সরকারি মান্ডিতে ধান বেচতেও দিতে হচ্ছে ঘুষ!

পুরুলিয়ার বলরামপুর কৃষক বাজারে ধান বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ। বাড়তি টাকা ও ওজন কাটার প্রতিবাদে সরব কৃষকরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছে কড়া বার্তা দিলেন বিধায়ক ও বিডিও।

balrampur dhan bikri ghush 
সরকারি ন্যায্য মূল্যে ফসল বিক্রি করতে গিয়েও এখন চোখের জল ফেলতে হচ্ছে কৃষকদের। হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে ফলানো ধান সরকারের ঘরে পৌঁছে দিতে গিয়েও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা, এমনটাই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে পুরুলিয়ার বলরামপুর কৃষক বাজারে। 

কৃষকদের অভিযোগ, সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্রে দালালদের দাপট এতটাই বেড়েছে যে, ঘুষ ছাড়া সেখানে ধান নেওয়া হচ্ছে না।

বলরামপুর এলাকার চাষীদের দাবি, তাঁরা যখনই ধান নিয়ে সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে বা মান্ডিতে আসছেন, তখনই শুরু হচ্ছে হয়রানি। 

কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই কুইন্টাল প্রতি প্রায় ৩ কেজি করে ধান ওজনে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করলেই মিলছে দুর্ব্যবহার। 

শুধু ওজন বাদেও সন্তুষ্ট থাকছে না অসাধু চক্র। অভিযোগ, ধান বিক্রির জন্য চাষী পিছু ৩০০ টাকা করে নগদ ঘুষ চাওয়া হচ্ছে। 

তার ওপর ধান নামানো বা আনলোডিং-এর নাম করে শ্রমিকদের জন্য আরও ২০০ টাকা জোর করে নেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে সরকারি দামে ধান বেচতে এসেও পকেট থেকে ৫০০ টাকা করে গচ্চা দিতে হচ্ছে সাধারণ চাষীদের। 

যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। যদিও ধান ক্রয় কেন্দ্রে উপস্থিত রাইস মিলের কর্মীরা এই সমস্ত অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, নিয়ম মেনেই সব কাজ হচ্ছে।

এদিকে কৃষকদের এই চরম ভোগান্তির খবর পেয়েই বলরামপুর কৃষক বাজারে ছুটে যান স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক বানেশ্বর মাহাতো। 

তিনি সরাসরি চাষীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের অভাব-অভিযোগের কথা শোনেন। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। 

বিধায়কের স্পষ্ট অভিযোগ, সরকারি ক্রয় কেন্দ্রটি এখন দালালদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। চাষীদের থেকে ধান কেনার ক্ষেত্রে নানারকম ভুয়ো অজুহাত দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র টাকার জন্য। 

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গরিব কৃষকদের ওপর এই অন্যায় ও অব্যবস্থা অবিলম্বে বন্ধ না হলে, তিনি কৃষকদের সাথে নিয়ে বড়সড় আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে দেখে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছান বলরামপুর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক (BDO) সৌগত চৌধুরী এবং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কাল্লাবতি কুমার। 

তাঁরাও সরেজমিনে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখেন এবং ভুক্তভোগী চাষীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রশাসনের এই আধিকারিকরা উপস্থিত মিলের কর্মী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের কড়া ভাষায় সতর্ক করে দেন। 

তাঁরা নির্দেশ দেন, সরকারি নিয়ম মেনে এবং ন্যায্য মূল্যেই ধান কিনতে হবে। বিডিও স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এরপর যদি আর কোনো চাষীর থেকে টাকা নেওয়া বা হয়রানির অভিযোগ আসে, তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আপাতত প্রশাসনিক আশ্বাসে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, আদৌ এই ‘কাটমানি’ কালচার বন্ধ হয় কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে বলরামপুরের কৃষকরা।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url