পুরুলিয়ায় পেনশন প্রতারণায় রেলকর্মীর কাছ থেকে উধাও সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা।
পুরুলিয়ার পাড়া থানার দুবড়া গ্রামে ঘটেছে চাঞ্চল্যকর সাইবার প্রতারণা। পেনশন চালুর নাম করে এক অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মীর কাছ থেকে প্রতারকরা হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা।
ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে এবং বৃদ্ধের পরিবার মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েছেন। পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে, তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
দেশে এই ধরনের পেনশন প্রতারণা দ্রুত বাড়ছে, বিশেষ করে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের লক্ষ্য করে।
বিশেষজ্ঞরা নাগরিকদের সতর্ক থাকতে ও কোনও অচেনা কল বা মেসেজে ব্যক্তিগত তথ্য না দিতে অনুরোধ করেছেন। 💰⚠️
💰 পুরুলিয়ায় পেনশন প্রতারণায় রেলকর্মীর কাছ থেকে উধাও সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা 😨
পুরুলিয়া জেলায় ফের এক চাঞ্চল্যকর সাইবার প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে যা আজ গোটা জেলার মানুষকে নাড়া দিয়েছে।
শান্ত, নিরিবিলি দুবড়া গ্রাম, যা পাড়া থানার অন্তর্গত, সেখানে ঘটে গেছে এই ভয়াবহ আর্থিক প্রতারণা।
এক অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী, যিনি বহু বছর রেল দপ্তরে সততার সঙ্গে কাজ করেছেন, নিজের পেনশন চালুর আশায় এমন এক প্রতারণার শিকার হলেন যা তাঁর জীবনের সঞ্চয় সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে।
পেনশন চালুর প্রক্রিয়ার নাম করে এক অচেনা কলের ফাঁদে পড়ে ওই বৃদ্ধ নিজের অজান্তেই সমস্ত তথ্য শেয়ার করেন, আর সেই ভুলেই তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে মুহূর্তের মধ্যে উধাও হয়ে যায় প্রায় ₹১২.৫ লক্ষ টাকা।
এই ঘটনায় শুধু বৃদ্ধই নয়, স্থানীয় বাসিন্দারাও স্তম্ভিত। অনেকে বলছেন, “এমন শান্ত এলাকায় সাইবার অপরাধ! এটা তো ভাবাই যায় না।”
এখন এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ, তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়েছে— “এবার কার পালা?” 😟
🕵️♂️ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
ঘটনাটি শুরু হয় এক সাধারণ সোমবার সকালে। অবসরপ্রাপ্ত ওই রেলকর্মীর ফোনে আসে এক অচেনা নম্বর থেকে কল।
অপর প্রান্তের ভদ্র কণ্ঠটি নিজেকে রেলের একজন পেনশন অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, “স্যার, আপনার পেনশন চালুর ফাইলটি আমাদের অফিসে রয়েছে, কিন্তু কিছু নথি ভেরিফিকেশন বাকি আছে। আপনি যদি এখনই কিছু তথ্য দেন, তাহলে আজই আপনার পেনশন অ্যাক্টিভ হয়ে যাবে।”
দীর্ঘদিন ধরে পেনশন চালু হওয়ার অপেক্ষায় থাকা বৃদ্ধ স্বাভাবিকভাবেই আশাবাদী হয়ে ওঠেন।
তিনি বিনা দ্বিধায় কথোপকথনে সাড়া দেন এবং কলকারী যেসব তথ্য চান, যেমন আধার নম্বর, প্যান কার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর এমনকি OTP, সবকিছুই দিয়ে দেন।
কলটি শেষ হওয়ার পরও তিনি সন্দেহ করেননি, কারণ অপর প্রান্তের ব্যক্তি বেশ পেশাদার ভঙ্গিতেই কথা বলেছিলেন।
কিন্তু ঠিক পরের দিন সকালে ব্যাংকের এসএমএসে চোখ পড়তেই তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
তিন দফায় মোট ₹১২,৫০,০০০ টাকা উধাও! এই বিশাল অঙ্কের অর্থ এক মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় বৃদ্ধ হতবাক হয়ে পড়েন।
তিনি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে যোগাযোগ করেন, কার্ড ব্লক করেন, এবং সাইবার ক্রাইম হেল্পলাইন ১৯৩০ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানান।
পরে তিনি নিজেই পাড়া থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে, তবে অপরাধীরা এখনও ধরা পড়েনি।
এই প্রতারণার ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, প্রতারকরা এখন কতটা পরিকল্পিতভাবে সিনিয়র সিটিজেনদের টার্গেট করছে। 😢
🚨 পুলিশের পদক্ষেপ ও তদন্তের অগ্রগতি
অভিযোগ পাওয়ার পরই পাড়া থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাটির তদন্ত শুরু করে। ব্যাংকের ট্রানজাকশন রেকর্ড, কল ডিটেইলস, এবং প্রতারণায় ব্যবহৃত ফোন নম্বরের ট্রেসিং ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
থানার এক আধিকারিক বলেন, “আমরা দেখছি টাকা কোন অ্যাকাউন্টে গিয়েছে এবং সেই অ্যাকাউন্ট কার নামে রয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি একটি সংগঠিত সাইবার গ্যাংয়ের কাজ।”
পুলিশ আরও জানিয়েছে, এই ধরনের প্রতারণার ক্ষেত্রে টাকা প্রায়ই একাধিক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয় যাতে ট্র্যাক করা কঠিন হয়ে যায়। তাই তদন্তে কিছুটা সময় লাগছে।
তবে পুলিশ প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, অভিযুক্তদের খুব শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে, বৃদ্ধের পরিবারও পুলিশের প্রতি ভরসা রেখেছেন।
বৃদ্ধের পুত্র বলেন, “আমরা চাই দোষীরা শাস্তি পাক। এটা শুধু আমাদের পরিবারের ক্ষতি নয়, অন্যদেরও শিক্ষা হওয়া দরকার।” 👮♂️
📈 দেশজুড়ে পেনশন প্রতারণার বাড়বাড়ন্ত
এই ঘটনাটি পুরুলিয়ার হলেও, এমন প্রতারণা এখন দেশজুড়েই মাথাচাড়া দিচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের লক্ষ্য করেই গড়ে উঠেছে নতুন প্রজন্মের সাইবার গ্যাং।
এই প্রতারকরা নিজেদের ‘রেল অফিসার’, ‘পেনশন অফিসার’ বা ‘সরকারি প্রতিনিধি’ বলে দাবি করে ফোন, ইমেল বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করছে।
তারা প্রথমে ভদ্রভাবে কথা বলে আস্থা অর্জন করে, এরপর কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেকেই টেরই পান না যে তাঁরা ফাঁদে পড়েছেন, যতক্ষণ না ব্যাংকের ব্যালান্স শূন্য হয়ে যায়।
সাইবার সেলের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশজুড়ে এ ধরনের ৩০০০টিরও বেশি অভিযোগ এসেছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের।
এই প্রবণতা দেখে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলছেন, “ডিজিটাল সিস্টেম যেমন সুবিধা দিয়েছে, তেমনই অপরাধের নতুন দরজাও খুলে দিয়েছে।”
তাই এখন থেকেই সাবধান না হলে আগামী দিনে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। 📊
⚠️ নাগরিকদের জন্য সতর্কবার্তা ও পরামর্শ
সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সচেতনতা ও সতর্কতা। প্রতারকরা অত্যন্ত পেশাদারভাবে কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
তাই যে কোনও অচেনা কল বা মেসেজ পেলেই সতর্ক হতে হবে। মনে রাখবেন— সরকারি অফিস কখনও ফোনে OTP বা অ্যাকাউন্ট তথ্য চায় না।
যদি কেউ দাবি করে, তবে সেটা প্রায় নিশ্চিতভাবেই প্রতারণা। আপনার কাছে যদি কোনও অচেনা লিংক বা অ্যাপ ইনস্টল করতে বলা হয়, সঙ্গে সঙ্গে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করুন।
প্রয়োজনে পরিবারের কাউকে বা ব্যাংকের অফিসিয়াল নম্বরে ফোন করে বিষয়টি যাচাই করুন।
এছাড়াও, সাইবার হেল্পলাইন ১৯৩০ নম্বরটি মনে রাখুন, এটি যে কোনও সময় আপনার সহায়ক হতে পারে।
এই সতর্কতাগুলি মানলে অন্তত প্রতারণার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। 🛡️
💔 বৃদ্ধের মানসিক অবস্থা ও সমাজের প্রতিক্রিয়া
বৃদ্ধ রেলকর্মী বর্তমানে গভীর মানসিক আঘাতের মধ্যে রয়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, “আমি জীবনের সঞ্চয় রেখেছিলাম ভবিষ্যতের নিশ্চয়তার জন্য। এখন সব শেষ। ভাবিনি এমনভাবে প্রতারিত হব।”
তাঁর কণ্ঠে ছিল অসহায়তার সুর, চোখে জল। পরিবারের সদস্যরাও ভীষণ উদ্বিগ্ন। তাঁদের বক্তব্য, “আমাদের বাবার এই বয়সে এমন মানসিক ধাক্কা সহ্য করা খুব কঠিন।”
প্রতিবেশীরাও শোকাহত। তারা বলছেন, “এমন ঘটনা আগে কখনও শুনিনি। এটা আমাদের জন্যও একটা শিক্ষা।”
গ্রামে এখন চূড়ান্ত আতঙ্কের পরিবেশ। সবাই নিজের তথ্য কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়ে চিন্তিত।
অনেকেই বলছেন, গ্রামের মানুষ এখনও এতটা প্রযুক্তি-সচেতন নয়, তাই প্রতারকরা সহজেই সুযোগ নিচ্ছে।
এজন্য স্থানীয় ক্লাব ও পেনশনভোগীদের সংগঠন মিলে সচেতনতা শিবির করার পরিকল্পনা নিয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন ক্ষতির সম্মুখীন না হন। 💔
🧠 সচেতন থাকুন নিরাপদ থাকুন
বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রতারণার ধরন বদলে গেছে। আগে যেখানে অপরাধীরা সরাসরি মুখোমুখি প্রতারণা করত, এখন তা ঘটছে মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
একটা ফোন, একটা ভুল ক্লিক— আর মুহূর্তেই উধাও হচ্ছে সারা জীবনের সঞ্চয়। তাই এখন থেকে নিজের ব্যক্তিগত তথ্যকে নিজের সম্পত্তির মতোই সুরক্ষিত রাখতে হবে।
কোনও অপরিচিত ব্যক্তি অফিসিয়াল পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করলে আগে তা যাচাই করুন। সরকারি কাজ সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য শুধু সরকারি ওয়েবসাইট থেকেই সংগ্রহ করুন।
সচেতন নাগরিকই নিরাপদ নাগরিক।
এই কথাটিই আজ সবচেয়ে বড় বার্তা। পুরুলিয়ার এই ঘটনাটি যেন আরেকজনকেও সচেতন করে তোলে— এটাই সমাজের প্রত্যাশা। 🌐