চারদিনের রবীন্দ্রসঙ্গীত কর্মশালায় সুরের ছোঁয়ায় উজ্জ্বল হল রঘুনাথপুর।
🎶রঘুনাথপুরে চারদিন ধরে আয়োজিত রবীন্দ্রসঙ্গীত কর্মশালায় অংশ নিলেন পুরুলিয়ার ৫০ জন তরুণ-তরুণী। সৌম্য বসু ও মনীষা মুরলী নায়ারের প্রশিক্ষণে শেষ হল এই সুরের উৎসব।🌼
🎤 রঘুনাথপুরে চারদিনের রবীন্দ্রসঙ্গীত কর্মশালার সমাপ্তি 🌟
রঘুনাথপুর শহর কিছুদিনের জন্য যেন পরিণত হয়েছিল সুরের শহরে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমির উদ্যোগে এবং রঘুনাথপুর মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত চারদিনব্যাপী রবীন্দ্রসঙ্গীত কর্মশালাটি শেষ হল রবিবার (২৭ জুলাই)।
📍 কর্মশালার ভেন্যু ও পরিবেশ
শহরের প্রাণকেন্দ্র পূর্ণদিশা কলেজের সভাঘরে অনুষ্ঠিত হয় এই সঙ্গীত কর্মশালা। কলেজ প্রাঙ্গণজুড়ে চার দিন ধরে ছিল গান, তাল, লয় আর শিল্পের স্পন্দন। পিনপতন নিঃশব্দতায় ছাত্রছাত্রীরা মগ্ন ছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের সূক্ষ্ম দিকগুলি রপ্ত করার কাজে।
👩🏫 প্রশিক্ষক ও তাঁদের অবদান
এই কর্মশালার মূল আকর্ষণ ছিলেন দুই বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী — সৌম্য বসু ও মনীষা মুরলী নায়ার।
🎼 সৌম্য বসু: একজন প্রথিতযশা শিল্পী ও প্রশিক্ষক, যিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতকে নতুন প্রজন্মের কাছে সহজ ও অনুভবযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দক্ষ।
🎼 মনীষা মুরলী নায়ার: তাঁর কণ্ঠ ও সুরের ভঙ্গিমায় রয়েছে মুগ্ধ করার এক অসাধারণ শক্তি। তিনি ছাত্রছাত্রীদের গানের প্রতিটি শব্দ, অনুভব ও সুরের ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
তাঁদের আন্তরিকতা, অভিজ্ঞতা ও মেধা শিক্ষার্থীদের কাছে এক মূল্যবান অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে।
👦👧 শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ: নবপ্রজন্মের সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা
পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত প্রায় ৫০ জন তরুণ-তরুণী এই কর্মশালায় অংশ নেন।
তাঁদের মধ্যে কেউ ছিল একেবারে শুরু পর্যায়ে, কেউবা ইতিমধ্যে স্থানীয় মঞ্চে গান গেয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। চার দিন ধরে সকলে মিলে এক অভিন্ন সুরে গেঁথে ফেলল এক সাংস্কৃতিক বন্ধনের মালা।
🎵 সমবেত ও একক গান পরিবেশনা: প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অনুষ্ঠিত হয় ছাত্রছাত্রীদের একক ও সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনা। প্রশিক্ষকদ্বয় নিজেরাও অংশ নেন সেই পরিবেশনায়। এই অনুশীলনের মধ্যেই শোনা যায় —
“তুমি রবে নিরবে হৃদয়ে মম…”
“আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে…”
শুধু গানের অনুশীলন নয়, শেখানো হয়েছে গান কিভাবে উপস্থাপন করতে হয় মঞ্চে, কিভাবে গানের অনুভব ছড়িয়ে দিতে হয় দর্শকের হৃদয়ে।
🧠 কী শেখা হল এই কর্মশালায়?
তালিকা আকারে তুলে ধরা হল শিক্ষার্থীরা কী কী বিষয় শিখলেন—
বিষয় | বিস্তারিত |
---|---|
🎶 স্বরলিপি চর্চা | রবীন্দ্রসঙ্গীতের মৌলিক স্বরলিপি বোঝা ও গায়কিতে প্রয়োগ |
🎤 উচ্চারণ | সঠিক উচ্চারণে গানের পাঠ |
🧘 অভিব্যক্তি | সুরের সাথে সাথে ভাব প্রকাশের কৌশল |
👥 সমবেত গান | দলগত পরিবেশনায় সুরের সমন্বয় |
🎭 মঞ্চ উপস্থাপনা | গানের মঞ্চে সঠিক উপস্থাপনার নিয়ম |
এইসব শিক্ষা ছাত্রছাত্রীদের আগামী দিনের সাংস্কৃতিক যাত্রায় এক নতুন পথ খুলে দেবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
🗣️ আয়োজকদের মন্তব্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
রঘুনাথপুর মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক সায়ন ঘোষ বলেন –
“রবীন্দ্রসঙ্গীত বাংলার আত্মা। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম এই সঙ্গীত চর্চায় আরও বেশি করে যুক্ত হোক। এই কর্মশালার মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে আগ্রহ জাগাতে পেরে আমরা আনন্দিত।”
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতেও এরকম কর্মশালা নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হবে, যাতে সাংস্কৃতিক চর্চা আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে জেলার নানা প্রান্তে।
❤️ আবেগে মোড়া চার দিনের স্মৃতি
চার দিনের এই কর্মশালার প্রতিটি মুহূর্তে মিশে ছিল আবেগ, সুর, ভালোবাসা ও শৃঙ্খলা। শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ শেষদিনে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।
গান যে শুধু সুর নয়, তা যে আত্মার এক পরম শান্তি — তা আরও একবার প্রমাণ করে গেল এই কর্মশালা।
একজন অংশগ্রহণকারী বলেন –
“এত ভালোভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীত আগে কখনও শিখিনি। সৌম্যদা আর মনীষাদির শেখানোর ধরণ সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। আবার আসব, আবার শিখব।”
🔚 উপসংহার:
রঘুনাথপুরের এই চার দিনের রবীন্দ্রসঙ্গীত কর্মশালা ছিল এক নতুন সূর্যোদয়ের বার্তা। ভবিষ্যতের শিল্পীরা এখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আগামী দিনের বাংলা সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলেই আশাবাদী সকলে।
সুর, ছন্দ ও ভাবনায় অনন্য এই কর্মশালা যেন সারা জেলার সাংস্কৃতিক মানচিত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে — এই কামনায়, শেষ হল সুরের এই অনবদ্য অধ্যায়। 🎵🌺