কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে রবীন্দ্রভবনে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

🎶পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে মাল্যদান, রবীন্দ্রসংগীত, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য ও নাটক পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হল এক আবেগঘন অনুষ্ঠান।🌸🎭


kabiguru prayan dibos

🎶 কবিগুরুর প্রয়াণ দিবসে পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান 🌸🎭

পুরুলিয়া, ৮ আগস্ট — বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে বিকেলটি যেন ভরে উঠল সাহিত্য, সঙ্গীত ও আবেগে। 

বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে অনুষ্ঠিত হল এক অনন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 

শহরের সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র রবীন্দ্রভবন এই দিনে রঙিন আলো, ফুল ও শিল্পীদের পদচারণায় যেন নতুন জীবন পেল।


🌼 অনুষ্ঠানের সূচনা: মাল্যদান ও শ্রদ্ধার্ঘ্য

বিকেল ৫টার পর থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে রবীন্দ্রভবনে। শহরের নানা প্রান্ত থেকে ছোট-বড়, তরুণ-প্রবীণ, সাহিত্যপ্রেমী ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা এসে পৌঁছান। 

অনুষ্ঠান শুরু হয় কবিগুরুর মূর্তিতে মাল্যদান ও শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে। প্রথমেই মাল্য অর্পণ করেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো। 

এরপর একে একে মাল্য দেন পুরুলিয়া পৌর প্রধান নব্যেন্দু মাহালি এবং জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী

প্রধান অতিথিরা তাঁদের বক্তব্যে বলেন —

“রবীন্দ্রনাথ কেবল একজন কবি নন, তিনি আমাদের আত্মার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক চিরন্তন সত্তা।” 🌿

মাল্যদান পর্ব শেষে সমবেতভাবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়, যা সমগ্র পরিবেশকে আরও গম্ভীর ও শ্রদ্ধাভরা করে তোলে।


🎶 সাংস্কৃতিক পর্ব: সঙ্গীত, আবৃত্তি, নৃত্য ও নাট্য পরিবেশনা

শ্রদ্ধার্ঘ্য পর্বের পর শুরু হয় অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক ধারা। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর ও স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির যৌথ উদ্যোগে এই পর্বে ছিল বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা।

🎵 রবীন্দ্রসংগীত

প্রথমেই পরিবেশিত হয় “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” — গানটি শুরু হতেই গোটা হল নীরব হয়ে শোনে, যেন প্রতিটি শব্দ মাটির গন্ধে ভরা।
পাশাপাশি পরিবেশিত হয় —

  • “আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে” 🔥

  • “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে” 🚶‍♂️

  • “একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ” 🌺

শিল্পীদের কণ্ঠে প্রতিটি গান যেন কবিগুরুর অনুভূতি ও দর্শনকে জীবন্ত করে তোলে।

📖 কবিতা আবৃত্তি

আবৃত্তিকাররা পরিবেশন করেন রবীন্দ্রনাথের কিছু বিখ্যাত কবিতা।
প্রথমেই শোনা যায় —

বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বাতাস, বাংলার ফল,
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, হে ভগবান। 🌿

এছাড়াও শোনা যায় —

  • “চিত্রা” কাব্যের অংশ

  • “প্রশ্ন” কবিতার গভীর মর্মার্থ

  • “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির” — যা স্বাধীনতার স্বপ্নকে মনে করিয়ে দেয়।

💃 সমবেত নৃত্য

একদল তরুণী পরিবেশন করেন “ফাগুনে তোরা বোল রে উল্লাসে” গানটির সঙ্গে সুর মিলিয়ে নৃত্য। তাঁদের রঙিন পোশাক, হাসি এবং সুন্দর সমন্বয় দর্শকদের মুগ্ধ করে।

🎭 নাট্য পরিবেশনা

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল নাটক। রবীন্দ্রনাথের ভাবধারায় রচিত নাট্যাংশ “তাসের দেশ” মঞ্চস্থ করেন পুরুলিয়ার স্থানীয় শিল্পীগোষ্ঠী। 

হাস্যরস, ব্যঙ্গ ও সামাজিক বার্তায় ভরপুর এই নাটক দর্শকদের মন জয় করে নেয়।


📜 রবীন্দ্রনাথের প্রাসঙ্গিকতা ও স্মরণীয় বার্তা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১–১৯৪১) শুধু একজন কবি, লেখক, চিত্রকর, সুরকার বা দার্শনিক নন; তিনি ছিলেন ভারতীয় সংস্কৃতির এক জীবন্ত প্রতীক।  

প্রথম এশীয় নোবেলজয়ী হিসেবে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেন।

এই অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্বেই তাঁর মানবতাবাদ, শিক্ষা-ভাবনা ও সংস্কৃতির প্রতি অবিচল বিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট ছিল।

সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো বলেন —

“আজকের প্রজন্মকে রবীন্দ্রনাথকে জানতে হবে। তাঁর লেখা শুধু পড়লেই হবে না, জীবনে ধারণ করতে হবে।”


👥 মানুষের প্রতিক্রিয়া

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই জানান, এ ধরনের আয়োজন তাঁদের কাছে শুধু বিনোদন নয়, বরং সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক নবীকরণ। 

এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন —

“আমরা যখন ছোট ছিলাম, স্কুলে রবীন্দ্রসংগীত ও কবিতা ছিল আমাদের জীবনের অংশ। আজ এই অনুষ্ঠানে এসে সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল।”


📌 অনুষ্ঠান আয়োজনের তাৎপর্য

পুরুলিয়ার মতো সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ শহরে এই ধরনের আয়োজন নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথকে পৌঁছে দেয়। পাশাপাশি, স্থানীয় শিল্পীদের মঞ্চে নিজেদের প্রতিভা প্রদর্শনের সুযোগ করে দেয়।


📷 অনুষ্ঠান চিত্রায়ণ

পুরো অনুষ্ঠানটি জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে ছবি ও ভিডিওতে সংরক্ষিত হয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত দর্শকরা কবিগুরুর মূর্তির সামনে ছবি তুলতে ভিড় জমান।


📊 অনুষ্ঠান সারসংক্ষেপ

বিষয় বিবরণ
অনুষ্ঠান কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস স্মরণ অনুষ্ঠান।
তারিখ ৮ আগস্ট।
স্থান রবীন্দ্রভবন, পুরুলিয়া।
আয়োজক জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর।
প্রধান অতিথি নিবেদিতা মাহাতো, নব্যেন্দু মাহালি, সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী।
সাংস্কৃতিক পর্ব রবীন্দ্রসংগীত, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য, নাটক।
গানের তালিকা আমার সোনার বাংলা, আগুনের পরশমণি, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ।
কবিতা তালিকা বাংলার মাটি বাংলার জল, প্রশ্ন, চিত্ত যেথা ভয়শূন্য।
দর্শক সংখ্যা প্রায় ৩০০+।
মূল বার্তা রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি জীবনে ধারণ করা।

kabiguru

✍️ শেষের শ্রদ্ধার্ঘ্য — কবিগুরুর কবিতার পংক্তি 🌿

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
 

আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
বহিঃজগতের স্রোতে হারায় না আলো…

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে,
একলা চল, একলা চল, একলা চল রে।

বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বাতাস, বাংলার ফল,
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, হে ভগবান।

এই পংক্তিগুলো অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রত্যেকের মনে নতুন করে জাগিয়ে দিল রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদ, দেশপ্রেম ও চিরন্তন জীবনদর্শন। 🌸


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url