ডিভিশনের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ থেকে বহু শিক্ষার্থী অংশ নেয় নানা প্রতিযোগিতায়। 

প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিল অঙ্কন, প্রবন্ধ রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতার বিষয়কে কেন্দ্র করে নতুন প্রজন্ম নিজেদের ভাবনা প্রকাশ করেছে। 

ছোট ছোট হাতে আঁকা ছবিগুলোয় ফুটে উঠেছে পরিচ্ছন্ন শহর ও গ্রামের কল্পনা, সবুজ পৃথিবীর আশা এবং প্লাস্টিকমুক্ত সমাজের স্বপ্ন। 

কেউ এঁকেছে ধোঁয়ামুক্ত রেলস্টেশন, কেউবা অঙ্কন করেছে ফুলে ভরা বাগান ও ঝকঝকে পরিচ্ছন্ন রাস্তা। 

প্রবন্ধ রচনায় শোনা গেছে সচেতনতার শক্তিশালী সুর—কীভাবে পরিচ্ছন্নতা মানুষের স্বাস্থ্য, সমাজ এবং পরিবেশ রক্ষায় অপরিহার্য। 

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা যুক্তি তুলে ধরেছে যে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। 

এই প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা বুঝেছে যে পরিচ্ছন্নতা শুধু ব্যক্তিগত দায়িত্ব নয়, বরং সামাজিক ও জাতীয় দায়িত্বও। 

এমন আয়োজনের মাধ্যমে ছোটবেলা থেকেই তাদের মনে গেঁথে দেওয়া হলো দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়ার পাঠ, যা ভবিষ্যতে সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


প্ল্যাটফর্মে সুরের জাদু ও সাংস্কৃতিক আসর 🎶✨

সবচেয়ে আলোচিত আয়োজন ছিল আদ্রা রেলওয়ে স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত সংগীত উৎসব। 

সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পুরো প্ল্যাটফর্ম জুড়ে জমে ওঠে গানের আসর। কেবল যাত্রীরাই নয়, রেল কর্মী, রেল সুরক্ষা বাহিনীর (RPF) সদস্য এবং স্থানীয় মানুষজনও এতে অংশ নেন। 

প্রত্যেকে একসঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গান গেয়ে ছড়িয়ে দেন পরিচ্ছন্নতার বার্তা। গান যখন শুধু বিনোদন নয়, সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তখন তার প্রভাব বহুগুণে বেড়ে যায়। 

প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক যাত্রী অবাক হয়ে শোনেন এই উদ্যোগ। কেউ থেমে যান, কেউ ছবি তোলেন, কেউ আবার নিজেই সুরে সুর মেলাতে শুরু করেন। 

ব্যস্ততার চাপে অভ্যস্ত স্টেশনের পরিবেশ সেদিন রূপ নিয়েছিল উৎসবের মেলায়। ছোটদের কণ্ঠে গান, বড়দের গলায় ছড়া—সব মিলিয়ে প্ল্যাটফর্মে যেন বেজে ওঠে নতুন দিনের ডাক। 

গানই যে মানুষের হৃদয়ে সবচেয়ে দ্রুত পৌঁছে যায়, তার প্রমাণ রাখল এই অনুষ্ঠান। সত্যিই, সংস্কৃতির মাধ্যমে সমাজকে সচেতন করার চেয়ে কার্যকরী পথ আর কী হতে পারে!


রেল কলোনি ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিবিড় পরিচ্ছন্নতা অভিযান 🧹

শুধু গান-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ ছিল না আয়োজন। সমান্তরালে চলেছে আদ্রা রেল ডিভিশনের নানা এলাকায় নিবিড় পরিচ্ছন্নতা অভিযান। 

রেল কলোনি, বিভিন্ন স্টেশন, রেলপথ এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সকাল থেকেই শুরু হয় ঝাড়ু দেওয়া, আবর্জনা পরিষ্কার করা ও প্লাস্টিকমুক্ত করার উদ্যোগ। 

রেল কর্মচারীরা নিজেরা হাত লাগিয়েছেন, স্থানীয় বাসিন্দারা যোগ দিয়েছেন, এমনকি যাত্রীরাও সহযোগিতা করেছেন। 

একসঙ্গে কাজ করার আনন্দ আর দায়িত্ববোধ যেন সবার মধ্যে নতুন উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলেছে। 

কেউ ঝাড়ু হাতে নিচ্ছেন প্ল্যাটফর্ম পরিষ্কার করার দায়িত্ব, কেউ আবার আশপাশের রাস্তাঘাট ঝকঝকে করে তুলতে কাজ করছেন। 

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে যাতে ময়লা-আবর্জনা জমে না থাকে, রোগীদের জন্য পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত হয়। 

এই উদ্যোগে সবার কাছে একটি বার্তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে—পরিচ্ছন্নতা একদিনের কাজ নয়, বরং প্রতিদিনের অভ্যাস হতে হবে। 

পরিচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যে বড় হওয়া প্রজন্মই পারে সত্যিকারের উন্নত সমাজ গড়ে তুলতে। তাই এই অভিযান শুধু এক দিনের প্রদর্শনী নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের সূচনা।


রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও ভবিষ্যৎ লক্ষ্য 🎯

আদ্রা রেল ডিভিশনের কর্তৃপক্ষ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য কেবল মাত্র একদিনের পরিচ্ছন্নতা অভিযান নয়। 

তাদের মূল লক্ষ্য হলো দীর্ঘমেয়াদি সচেতনতা তৈরি করা, যাতে ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ—সবাই বুঝতে পারে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ কতটা জরুরি। 

কর্তৃপক্ষ বলেছে, রেল কেবল পরিবহনের মাধ্যম নয়, সমাজ গঠনের অন্যতম শক্তিও বটে। 

তাই তারা চাইছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রতিযোগিতা ও অভিযানের মাধ্যমে মানুষের মনে এমন বার্তা পৌঁছে দিতে যা সহজে ভোলা যায় না। 

পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিচ্ছন্নতা যে অপরিহার্য, এই সত্যকে মানুষের জীবনে গেঁথে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। 

এছাড়াও রেল কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এ ধরনের কর্মসূচি করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। 

তাদের বিশ্বাস, যখন সংস্কৃতি ও দায়িত্ববোধ একসঙ্গে কাজ করে, তখন সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন নিশ্চিত হয়। 

এ ধরনের উদ্যোগ কেবল পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব শেখায় না, মানুষকে অনুপ্রাণিত করে বাস্তব জীবনে সেই শিক্ষা কাজে লাগাতে।


সমাপ্তি ভাবনা 🌟

আদ্রা রেল ডিভিশনের এই অনন্য আয়োজন প্রমাণ করে দিয়েছে যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী পথ হলো সংস্কৃতি, সংগীত এবং শিল্পকে সঙ্গে নেওয়া। 

পরিচ্ছন্নতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বার্তাকে যখন গান, অঙ্কন, প্রবন্ধ ও বিতর্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তখন তা মানুষের হৃদয়ে অনেক গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। 

আদ্রার প্ল্যাটফর্মে বসানো সেই গানের আসর শুধু একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, এটি ছিল মানুষের মনে দায়িত্ববোধ জাগানোর এক মহান উদ্যোগ।

আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত এই ধরনের উদ্যোগ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের আশপাশ পরিষ্কার রাখা এবং অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করা। 

পরিচ্ছন্ন ভারত গড়ার স্বপ্ন কেবল সরকারের নয়, প্রতিটি নাগরিকের। 

তাই ছোট ছোট উদ্যোগ, যেমন নিজের ঘর, রাস্তা বা কর্মস্থল পরিষ্কার রাখা, একসময় মিলেমিশে তৈরি করবে এক স্বচ্ছ, সুন্দর ও সুস্থ সমাজ। 

আদ্রার প্ল্যাটফর্মে গাওয়া সেই গান যেন আমাদের প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয়—

 👉 “পরিচ্ছন্নতা মানে শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, এটি আমাদের সুস্থ জীবন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অঙ্গীকার।”


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url