পদ্মশ্রী দুখু মাঝির গাছ লাগানোর গল্প ও পাকা বাড়ির স্বপ্ন।
🌱🏠পুরুলিয়ার গাছ দাদু দুখু মাঝি, যিনি পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন গাছ লাগানোর জন্য, আজও ভাঙা মাটির বাড়িতে বাস করেন। জানুন তাঁর জীবনের গল্প, সংগ্রাম এবং পাকা বাড়ির স্বপ্ন। 🌳🏡
গাছ দাদুর সবুজ স্বপ্ন 🌿
পুরুলিয়ার লাল মাটির দেশে, অযোধ্যা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে, একজন মানুষের জীবন যেন একটি জীবন্ত কাহিনি। তিনি দুখু মাঝি, যিনি স্থানীয় মানুষের কাছে ‘গাছ দাদু’ নামে পরিচিত। 🌱
১৫ বছর বয়স থেকে তিনি গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেছিলেন, এবং আজ ৮০ বছর বয়সেও তাঁর এই নেশা অটুট।
তাঁর হাতে লাগানো হাজার হাজার গাছ আজ পুরুলিয়ার রুক্ষ প্রান্তরে সবুজের ছায়া দিচ্ছে। 🌳
তাঁর এই অবদানের জন্য ২০২৪ সালে ভারত সরকার তাঁকে দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী’ প্রদান করেছে। 🏅
কিন্তু এই গল্প শুধুই সাফল্যের নয়, এটি একজন মানুষের সংগ্রাম, ত্যাগ এবং সাধারণ জীবনের গল্প।
দুখু মাঝি আজও তাঁর স্ত্রী এবং বিশেষভাবে সক্ষম ছোট ছেলের সঙ্গে একটি ভাঙা মাটির বাড়িতে বাস করেন। 🏚️
তাঁর ঘরের এক কোণে ঝুলছে পদ্মশ্রী পুরস্কার, কিন্তু তাঁর হৃদয়ে রয়েছে একটি সাধারণ স্বপ্ন—একটি পাকা বাড়ি। 🏡
কেন গাছ লাগানো? 🌲
দুখু মাঝির গাছ লাগানোর গল্প শুরু হয় তাঁর কৈশোরে। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি বুঝেছিলেন, গাছ মানুষের জন্য অক্সিজেনের উৎস।
তাঁর কথায়, “গাছ না লাগালে বাঁচব কীভাবে? অক্সিজেন দেয় গো, অক্সিজেন।” 💨 এই সরল উপলব্ধি থেকেই তিনি শুরু করেন তাঁর সবুজ অভিযান।
মাঠে, ঘাটে, শ্মশানে—যেখানেই ফাঁকা জায়গা দেখতেন, সেখানেই গাছের চারা পুঁতে দিতেন। 🌱
তিনি শুধু গাছ লাগিয়েই ক্ষান্ত হননি। প্রতিটি গাছের পরিচর্যা করতেন, শ্মশান থেকে পোড়া কাঠ সংগ্রহ করে বেড়া তৈরি করতেন যাতে গাছগুলো রক্ষা পায়। 🌳
তাঁর লাগানো গাছের মধ্যে বেশিরভাগই বট, আম, জাম—যেগুলো আজ পুরুলিয়ার পথিকদের ছায়া দেয়, ফল দেয়।
তিনি বলেন, “একটা গাছ কাটলে পাঁচটা গাছ লাগাবে, তাহলে অক্সিজেন পাবে। গাছ কাটা মানে একটা জীব কাটা।” 😔
পদ্মশ্রী সম্মান: স্বীকৃতি এবং গর্ব 🏅
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দুখু মাঝির নাম পদ্মশ্রী পুরস্কারের জন্য ঘোষণা করা হয়। এপ্রিলে দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাত থেকে তিনি এই সম্মান গ্রহণ করেন।
🏛️ তাঁর এই কৃতিত্বে পুরুলিয়ার মানুষ গর্বিত। স্থানীয়রা বলেন, “দুখু দাদু আমাদের এলাকার গর্ব।” 😊
পদ্মশ্রী পাওয়ার পর দুখু মাঝি বলেছিলেন, “স্বপ্নেও ভাবিনি গাছ লাগিয়ে এই সম্মান পাব। তরুণ প্রজন্ম এগিয়ে আসুক, সবাই মিলে আরও গাছ লাগাই।” 🌿
তাঁর এই আহ্বানে অনেকেই উৎসাহিত হয়েছেন। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন তাঁকে ‘ইলেকশন আইকন’ হিসেবেও নিয়োগ করেছে, যাতে তিনি মানুষকে গাছ লাগানোর বার্তা আরও বেশি করে পৌঁছে দিতে পারেন। 🗳️
ভাঙা বাড়ির দুঃখ 😔
দুখু মাঝির জীবনের সবচেয়ে হৃদয়স্পর্শী অংশ তাঁর সংগ্রাম। তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কার পেলেও তাঁর জীবনে দুঃখ এখনও রয়ে গেছে।
তিনি, তাঁর স্ত্রী এবং বিশেষভাবে সক্ষম ছোট ছেলে একটি ভাঙা মাটির বাড়িতে বাস করেন। 🏚️ চালে টালি আর ত্রিপল দিয়ে ঢাকা, কোনোরকমে দিন চলে তাঁদের। তিনি বলেন, “আমি শুধু একটি পাকা বাড়ি চাই।” 😞
সরকারের তরফে তাঁর নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার একটি বাড়ি দেওয়া হয়েছিল। 🏠 কিন্তু সেই বাড়িতে তাঁর বড় ছেলে, তাঁর স্ত্রী এবং চার সন্তান থাকেন।
দুখু মাঝি নিজের ইচ্ছায় সেই বাড়ি ছেলের পরিবারকে দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওদের বাড়িটা দিয়ে দিয়েছি, আমরা এখানেই থাকি।” 😊
তবে তিনি এখন প্রশাসনের কাছে আরও একটি পাকা বাড়ির জন্য আবেদন করেছেন।
সরকারি সুবিধা এবং সমর্থন 🤝
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো জানিয়েছেন, দুখু মাঝি ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার একটি বাড়ি পেয়েছেন।
তাছাড়া তিনি, তাঁর স্ত্রী এবং বিশেষভাবে সক্ষম ছেলে প্রত্যেকে মাসিক ১০০০ টাকা ভাতা পান। 🤑 বিনামূল্যে রেশনও পান তাঁরা।
তবে তিনি আরও একটি বাড়ির জন্য আবেদন করেছেন, এবং এই বিষয়ে প্রশাসন চিন্তাভাবনা করছে।
বাঘমুণ্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো বলেছেন, “দুখু মাঝি আমাদের গর্ব। আমরা তাঁর পাশে আছি।” 😊
এছাড়া বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও দুখু মাঝির জন্য একটি পাকা বাড়ি তৈরির জন্য আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। 🤲
সমাজের প্রতি বার্তা 🌍
দুখু মাঝি শুধু নিজে গাছ লাগাননি, অন্যদেরও এই কাজে উৎসাহিত করেছেন।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে গাছ লাগান। গাছ না থাকলে পরিবেশ ভালো থাকবে না, আর পরিবেশ ভালো না থাকলে আমরা বাঁচব না।” 🌱
তাঁর এই বার্তা পুরুলিয়ার মানুষের মনে গভীরভাবে দাগ কেটেছে।
তাঁর সাইকেল, কোদাল আর জলের পাত্র নিয়ে প্রতিদিন সকালে তিনি বেরিয়ে পড়েন। 🚲 যেখানে ফাঁকা জায়গা দেখেন, সেখানে গাছের চারা পুঁতে দেন।
তাঁর লাগানো গাছ আজ অযোধ্যা পাহাড়ের পথিকদের ছায়া দেয়, পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখে। 🌳
ভবিষ্যতের স্বপ্ন 🌟
দুখু মাঝির জীবনের শেষ সময়ে তিনি শুধু একটি পাকা বাড়ির স্বপ্ন দেখেন। তিনি বলেন, “আমি আর কিছু চাই না, শুধু একটা পাকা ঘরে থাকতে চাই।” 😊
তাঁর এই সাধারণ স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রশাসন এবং সমাজের সবাই এগিয়ে আসছে। তাঁর গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, একজন সাধারণ মানুষও তাঁর কাজের মাধ্যমে সমাজে অসাধারণ পরিবর্তন আনতে পারেন। 🙌
দুখু মাঝির মতো মানুষ আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবনের গল্প শুধু পুরুলিয়ার নয়, গোটা দেশের মানুষের জন্য একটি উদাহরণ।
তিনি প্রমাণ করেছেন, নিঃস্বার্থ কাজের মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিবেশকে সুন্দর করতে পারি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ পৃথিবী রেখে যেতে পারি। 🌍
উপসংহার
দুখু মাঝি, যিনি পুরুলিয়ার ‘গাছ দাদু’ নামে পরিচিত, তাঁর জীবন আমাদের শেখায় যে সাধারণ মানুষও অসাধারণ কাজ করতে পারেন।
তাঁর হাতে লাগানো হাজার হাজার গাছ আজ পুরুলিয়ার রুক্ষ প্রান্তরে সবুজের সমারোহ সৃষ্টি করেছে। 🌳 তাঁর পদ্মশ্রী সম্মান এই অবদানের স্বীকৃতি, কিন্তু তাঁর স্বপ্ন এখনও অপূর্ণ—একটি পাকা বাড়ি। 🏡
আসুন আমরা সবাই দুখু মাঝির গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হই। একটি গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান, এবং আমাদের সমাজের এই নিঃস্বার্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ান। 🙏
তাঁর স্বপ্নের পাকা বাড়ি হয়তো শীঘ্রই বাস্তবে রূপ নেবে, এবং তাঁর গাছের ছায়ায় আমরা সবাই একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখতে পাব। 🌟
তথ্যসূত্র:
পুরুলিয়ার সংবাদপত্র ও অনলাইন পোর্টাল থেকে সংগৃহীত তথ্য।
দুখু মাঝির সাক্ষাৎকার ও স্থানীয় প্রশাসনের বিবৃতি।