পুরুলিয়ায় ডায়রিয়ার দাপট: মানবাজার ও বলরামপুরে আতঙ্ক।
পুরুলিয়ার মানবাজার ও বলরামপুরে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। অন্তত ২৬ জন আক্রান্ত, এক বৃদ্ধের মৃত্যু। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর সতর্ক।
পুরুলিয়ায় ডায়রিয়ার দাপট: মানবাজার ও বলরামপুরে আতঙ্ক ছড়াল 🚨
পুরুলিয়া, ২৯ আগস্ট: পুরুলিয়া জেলায় ফের ডায়রিয়ার থাবা। মানবাজার-১ ব্লকের তাঁতিঘটু গ্রাম ও বলরামপুর থানার তেতলো গ্রামে ডায়রিয়ার সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
এই ঘটনার জেরে দুই গ্রামে আতঙ্কের পরিবেশ। এখন পর্যন্ত অন্তত ২৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন, এবং একজন বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর মিলেছে।
মানবাজারে ডায়রিয়ার সংক্রমণ 🏥
শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত খবর অনুযায়ী মানবাজার-১ নং ব্লকের তাঁতিঘটু গ্রামে ১৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ওই বৃদ্ধের নাম লম্বস হেমব্রম (৭৭)। তাঁর মৃত্যুতে গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমেছে।
ঘটনার খবর পেয়ে মানবাজার-১ ব্লকের বিডিও দেবাশীষ ধর ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সবিতা মুদি আক্রান্ত গ্রামে ছুটে যান।
তাঁরা মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং অসুস্থদের চিকিৎসার ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেন।
অসুস্থদের চিকিৎসার অগ্রগতি:
-
বেশিরভাগ রোগীকে মানবাজার হাসপাতাল ও পুঞ্চা ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
-
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল।
-
স্বাস্থ্য দফতর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ORS সলিউশন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বিলি করছে।
বলরামপুরেও ডায়রিয়ার প্রভাব ⚠️
মানবাজারের পর বলরামপুর থানার তেতলো গ্রামে ডায়রিয়া ছড়িয়েছে। ১২ জন আক্রান্ত হয়েছেন, এর মধ্যে ৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বাড়িতে চিকিৎসাধীন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পানীয় জলের মান খারাপ এবং দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দুর্বল। বর্ষার সময় এই সমস্যা আরও প্রকট হয়।
প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের তৎপরতা 🏛️
ঘটনার পর জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর জরুরি বৈঠক করে। নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ:
✔️ আক্রান্ত এলাকায় অতিরিক্ত স্বাস্থ্যকর্মী মোতায়েন।
✔️ গ্রামে ORS ও ক্লোরিন ট্যাবলেট বিতরণ।
✔️ প্রতিটি পরিবারকে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
✔️ গ্রামে নলকূপের জল পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশোক বিশ্বাস জানান—
“দুটি জায়গায় ডায়রিয়া ছড়িয়েছে। চিকিৎসা চলছে, পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে।”
ডায়রিয়া কেন ছড়ায়? 🔍
ডায়রিয়া সাধারণত নিম্নলিখিত কারণে হয়—
-
দূষিত জল পান করা।
-
অপরিষ্কার খাবার খাওয়া।
-
স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি না মানা।
-
বর্ষাকালে জল দূষণ।
চিকিৎসকরা বলছেন:
বর্ষাকালে নোংরা জল ব্যবহার এবং অপরিষ্কার পরিবেশের কারণে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় ✅
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি কয়েকটি সাধারণ নিয়ম মানা হয়—
✔ শুধু ফুটানো জল পান করুন।
✔ হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
✔ ORS ও পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করুন।
✔ অপরিষ্কার খাবার খাবেন না।
✔ প্রথমে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ডায়রিয়ার চিকিৎসা পদ্ধতি 🏥
ডায়রিয়ার চিকিৎসা সাধারণত দুটি ধাপে করা হয়—
-
পানিশূন্যতা দূর করা:
-
ORS সলিউশন খাওয়া।
-
পর্যাপ্ত সেদ্ধ জল পান।
-
-
প্রয়োজনে ওষুধ সেবন:
-
অ্যান্টিবায়োটিক (ডাক্তারের পরামর্শে)।
-
জ্বর কমানোর ওষুধ।
-
ইলেক্ট্রোলাইট সলিউশন।
-
গুরুতর ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি প্রয়োজন।
প্রশাসনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা 🛑
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর বর্ষার সময় পুরুলিয়ার গ্রামীণ এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন—
✔ পরিষ্কার পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা।
✔ গ্রামে নিকাশী ব্যবস্থা উন্নত করা।
✔ গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতা।
✔ জল পরীক্ষা ও ক্লোরিনেশনের স্থায়ী ব্যবস্থা।
গ্রামবাসীদের প্রতিক্রিয়া 😟
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন,
“পানীয় জলের মান অনেকদিন ধরেই খারাপ। বারবার অভিযোগ করেও সমাধান হয়নি।”
অনেকে বলছেন, এখন জল ফুটিয়ে খাচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সমাধান না হলে একই সমস্যা আবার ঘটতে পারে।
সংক্ষেপে মূল তথ্য:
-
অঞ্চল: পুরুলিয়ার মানবাজার-১ ও বলরামপুর।
-
আক্রান্ত: ২৬ জন (মানবাজারে ১৪, বলরামপুরে ১২)।
-
মৃত্যু: ১ জন বৃদ্ধ।
-
অবস্থা: চিকিৎসা চলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
-
কারণ: নোংরা জল, অপরিষ্কার পরিবেশ।
✅ শেষ কথা 📝
পুরুলিয়ার মানবাজার ও বলরামপুরে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল যে পরিষ্কার পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা কতটা জরুরি।
প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান না হলে এই সমস্যা আবার ঘটবে।
আমাদের সকলের উচিত—
✔ সচেতন থাকা।
✔ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
✔ সঠিক পানীয় জল ব্যবহার করা।
আপনার কি মনে হয়, পুরুলিয়ার গ্রামীণ এলাকায় পানীয় জলের সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব? আপনার মতামত আমাদের জানাতে কমেন্ট করুন।
