প্রেরণা প্রকল্পে বদলে যাচ্ছে অযোধ্যা পাহাড়ের যুব সমাজের জীবন।

অযোধ্যা পাহাড়ের আদিবাসী তরুণ-তরুণীদের জীবন বদলে দিচ্ছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের ‘প্রেরণা’ প্রকল্প। তিন মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণে ৪৩ জনের সাফল্য নতুন দিশা দেখাচ্ছে জেলার যুব সমাজকে।

prerna prokolpo

অযোধ্যা পাহাড়ের আদিবাসী তরুণ-তরুণীদের জীবনে এক নতুন আলো এনে দিয়েছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের ‘প্রেরণা’ প্রকল্প। 

পাহাড়ি এলাকার বহু যুবক-যুবতী যেখানে আগে জীবনের দিশা খুঁজে পেত না, সেখানে এই তিন মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তাদের স্বপ্ন দেখার এবং স্বপ্ন পূরণের পথ তৈরি করে দিচ্ছে। 

ইউনিফর্মড ফোর্সে যোগদানের মতো বড় লক্ষ্যকে সহজ করে দিচ্ছে এই উদ্যোগ।

গত জুলাই মাসে জেলাজুড়ে ২০০-র বেশি আবেদন পড়লেও কঠোর বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাত্র ৫৫ জনকে ‘প্রেরণা’-র জন্য নির্বাচিত করা হয়। 

৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া প্রশিক্ষণে তিন মাস ধরে দক্ষতা, শারীরিক সক্ষমতা এবং মানসিক প্রস্তুতি—সব দিক থেকেই তাদের তৈরি করা হয়েছে। 

শেষ পর্যন্ত ৪৩ জন প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করতে সফল হয়েছেন। সোমবার বেলগুমা পুলিশ লাইনে এক অনুষ্ঠানে তাদের হাতে শংসাপত্র ও স্টাডি মেটেরিয়াল তুলে দেওয়া হয়, যা ভবিষ্যতের প্রস্তুতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো, জেলাশাসক কোন্থাম সুধীর, পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বহু বিশিষ্ট অতিথি। 

মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু জানান, এই প্রকল্প শুধুমাত্র চাকরি দেওয়ার উদ্যোগ নয়, এটি সমাজকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার এক অসাধারণ উদাহরণ। তিনি আরও বলেন, জেলার অন্যান্য ব্লকেও এই প্রকল্প চালুর প্রস্তাব দেওয়া হবে।

পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই আবাসিক প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করা সত্যিই একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু সফলভাবে তা সম্পন্ন হয়েছে। 

তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ শেষ হলেও সম্পর্ক এখানেই থেমে থাকছে না। প্রশিক্ষিত যুবকদের নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে তারা নিয়মিত সহায়তা পাবে। সপ্তাহে একদিন তাদের বিশেষ ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে।

জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো ‘প্রেরণা’-র সফলতাকে জেলার গর্ব বলে অভিহিত করেন এবং জানান, জেলা পরিষদ প্রকল্পটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। 

একইভাবে জেলাশাসক কোন্থাম সুধীর বলেন, এই প্রশিক্ষণ শুধু চাকরির পথ খুলে দেয় না, বরং আত্মবিশ্বাস ও চরিত্রগঠনেও বিশেষ ভূমিকা রাখে।

যে অযোধ্যা পাহাড়ের যুবসমাজ একসময় বিপথে হারিয়ে যাচ্ছিল, তারাই আজ ইউনিফর্ম পরার স্বপ্নে উজ্জীবিত। 

তাই ‘প্রেরণা’ শুধু একটি প্রকল্প নয়—এটি জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সংগ্রাম ও সফলতার প্রতিচ্ছবি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url