“পুরুলিয়া রত্ন” সম্মানে ভূষিত ছৌ শিল্পী হেমচন্দ্র মাহাতো।

পুরুলিয়ার সিন্দরী উত্তরণ কোচিং সেন্টারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো এক অনন্য সাংস্কৃতিক ও সম্মাননা অনুষ্ঠান, যেখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজসেবার মেলবন্ধন ঘটল। 

এই অনুষ্ঠানে পুরুলিয়ার গর্বিত ছৌ শিল্পী হেমচন্দ্র মাহাতোকে তাঁর অসামান্য সাংস্কৃতিক অবদানের জন্য “পুরুলিয়া রত্ন” সম্মানে ভূষিত করা হয়। 

পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে সাফল্য অর্জনকারী কৃতি ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয় “উত্তরণ রত্ন” পুরস্কার, এবং রক্তদানে অসামান্য ভূমিকার জন্য আগদোহলি সংগঠন ও সজল কুমার মাহাতোকেও সম্মানিত করা হয়। 

উত্তরণের এই উদ্যোগ আজ সমাজে এক মানবিক ও শিক্ষামূলক বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। 🌟


purulia ratna samman

🎉 পুরুলিয়া রত্ন সম্মানে হেমচন্দ্র মাহাতো

📚 শিক্ষায় ও সমাজসেবায় সিন্দরী উত্তরণ কোচিং সেন্টারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত

পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার সিন্দরী গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো এক অনন্য সাংস্কৃতিক ও সম্মাননা অনুষ্ঠান, যার আয়োজক ছিল স্থানীয় উত্তরণ কোচিং সেন্টার। 

এই অনুষ্ঠানে শিক্ষাক্ষেত্র, সমাজসেবা ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের সম্মানিত করা হয়। 

পুরুলিয়ার খ্যাতনামা ছৌ শিল্পী হেমচন্দ্র মাহাতো পান “পুরুলিয়া রত্ন সম্মান”, কৃতি ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয় “উত্তরণ রত্ন” পুরস্কার, আর রক্তদানে অসামান্য ভূমিকার জন্য আগদোহলি সংগঠনসজল কুমার মাহাতোকে সম্মান জানানো হয়।

নাচ, গান, কবিতা ও আবৃত্তিতে ভরপুর এই অনুষ্ঠানটি এক প্রাণবন্ত উৎসবে পরিণত হয়। সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কবি খুরশিদ আলম। 

উত্তরণ কোচিং সেন্টারের এই উদ্যোগ আজ সিন্দরী ও সমগ্র পুরুলিয়ার গর্ব, যা প্রমাণ করে— শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজসেবার মিলিত চেষ্টাই পারে সমাজকে প্রকৃত অর্থে আলোকিত করতে। 🌟 


🌟 সিন্দরীর আকাশে উৎসবের আলো

পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার ছোট্ট গ্রাম সিন্দরীতে প্রতি বছরের মতো এবছরও এক অসাধারণ দিন উদযাপিত হলো। 

স্থানীয় “উত্তরণ কোচিং সেন্টার”-এর পক্ষ থেকে আয়োজিত এই সাংস্কৃতিক ও সম্মাননা অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল গ্রামবাসীর গর্ব ও আনন্দের প্রতীক। 

সকাল থেকেই এলাকার মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেন অনুষ্ঠানস্থলে। মাঠ জুড়ে রঙিন পতাকা, ফুলের সাজ, হাসির কলরব আর প্রত্যাশার উচ্ছ্বাস—সব মিলিয়ে যেন ছোট্ট সিন্দরী গ্রাম এক মহোৎসবে পরিণত হয়। 

এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য শুধু কৃতি ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা নয়, বরং সমাজে যাঁরা নীরবে, নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে চলেছেন তাঁদের সম্মানিত করা। 

শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে সমাজসেবা ও সংস্কৃতিচর্চা—প্রতিটি ক্ষেত্রে উত্তরণ কোচিং সেন্টার তার অবদান রাখছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। 

উপস্থিত প্রত্যেক অতিথি এবং গ্রামের মানুষ অনুভব করছিলেন, এমন উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের বীজ বপন করে। 🌺


🏅 পুরুলিয়ার গর্ব হেমচন্দ্র মাহাতো পেলেন “পুরুলিয়া রত্ন”

অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আলোচিত অংশ ছিল ছৌ শিল্পী হেমচন্দ্র মাহাতো-কে “পুরুলিয়া রত্ন সম্মান” প্রদান। 

দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি ছৌনৃত্যকে শুধু একটি নাচ নয়, বরং পুরুলিয়ার সংস্কৃতির আত্মা হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন। 

তাঁর নেতৃত্বে বহু তরুণ শিল্পী আজ ছৌনৃত্যে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলছেন। এই স্বীকৃতি পেয়ে হেমচন্দ্রবাবুর চোখে জল এসে যায়। 

তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন— “এই সম্মান আমার নয়, আমাদের দলের, আমাদের মাটির। আমি চিরদিন চেয়েছি, পুরুলিয়ার ছৌনৃত্য যেন সারা বিশ্বে গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয়।” 

তাঁর এই বক্তব্যে উপস্থিত দর্শকরা দাঁড়িয়ে করতালিতে ভরিয়ে তোলেন মঞ্চ। এই সম্মান যেন পুরুলিয়ার প্রতিটি শিল্পীর প্রেরণার প্রতীক হয়ে ওঠে। 

তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় ট্রফি, ফুলের তোড়া এবং এক বিশেষ স্মারকফলক। 🎭


👩‍🎓 কৃতি ছাত্রছাত্রীদের জন্য “উত্তরণ রত্ন” সম্মান

শিক্ষাক্ষেত্রেও এই অনুষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতি বছরের মতো এবারও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত দুই কৃতি ছাত্রছাত্রীকে “উত্তরণ রত্ন” সম্মানে ভূষিত করা হয়। 

তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ট্রফি ও সনদপত্র, পাশাপাশি শিক্ষকদের পক্ষ থেকে উৎসাহমূলক উপহার। 

এই পুরস্কার শুধু পরীক্ষার ফলের স্বীকৃতি নয়, বরং তাঁদের কঠোর পরিশ্রম, নিয়মিত অধ্যবসায় এবং ভবিষ্যতের প্রতি বিশ্বাসের প্রতীক। 

অনুষ্ঠানে এক ছাত্রীর বক্তব্য ছিল অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক— “উত্তরণ কোচিং আমাদের শুধু পড়াশোনা শেখায়নি, শিখিয়েছে কীভাবে জীবনের প্রতিটি ব্যর্থতাকে জয় করা যায়।” 

এমন উক্তিতে পুরো হল করতালিতে মুখরিত হয়। উপস্থিত অভিভাবকরা আবেগে ভেসে যান, কারণ তাঁদের সন্তানদের সাফল্যই তাঁদের গর্ব। 

এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শিক্ষার প্রতি আরও উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জোগায় পুরো গ্রামজুড়ে। 📘


🩸 রক্তদানে অগ্রণী আগদোহলি সংগঠন ও সজল কুমার মাহাতো

সমাজসেবার মঞ্চেও এই অনুষ্ঠানের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। রক্তদানের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য “আগদোহলি সংগঠন”-কে বিশেষ সম্মান জানানো হয়। 

এ পর্যন্ত তারা আয়োজন করেছে ১১৬টি রক্তদান শিবির, যা সত্যিই এক বিরল উদাহরণ। 

সংগঠনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সুদীপ কুমার রায় মাহাতোসাহেবরাম মাহাতো, যারা জানিয়েছেন— “মানবিকতার রক্তপ্রবাহ যেন কখনও থেমে না যায়, সেটাই আমাদের অঙ্গীকার।” 

এই কথায় গোটা অনুষ্ঠানমঞ্চ আবেগে ভরে ওঠে। পাশাপাশি বিশেষ সম্মান প্রদান করা হয় সজল কুমার মাহাতোকে, যিনি ইতিমধ্যে ৬১ বার রক্তদান করেছেন। 

তাঁর এই ত্যাগ ও মানবিকতাকে “উত্তরণ সম্মাননা” দিয়ে স্বীকৃতি জানানো হয়। সজলবাবু বলেন— “রক্ত দিয়ে আমি কিছু হারাই না, বরং পাই নতুন জীবনের অনুভব।” 

এই বক্তব্য শুনে উপস্থিত বহু তরুণ প্রতিজ্ঞা নেন, তাঁরাও আগামী দিনে রক্তদান অভিযানে অংশ নেবেন। ❤️


🎭 সংস্কৃতি ও সাহিত্য মিলিয়ে এক উৎসবমুখর সন্ধ্যা

এই অনুষ্ঠান শুধুই সম্মান প্রদানের ছিল না, বরং এটি এক প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়। সন্ধ্যা নামতেই মঞ্চ ভরে ওঠে নাচ, গান, কবিতা পাঠ, আবৃত্তি ও নাট্য পরিবেশনে। 

ছোটদের হাসি, বড়দের করতালি, দর্শকদের উচ্ছ্বাস—সব মিলিয়ে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও সমাজসেবীরা। 

বিশেষ আকর্ষণ ছিলেন শ্রীরামপুরের “ক্রন্দনরতা জননীর পাশে” কাব্যের কবি মৃদুল দাশগুপ্ত, বিশ্বের ১৯টি দেশ সাইকেলে ভ্রমণকারী অভিযাত্রী অক্ষয় ভগৎ, মানভূম কালচার অ্যাকাডেমির সভাপতি হংসেশ্বর মাহাতো, কবি খগেন দাস, রমানাথ দাস, দয়াময় মাহান্তি, অতনু টিকায়িৎ, সজল কুন্ডু ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিশ্বজিৎ মাহাতো। 

তাঁদের বক্তব্য, কাব্যপাঠ ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া অনুষ্ঠানে এক গভীর সাংস্কৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে। দর্শকদের চোখে-মুখে আনন্দ, গর্ব ও কৃতজ্ঞতার ঝিলিক। 🎤


🪶 সভাপতির বক্তব্য ও উত্তরণের সমাজবার্তা

পুরো অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কবি খুরশিদ আলম। তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেন— “উত্তরণের এই উদ্যোগ শুধু শিক্ষা নয়, সমাজ ও সংস্কৃতির বন্ধনকেও আরও দৃঢ় করেছে। আজকের দিনে যখন মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে, তখন এমন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রয়াস সমাজকে এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে।” 

তাঁর কথা উপস্থিত সবার মনে গভীর প্রভাব ফেলে। অনুষ্ঠান শেষে বহু অভিভাবক ও অতিথি বলেন, “উত্তরণ কোচিং সেন্টার শুধু পড়াশোনা শেখায় না, শেখায় মানুষ হওয়ার পাঠ।” সত্যিই, এই প্রতিষ্ঠান আজ পুরুলিয়ার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রূপান্তরের এক প্রতীক। 📖


🌈 শেষকথা – উত্তরণের আলোয় আলোকিত সিন্দরী

দিনের শেষে সিন্দরীর আকাশে ছড়িয়ে পড়েছিল আনন্দের আলো। মাঠের এক কোণে বাচ্চারা হাসছে, অন্য পাশে অতিথিরা আলোচনা করছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে। 

“উত্তরণ”-এর এই মহৎ উদ্যোগ দেখিয়ে দিল— শিক্ষা, সংস্কৃতি আর সমাজসেবার মেলবন্ধনই পারে সমাজকে সত্যিকারের উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে। 

পুরুলিয়ার মাটিতে জন্ম নেওয়া এইসব রত্নরা আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রেরণার আলো দেখাবেন। তাঁদের হাত ধরেই পুরুলিয়া আরও উজ্জ্বল হবে, আরও এগিয়ে যাবে মানবতার পথে। 

এই অনুষ্ঠান শেষ হলেও রেখে গেল এক অমলিন বার্তা— “আমরা যদি এক হই, তবে পরিবর্তন নিশ্চিত।” 🌟


Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url