পুরুলিয়ায় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস র‍্যালিতে সচেতনতার বার্তা।

পুরুলিয়ায় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে সদর হাসপাতালের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো এক অনন্য সচেতনতা র‍্যালি 🌿। 

প্রায় ১৩০ জন চিকিৎসক, নার্স, সমাজকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নিলেন এই মানবিক প্রচেষ্টায়। 

“বিপর্যয়ের সময় মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অ্যাক্সেস”— এই বছরের মূল বার্তা নিয়ে শহরের রাস্তায় পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ও পথনাটিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল সচেতনতায়র সুর 💚। 

ডা. নীহারঞ্জন সরকার বলেন, মানসিক অসুস্থতা কোনো লজ্জার বিষয় নয়, এটি সম্পূর্ণ চিকিৎসাযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য। 

পুরুলিয়ার এই র‍্যালি সমাজকে জানাল— কুসংস্কার নয়, চিকিৎসা ও সহানুভূতিই পারে মন ভালো রাখতে 🌈। 

এই উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষ বুঝতে পারল, মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা যত্ন, ভালোবাসা ও সচেতনতার মাধ্যমে রক্ষা করা যায় ❤️।


purulia world mental health day

🧠 মানসিক অসুস্থতা সারানো সম্ভব 💚

পুরুলিয়ায় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বিশেষ সচেতনতা র‍্যালি

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে সম্প্রতি এক অনন্য উদ্যোগের সাক্ষী থাকল সমগ্র জেলা। 🌍

“বিপর্যয়ের সময় মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অ্যাক্সেস” — এই বছরের মূল বার্তা নিয়ে আয়োজিত হয়েছিল এক বিশেষ সচেতনতা র‍্যালি

র‍্যালিতে অংশগ্রহণ করেন প্রায় ১৩০ জন মানুষ — চিকিৎসক, নার্স, সমাজকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এমনকি সাধারণ নাগরিকও।

র‍্যালির মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে — মানসিক অসুস্থতা কোনো অভিশাপ নয়, বরং চিকিৎসা ও ভালোবাসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সারানো সম্ভব।

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের মনোচিকিৎসা বিভাগ এবং জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই র‍্যালি সকালেই শুরু হয় হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে। 

ব্যানার হাতে অংশগ্রহণকারীরা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে মানুষকে সচেতনতার বার্তা দেন। 🌿


🌈 পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের উদ্যোগে মানবিক র‍্যালি

সকালের হালকা শীতের হাওয়ায় পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের সামনে ভিড় জমেছিল প্রচুর মানুষের। 🎗️

সাদা-সবুজ ব্যানারে লেখা— “Mental Health for All – Let’s Care and Share”
এই স্লোগান নিয়ে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের সচেতনতা র‍্যালি

র‍্যালিটি ক্রমান্বয়ে জেলখানা মোড়, পোস্ট অফিস মোড়, বাসস্ট্যান্ড চত্বর ঘুরে আবার হাসপাতালেই ফিরে আসে।

পথে পথে মানুষ থেমে দেখেছে এই উদ্যোগ।

কেউ মোবাইলে ভিডিও তুলেছে, কেউ আবার হাততালি দিয়ে অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ দিয়েছে।

অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল রঙিন পোস্টার ও প্ল্যাকার্ডে লেখা—

  • “মন খারাপ মানেই দুর্বলতা নয়”

  • “চিকিৎসা নিন, মন রাখুন ভালো”

  • “You are not alone 💚”

এছাড়াও, হাসপাতালের তরুণ কর্মীরা রাস্তায় পথনাটিকা প্রদর্শন করে মানসিক রোগ নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার ভাঙার চেষ্টা করেন।

নাটিকার সংলাপে উঠে আসে পরিবারের অবহেলা, সমাজের ভুল ধারণা, এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে ওঠার বাস্তব গল্প।

এই দৃশ্য দেখে অনেক পথচারীই বলেন,

“আমরা আগে ভাবতাম মানসিক রোগ মানেই পাগলামি, কিন্তু আজ বুঝলাম এটা ঠিক অন্য যেকোনো অসুখের মতোই চিকিৎসাযোগ্য।”

এই কথাগুলোই র‍্যালির সফলতার প্রমাণ।


💬 চিকিৎসকদের বার্তা: “চিকিৎসায় সম্ভব সম্পূর্ণ আরোগ্য”

র‍্যালির নেতৃত্ব দেন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের মনোচিকিৎসা বিভাগের প্রধান ডা. নীহারঞ্জন সরকার

র‍্যালির শেষে তিনি বলেন,

“কোভিডের পর থেকে মানসিক অসুস্থতার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। অনেকেই এখনও জানেন না যে মানসিক রোগের সম্পূর্ণ চিকিৎসা সম্ভব। বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু লজ্জা ও কুসংস্কারের ভয়ে তাঁরা ডাক্তার দেখাতে আসেন না। এই ধারণা ভুল — সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে মানসিক অসুস্থতা পুরোপুরি সারানো যায়।”

ডা. সরকারের এই বক্তব্যে উপস্থিত মানুষদের মধ্যে উৎসাহ ও আশার সঞ্চার ঘটে।

তিনি আরও বলেন,

“মানসিক অসুস্থতা মানে জীবনের সমাপ্তি নয়। এটা জীবনের একটি অধ্যায়, যা যত্ন, সহানুভূতি এবং চিকিৎসার মাধ্যমে ঠিক হয়ে যেতে পারে।”

ডা. সরকারের মতে, এখনকার যুগে কাউন্সেলিং, ওষুধ, এবং পরিবারের সহায়তা — এই তিনটি উপাদান মানসিক রোগ নিরাময়ের মূল ভিত্তি।

র‍্যালিতে থাকা অন্যান্য চিকিৎসকরাও একই বার্তা দেন:

  • মানসিক রোগ কোনো অপরাধ নয়।

  • চিকিৎসা নিলে সুস্থ হওয়া যায়।

  • পরিবার ও সমাজের সহানুভূতি সবচেয়ে বড় ওষুধ।

এই কথাগুলি শুনে অনেকের চোখে জল চলে আসে, আবার কারও চোখে দেখা যায় নতুন আশার আলো। 🌟


🧩 সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা

আমাদের সমাজে মানসিক অসুস্থতা নিয়ে এখনও নানা ভুল ধারণা রয়েছে।

অনেকে মনে করেন, মানসিক অসুস্থতা মানেই পাগল হওয়া বা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া।
কেউ কেউ আবার মনে করেন, এই রোগে চিকিৎসা কাজ করে না, বা এটি ঈশ্বরের শাস্তি।

র‍্যালিতে অংশগ্রহণকারী সমাজকর্মীরা এই মিথগুলো ভাঙতে সচেষ্ট হন। তারা বলেন,

“মানসিক রোগ শরীরের অন্য রোগের মতোই একটি চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা। যেমন ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তেমনই মানসিক রোগও চিকিৎসায় পুরোপুরি সেরে ওঠা সম্ভব।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজে লজ্জা, ভয় ও অজ্ঞতার কারণে বহু মানুষ চিকিৎসা নিতে চান না।
ফলে ছোটখাটো উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা বড় আকার ধারণ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী,
বিশ্বে প্রতি ৮ জনে ১ জন মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন।
ভারতেও মানসিক রোগের হার দ্রুত বাড়ছে, বিশেষ করে শহরের তরুণ ও কর্মজীবীদের মধ্যে।

তবে সুখবর হল — চিকিৎসা ও সামাজিক সহায়তায় এই রোগ নিরাময়যোগ্য।
পুরুলিয়ার এই র‍্যালি সেই বার্তাই পৌঁছে দিল সাধারণ মানুষের কাছে —

“কুসংস্কার নয়, সহানুভূতিই হোক মানসিক স্বাস্থ্যের অস্ত্র।” 💚


👩‍⚕️ মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব ও লক্ষণ 

মানসিক স্বাস্থ্য মানে শুধু মানসিক প্রশান্তি নয়; এটি আমাদের জীবনযাপন, সম্পর্ক, কাজ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।

যখন মন খারাপ থাকে বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ জমে যায়, তখন আমাদের শরীর, আচরণ এবং চিন্তাধারায় পরিবর্তন দেখা দেয়।

👉 মানসিক অসুস্থতার সাধারণ লক্ষণ:

  • ঘুমের সমস্যা বা অতিরিক্ত ঘুম 😴

  • অকারণ দুঃখ বা রাগ

  • আগ্রহহীনতা বা কাজের প্রতি উদাসীনতা

  • আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি

  • পরিবার বা বন্ধুর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়া

  • বারবার উদ্বেগ বা ভয় 😟

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কাউন্সেলিং, ওষুধ, যোগব্যায়াম, ধ্যান— সবকিছুই সাহায্য করতে পারে।

মানসিক সুস্থতার জন্য ছোট কিছু অভ্যাস:

  1. প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট নিজের জন্য সময় রাখুন 🕰️

  2. নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখবেন না— প্রিয়জনকে বলুন 💬

  3. প্রতিদিন হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন 🏃‍♂️

  4. পর্যাপ্ত ঘুম নিন

  5. সামাজিক সংযোগ বজায় রাখুন 🤝

পুরুলিয়ার এই র‍্যালি মানুষকে শিখিয়েছে—
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া মানে নিজের প্রতি ভালোবাসা। 🌺


🌼 পুরুলিয়ায় মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়ন 

পুরুলিয়া জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।

জেলায় এখন চালু হয়েছে District Mental Health Programme (DMHP), যার আওতায় নিয়মিত কাউন্সেলিং ক্যাম্প, টেলি-কাউন্সেলিং, এবং কমিউনিটি সচেতনতা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ডা. নীহারঞ্জন সরকার জানান,

“আমরা চেষ্টা করছি যাতে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষও মানসিক চিকিৎসা নিতে পারেন। অনেক সময় চিকিৎসার অভাবে সমস্যা জটিল হয়। তাই আমরা ব্লক পর্যায়েও সচেতনতা ক্যাম্প চালু করেছি।”

এছাড়াও, জেলার স্কুল ও কলেজগুলিতে Stress Management Workshop এবং Student Counselling Session শুরু হয়েছে।
এর ফলে তরুণ প্রজন্মও এখন খোলাখুলিভাবে মানসিক চাপ নিয়ে কথা বলছে।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো—

  • নিঃশুল্ক কাউন্সেলিং পরিষেবা

  • সাপ্তাহিক মানসিক স্বাস্থ্য চেকআপ ক্যাম্প

  • পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রশিক্ষণ

এই উদ্যোগগুলি পুরুলিয়াকে ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটি মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তুলছে।


💖 বার্তা র‍্যালির প্রভাব ও মানুষের প্রতিক্রিয়া

র‍্যালি শেষে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এই ধরনের কর্মসূচি সমাজে গভীর প্রভাব ফেলে।

মানুষ যখন রাস্তায় চিকিৎসক, ছাত্র, ও সমাজকর্মীদের একসঙ্গে দেখে, তখন মানসিক অসুস্থতা নিয়ে থাকা ভয়টা অনেকটাই কেটে যায়।

একজন মহিলা অংশগ্রহণকারী বলেন,

“আমার বোন দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগে ভুগছিল। চিকিৎসা নেওয়ার পর এখন সে অনেক ভালো আছে। আজকের র‍্যালি দেখে মনে হচ্ছে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে।”

র‍্যালির পর সাধারণ মানুষও ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেন, কেউ প্রশ্ন করেন চিকিৎসা সম্পর্কে, কেউ আবার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের এই উদ্যোগ কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়—
এটি মানুষের মনে আশা, সাহস ও সহানুভূতির বীজ বপন করেছে। 🌿


🌟 শেষ কথা: “মন ভালো রাখুন, জীবনকে ভালোবাসুন” 

মানসিক স্বাস্থ্য এখন শুধুমাত্র চিকিৎসার বিষয় নয়, এটি মানবাধিকারের বিষয়
এই সত্যটিই পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের র‍্যালি নতুনভাবে মনে করিয়ে দিল।

ডা. নীহারঞ্জন সরকারের কথায়,

“যেভাবে আমরা শরীরের অসুখে চিকিৎসা নিতে দ্বিধা করি না, ঠিক সেভাবেই মানসিক অসুস্থতাতেও চিকিৎসা নিতে হবে। কুসংস্কার নয়, সচেতনতাই পারে সমাজকে বদলাতে।”

আজকের এই র‍্যালি মানুষকে একটি নতুন দিশা দেখিয়েছে —
লজ্জা নয়, আলোচনাই হোক মানসিক সুস্থতার প্রথম ধাপ।

প্রতিটি মানুষ যদি নিজের ও অন্যের মানসিক অবস্থার প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হয়, তাহলে সমাজ হবে আরও মানবিক, আরও সুস্থ।

🌼 মন খারাপ? বলুন না খোলাখুলি। চিকিৎসা নিন, মন রাখুন ভালো। কারণ মানসিক অসুস্থতা সারানো সম্ভব— যদি সমাজ পাশে থাকে। 💚



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url