অযোধ্যা পাহাড়ের নির্জন রাস্তায় দেশাত্মবোধক সুর।

🎵একদা নকশাল আতঙ্কের প্রতীক ছিল অযোধ্যা পাহাড়ের দুর্গম রাস্তা। আজ সেই পথেই ভেসে আসে দেশাত্মবোধক গান, যেখানে পুলিশ সদস্যরা আবেগে ভাসেন প্রকৃতির সৌন্দর্যে। 

জানুন অতীত থেকে বর্তমানের অনন্য রূপান্তরের গল্প। 🌿


ayodhya pahar desatmobodhak gaan

🌄 অযোধ্যা পাহাড় – আতঙ্ক থেকে আনন্দের পথে

পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়। একসময় এই পাহাড়কে ঘিরে পুরো জেলা ছিল নকশাল আন্দোলনের প্রভাবিত এলাকা। 

ঘন জঙ্গল, দুর্গম রাস্তা, আর অজানা আতঙ্কে ভরা ছিল এখানকার পরিবেশ। 

তখনকার দিনে এই পথে চলাচল মানেই বুক ধড়ফড় করা। দূরে কোথাও গুলির শব্দ, কাছে ভারী বুটের ঠকঠক আওয়াজ, হাতে ইনসাস, এসএলআর, কিংবা একে-৪৭—সব মিলিয়ে এক অনিশ্চিত, ভয়াবহ বাতাবরণ।

🌳 জঙ্গলের সবুজ পাতায় কখনও দেখা যেত রক্তের দাগ—একটি যুগের নির্মম সাক্ষী।


🎵 দূর থেকে ভেসে আসা দেশাত্মবোধক সুর

আজ সেই পথেই অন্য এক ছবি। নির্জন জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গেলে দূর থেকে ভেসে আসে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-এর কালজয়ী গান—

“এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি…”

পাশে এসে দেখা যায়—পুলিশের কয়েকজন সদস্য একসঙ্গে গাইছেন গানটি। তাঁদের চোখে-মুখে মিশে আছে গর্ব, আবেগ আর ভালোবাসা—এই দেশ, এই মাটি, এই পাহাড়ের প্রতি।


💂‍♂️ পুলিশের আবেগঘন মুহূর্ত

ডিউটি শেষে বাড়ি ফেরার পথে প্রকৃতির অপরূপ রূপ দেখে তাঁরা থেমে যান। মন ভরে উপভোগ করেন পাহাড়ের সবুজ, আকাশের নীল, পাখির ডাক, আর জঙ্গলের শান্ত বাতাস।

এরপর যেন নিজেরাই থামাতে পারেননি—গেয়ে ওঠেন দেশাত্মবোধক গান। শুধু “এমন দেশটি” নয়, তাঁদের কণ্ঠে শোনা যায় আরেক অনবদ্য সৃষ্টি—

“ধনধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা…”

গানের সুর মিশে যায় পাহাড়ের প্রতিধ্বনিতে। মনে হয়—অতীতের আতঙ্ক মুছে নতুন করে বেঁচে উঠেছে এই অঞ্চল।


⏳ অতীতের গল্প – নকশাল আন্দোলনের দিনগুলো

১৯৭০ থেকে ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত অযোধ্যা পাহাড় ও সংলগ্ন অঞ্চল নকশাল আন্দোলনের জন্য কুখ্যাত ছিল। স্থানীয় গ্রামবাসীর জীবনে ভয় ছিল নিত্যসঙ্গী।

  • গ্রামের মানুষ সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বেরোতেন না।

  • রাস্তা ফাঁকা, দোকানপাট আগেভাগেই বন্ধ।

  • পুলিশের অভিযানে পাহাড়-জঙ্গল কেঁপে উঠত।

অনেকসময় গুলির লড়াই চলত ঘন্টার পর ঘন্টা। এই পথের প্রতিটি মোড় যেন বহন করত আতঙ্কের গল্প।


🌿 প্রকৃতির ফিরে আসা

সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি বদলেছে। নকশাল প্রভাব কমে এসেছে, পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। পর্যটকদের জন্যও এখন অযোধ্যা পাহাড় উন্মুক্ত।

  • শীতকালে পর্যটকদের ভিড়।

  • সাইকেল র‍্যালি, ট্রেকিং, বাইক রাইড আয়োজন।

  • স্থানীয়দের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ।

আজ এই পথে আর নেই রক্তের দাগ—আছে শুধুই সবুজের ছোঁয়া আর প্রকৃতির স্নিগ্ধতা।


🎨 দৃশ্যপট – গান আর প্রকৃতি

একপাশে আকাশছোঁয়া শাল ও সেগুন গাছ, অন্যপাশে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণা। এর মাঝেই ধীরগতিতে চলছে পুলিশের গাড়ি। 

হঠাৎ থেমে যান তাঁরা। গাড়ির দরজা খুলে দলবদ্ধ হয়ে গান ধরেন—কখনও দেশাত্মবোধক, কখনও প্রকৃতিপ্রেমের সুর।

পাহাড়ের প্রতিধ্বনি যেন গানটিকে আরও গভীর করে তুলছে। মনে হয়—এই পথ, এই পাহাড়, এই গান—সবই একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।


🪷 স্থানীয় মানুষের অনুভূতি

গ্রামবাসী বলেন—
“একসময় এই রাস্তায় হাঁটলেই মনে হতো প্রাণ বাঁচিয়ে ফিরতে পারব তো? এখন পুলিশ এসে গান গাচ্ছে—এ দৃশ্য ভাবলেও আনন্দ হয়। পাহাড় যেন ফের নিজের মানুষ হয়ে গেছে।”


🌏 পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা

আজ অযোধ্যা পাহাড় শুধু পুলিশি গল্প নয়—এ এক বড় পর্যটন কেন্দ্র। দেশাত্মবোধক গান, প্রকৃতি, ইতিহাস—সব মিলিয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয় এখানে আসা মানুষদের।

পর্যটন দপ্তরও নতুনভাবে উন্নয়ন করছে রাস্তা, থাকার জায়গা, এবং দর্শনীয় স্থানের অবকাঠামো।


📜 অতীতের শিক্ষা, ভবিষ্যতের আশা

অযোধ্যা পাহাড় আমাদের শেখায়—আতঙ্ক যতই গভীর হোক, সময় সব কিছু বদলে দিতে পারে। আজ এই পাহাড় শান্তির প্রতীক। 

পুলিশের কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গান যেন সেই পরিবর্তনের সুর। আগামী দিনে হয়তো এই গান আরও অনেকের কানে পৌঁছাবে, আরও অনেকে এখানে এসে শুনবে পাহাড়ের শান্ত সুর।


📌 সারসংক্ষেপ

অযোধ্যা পাহাড়ের গল্প এক সময়ের আতঙ্ক থেকে আজকের আনন্দের পথে যাত্রা। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান, পুলিশের আবেগ, আর প্রকৃতির সৌন্দর্য—সব মিলিয়ে এ যেন এক জীবন্ত প্রমাণ যে ইতিহাস বদলায়, আর বদলায় মানুষের মনও।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url