পারবেলিয়ায় গুরু গ্রন্থসাহেবের প্রথম প্রকাশ উৎসব।
পারবেলিয়ায় শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ গুরু গ্রন্থসাহেবের প্রথম প্রকাশ দিবস উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত। শোভাযাত্রা, ভজন, লঙ্গর ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান সবার মন জয় করল।
🙏 পারবেলিয়ায় গুরু গ্রন্থসাহেবের প্রথম প্রকাশ উৎসব মহা আড়ম্বরে পালিত 🎉
নিতুড়িয়া, ৩১ আগস্ট:
শিখ ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ গুরু গ্রন্থসাহেবের প্রথম প্রকাশ দিবস পারবেলিয়ায় মহা সমারোহে পালিত হলো। রবিবার সকাল থেকেই পারবেলিয়া গুরুবাণীর সুরে মুখরিত হয়ে ওঠে।
ধর্মপ্রাণ শিখ সম্প্রদায়ের ভক্তরা এদিন ভোরবেলা থেকেই গুরুদ্বারে সমবেত হন। বিশেষ প্রার্থনা, শোভাযাত্রা, ভজন সংগীত এবং লঙ্গরের মাধ্যমে দিনটি উৎসবের রূপ নেয়।
এটি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং ভ্রাতৃত্ব, সমতা এবং মানবতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। প্রতিবছরের মতো এবারও এই দিনটি ঘিরে শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিল প্রবল উচ্ছ্বাস।
📜 শোভাযাত্রা দিয়ে উৎসবের সূচনা
রবিবার সকালে পারবেলিয়া বাজারের গুরুদ্বার থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার সূচনা হয়। শোভাযাত্রায় প্রায় ২০০ জন শিখ ভক্ত অংশ নেন।
সবার মাথায় রঙিন পাগড়ি, হাতে ধর্মীয় পতাকা। ‘ওয়াহে গুরু’ ধ্বনি, ভজন সংগীত আর ঢোলের শব্দে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পারবেলিয়ার রাস্তা।
শোভাযাত্রাটি ডিসেরগড় ঘাট পর্যন্ত গিয়েছিল। সেখানে গুরু গ্রন্থসাহেবকে সম্মান জানিয়ে ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পথে পথে স্থানীয় মানুষ শোভাযাত্রা দেখে মুগ্ধ হন এবং অনেকেই ভক্তদের সঙ্গে ছবি তোলেন।
এই দৃশ্যটি যেন ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ, কারণ এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
📖 গুরু গ্রন্থসাহেবের ঐতিহাসিক গুরুত্ব
গুরু গ্রন্থসাহেব শিখ ধর্মের মূল ভিত্তি। এটি শুধু একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং শিখ সম্প্রদায়ের কাছে এটি চিরন্তন গুরু।
উৎসব কমিটির প্রধান মলকিত সিং বলেন—
👉 “১৬০৪ সালের এই দিনেই গুরু গ্রন্থসাহেবের প্রথম প্রকাশ হয়। তাই এই দিনটি আমাদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র।”
এই দিনটি ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে, কারণ এটি আধ্যাত্মিক জ্ঞান, মানবতা ও সমতার বার্তা বহন করে। শিখ গুরুদের শিক্ষা আজও সমাজে সমান প্রাসঙ্গিক।
প্রতিবছর পারবেলিয়ায় এই উৎসব আয়োজন করা হয়, যা শিখদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
🎶 ভজন সংগীত ও ধর্মীয় পরিবেশ
সারাদিন জুড়ে ভজন পরিবেশনা চলে গুরুদ্বার এবং মঞ্চে। স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা গুরুবাণী পাঠ করে এবং কীর্তন পরিবেশন করে।
উপস্থিত ভক্তরা ভক্তিমূলক গানে মেতে ওঠেন। ‘ওয়াহে গুরু’ ধ্বনিতে ভরে যায় বাতাস।
এই পরিবেশ সবার মনে আধ্যাত্মিক শান্তি ও আনন্দের অনুভূতি জাগায়। ভক্তরা বলেন, “এই ধরনের অনুষ্ঠান আমাদের ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত করে।”
শুধু শিখ ধর্মাবলম্বী নয়, এলাকার অন্য মানুষরাও এই সংগীত উপভোগ করেন এবং সবাইকে একত্রিত হতে দেখা যায়।
🥘 লঙ্গর – সমতার প্রতীক
শিখ ধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো লঙ্গর (সামূহিক ভোজন)। পারবেলিয়ার এই উৎসবেও লঙ্গরের আয়োজন করা হয়। সবার জন্য খোলা থাকে এই ভোজনের ব্যবস্থা।
মেনুতে ছিল— রুটি, ডাল, সবজি এবং মিষ্টি। ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে সবাই একসাথে বসে আহার করেন। ভক্তদের কথায়, “এই লঙ্গর শুধু খাবার নয়, এটি সমতার বার্তা।”
এদিন লঙ্গরে শত শত মানুষ অংশ নেন। কেউ ধর্ম দেখে নয়, বরং সবাইকে সমানভাবে পরিবেশন করা হয়। এটাই শিখ ধর্মের সার্বজনীন মানবতার বার্তা।
👥 ভক্তদের উচ্ছ্বাস ও অংশগ্রহণ
এবারের অনুষ্ঠানে শুধু পারবেলিয়া নয়, বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় এক হাজারের বেশি শিখ ভক্ত এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিল প্রবীণ, যুবক, নারী ও শিশু। সবার মুখে ছিল আনন্দের ঝলক।
রঙিন পাগড়ি, হাসিমুখ আর ভক্তির আবহে অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। স্থানীয় মানুষও ভক্তদের আতিথেয়তায় এগিয়ে আসেন।
অনেকে বলেন, “প্রতিবছর এই উৎসবের জন্য আমরা অপেক্ষা করি। এদিন পারবেলিয়া একেবারে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।”
📅 কেন পালিত হয় এই উৎসব?
এই দিনটি পালিত হয় কারণ—
✔️ ১৬০৪ সালের এই দিনে গুরু গ্রন্থসাহেবের প্রথম প্রকাশ হয়েছিল।
✔️ শিখ ধর্মের মূল শিক্ষা, সমতা ও মানবতার বার্তা প্রচারের জন্য।
✔️ শিখ গুরুদের স্মরণ ও তাঁদের শিক্ষা নতুন প্রজন্মকে জানানো।
এই কারণেই প্রতি বছর শিখ সম্প্রদায় এই দিনটি বিশেষভাবে পালন করে থাকে।
🌟 উৎসবের মূল আকর্ষণ
✔️ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।
✔️ ভজন ও কীর্তন।
✔️ ধর্মীয় আলোচনা।
✔️ লঙ্গরের আয়োজন।
✔️ ভক্তদের বিপুল সমাগম।
🙏 গুরু গ্রন্থসাহেবের শিক্ষা – আজকের সমাজে প্রাসঙ্গিকতা
গুরু গ্রন্থসাহেব শেখায়—
-
সমতা।
-
সততা।
-
ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবতা।
আজকের সমাজে এই শিক্ষাগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
✅ শেষ কথা
পারবেলিয়ার এই গুরু গ্রন্থসাহেবের প্রথম প্রকাশ উৎসব শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সমাজে ঐক্য, ভালোবাসা এবং মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ যেমন ভক্তি ও আনন্দে অংশ নেন, তেমনি অন্য ধর্মের মানুষও এই উৎসবের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
এই ধরনের অনুষ্ঠান আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ধর্ম শুধু বিশ্বাস নয়, এটি সমতার, সম্প্রীতির এবং মানবতার এক মজবুত সেতুবন্ধন।
পারবেলিয়ার আকাশে যে সুর বাজল, যে ভ্রাতৃত্বের ছবি আঁকা হলো, তা সবার হৃদয়ে চিরকাল অমলিন হয়ে থাকবে।
আমরা আশা করি, আগামী বছর আরও বড় পরিসরে এই উৎসব উদযাপন করা হবে এবং আরও বেশি মানুষ এতে অংশ নেবেন। কারণ ভালোবাসা ও ঐক্য ছড়িয়ে দেওয়ার নামই উৎসব। 🙏✨