চিতরা গ্রামে ধানের চারা রোপণ করে রাস্তা মেরামতের দাবিতে প্রতিবাদ।

চিতরা গ্রামে বেহাল রাস্তার কারণে গ্রামবাসীর ক্ষোভ। সিপিআইএম ধানের চারা রোপণ করে অভিনব প্রতিবাদ জানাল। জানুন বিস্তারিত।


chitra gram road protest

চিতরা গ্রামে রাস্তা মেরামতের দাবিতে ধানের চারা রোপণ 🌾 – গ্রামবাসীর প্রতিবাদ


📍 কোথায় ঘটেছে এই ঘটনা?

এই ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়া জেলার পাড়া ব্লকের উদয়পুর জয়নগর গ্রাম পঞ্চায়েতের চিতরা গ্রামে। 

বহু বছর ধরে গ্রামের প্রধান রাস্তা বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। গর্তে ভর্তি রাস্তা, বর্ষাকালে কাদা আর জলে ভরা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা গ্রামের মানুষের জন্য এক দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

গ্রামবাসীরা একাধিকবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি। শনিবার সকাল ১০টার সময় গ্রামবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। 

তারা সিদ্ধান্ত নেয় এবার ভিন্নভাবে দাবি জানানো হবে। তাই সিপিআইএম নেতৃত্বে তারা রাস্তায় ধানের চারা রোপণ করে অভিনব প্রতিবাদ করল। 

এই দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় এবং প্রশাসনের উদাসীনতার বিষয়টি সামনে আসে।


🌾 কেন গ্রামবাসীরা এমন অভিনব প্রতিবাদ করল?

গ্রামবাসীরা বলছে – বছরের পর বছর রাস্তা মেরামতের দাবি করা হয়েছে, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।  

বর্ষাকালে রাস্তা জলে ভেসে যায়, কাদা জমে যায়, এমনকি গাড়ি চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। 

মানুষ হাঁটতে পর্যন্ত ভয় পায়। গর্ভবতী মহিলা, ছাত্রছাত্রী, অসুস্থ রোগীদের জন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। 

এই কারণে গ্রামবাসীরা বুঝিয়ে দিল যদি রাস্তা মেরামত না হয়, তবে এটিকে ধানক্ষেত বানিয়ে দেওয়া হোক। 

তাই তারা রাস্তায় ধানের চারা লাগাল, যেন প্রশাসন লজ্জা পায় এবং দ্রুত কাজ শুরু করে। 

এই অভিনব প্রতিবাদে গ্রামের নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী সকলে অংশ নেয়। এটি শুধু রাস্তার দাবিই নয়, মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই।


✊ কারা নেতৃত্ব দিল এই আন্দোলনে?

এই প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত করে সিপিআইএম। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন –

  • সিপিআইএম জেলা কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য সুনীল মাহাত।

  • সারা ভারত কৃষক সভার জেলা নেতা বাসুদেব মন্ডল।

  • অঞ্চল কমিটির সম্পাদক প্রদীপ মাহাত।

তাদের বক্তব্য স্পষ্ট – "রাস্তার দাবি ন্যায্য। প্রশাসন যতদিন না কাজ শুরু করছে, আন্দোলন চলবে।" গ্রামবাসীরাও জানিয়েছে, যদি দ্রুত কাজ না হয়, তারা বড় আন্দোলন করবে। এই বিক্ষোভে গ্রামের শতাধিক মানুষ অংশ নেয়। তারা স্লোগান দেয় – "রাস্তা চাই, উন্নয়ন চাই"। 

গ্রামে উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা খরচের দাবি থাকলেও বাস্তবে কাজ না হওয়ায় মানুষের ক্ষোভ চরমে উঠেছে।


👤 গ্রাম উপপ্রধানের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

চিতরা গ্রামের উপপ্রধান নিতাই চন্দ্র কর্মকার জানিয়েছেন – "অবিলম্বে রাস্তার মেরামতের কাজ শুরু করা হবে। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।" 

তবে গ্রামবাসীরা এটিকে আশ্বাস হিসেবেই দেখছে। তারা বলছে – "এটা প্রথমবার নয়। এর আগেও অনেকবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি।" 

এই কারণে মানুষ চায় এখন বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যাক। উপপ্রধানের এই বক্তব্য আন্দোলন কিছুটা শান্ত করলেও, মানুষ সতর্ক আছে। 

তারা ঘোষণা করেছে – "যদি দ্রুত কাজ না হয়, তবে আবার প্রতিবাদ হবে।" এই পরিস্থিতি প্রমাণ করছে গ্রামের উন্নয়নে কত বড় গাফিলতি চলছে।


📜 রাস্তার অবস্থা কতটা খারাপ?

চিতরা গ্রামের এই রাস্তাটি পাড়া থেকে উদয়পুর পর্যন্ত সংযোগকারী প্রধান রাস্তা। এটি গ্রামের কৃষকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বছরের পর বছর মেরামত হয়নি। ফলে –

  • গর্তে ভর্তি রাস্তা।

  • বর্ষায় জল জমে রাস্তা ডুবে যায়।

  • অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত ঢুকতে পারে না।

  • স্কুলে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের ভয়াবহ কষ্ট হয়।

গ্রামবাসী বলছে – "রাস্তা এমন হয়ে গেছে, গাড়ি তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে যেতেও কষ্ট হয়।" এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে গ্রামের মানুষ চরম বিপদে পড়বে। প্রশাসনও জানে সমস্যার কথা, কিন্তু কাজ শুরু হয়নি।


🔥 গ্রামবাসীর দাবিগুলি কী কী?

গ্রামবাসীরা দাবি করেছে – 

✔️ অবিলম্বে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু করতে হবে।
✔️ স্থায়ী সমাধান করতে হবে, শুধু মাটি ফেলে গর্ত ভরলেই চলবে না।
✔️ কাজের মান ঠিক রাখতে হবে।
✔️ কাজ শুরুর তারিখ প্রশাসনকে জানাতে হবে।

গ্রামবাসীরা স্পষ্ট বলেছে – "আমরা আর প্রতিশ্রুতি চাই না, আমরা কাজ চাই।" যদি এই দাবি পূরণ না হয়, আন্দোলন আরও বড় আকার নেবে।


🗣️ মানুষের মুখে মানুষের কথা

একজন কৃষক বললেন – "রাস্তা যদি না হয়, আমরা সত্যিই ধান চাষ করব। রাস্তাটা এখন চাষের জমির মতো হয়ে গেছে।"
এক গৃহবধূ বললেন – "বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যেতে ভয় হয়। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য তো অবস্থা ভয়াবহ।"
এক ছাত্রের বক্তব্য – "আমরা চাই সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিক।"
এই কথাগুলি প্রমাণ করে রাস্তার গুরুত্ব কতটা।


📢 প্রশাসন কি এবার জাগবে?

এই প্রতিবাদ ভাইরাল হওয়ায় এখন প্রশাসনের উপর চাপ তৈরি হয়েছে। বিডিও অফিসে বারবার অভিযোগ জানানো হলেও কোনও ফল হয়নি। এখন দেখা যাক আশ্বাস কতটা বাস্তবে পরিণত হয়। গ্রামবাসীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে – "এবার না হলে আন্দোলন আরও বড় হবে।"


শেষ কথা

চিতরা গ্রামে ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ শুধু একটি খবর নয়, এটি গ্রামীণ ভারতের বাস্তব চিত্র। 

যেখানে রাস্তার মতো মৌলিক চাহিদার জন্য মানুষকে আন্দোলনে নামতে হয়, সেটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। 

এই ঘটনাটি প্রমাণ করে, সাধারণ মানুষ যখন একজোট হয়, তখন তারা নিজেদের ন্যায্য দাবি আদায় করতে পারে। 

এখন প্রশ্ন প্রশাসনের কাছে – কতদিন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে অপেক্ষায় রাখা হবে?

👉 চিতরা গ্রামবাসী বার্তা দিয়েছে – উন্নয়ন চাই, প্রতিশ্রুতি নয়।
👉 যদি রাস্তা মেরামতের কাজ দ্রুত শুরু না হয়, আন্দোলন আরও বড় হবে।

এখন সময় এসেছে কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করার।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url