পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে বৈঠক ব্যর্থ।
পুরুলিয়া গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজে উত্তেজনা চরমে। ইন্টার্ন ও মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে।
বৃহস্পতিবারের দীর্ঘ বৈঠকেও প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও কলেজ কর্তৃপক্ষ সমাধানে পৌঁছতে ব্যর্থ।
ফলে হাসপাতাল চত্বরে তীব্র বিক্ষোভ ও গেট অবরোধের ঘটনা ঘটে। ভাইরাল হয় সহসভাধিপতি ও ইন্টার্নদের কথাকাটাকাটির ভিডিও।
ইন্টার্নদের দাবি, নিরাপত্তা ও অবকাঠামোর অভাব দূর করতে হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে স্থানান্তর প্রয়োজন। প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও আন্দোলন চলছে।
🏥 বৈঠক ব্যর্থ পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্নদের আন্দোলনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি 😷🔥
পুরুলিয়া গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ঘিরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তীব্র উত্তেজনা।
দিনের শুরুতে আশা করা হয়েছিল, দীর্ঘ আলোচনার পর হয়তো সমাধান আসবে, কিন্তু সব আশাই মিশে গেল হতাশায়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিক, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একাধিক দফায় বৈঠক হলেও কোনও সমঝোতা হয়নি।
ফলে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে একদিকে হাসপাতালের পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ, অন্যদিকে ইন্টার্ন ও মেডিক্যাল পড়ুয়াদের ক্ষোভ চরমে। কলেজ চত্বরের প্রতিটি কোণে এখন উদ্বেগ, রাগ আর হতাশার মিশ্র সুর।
ইন্টার্নদের দাবি, বহুদিন ধরে তাঁরা অবকাঠামোগত সমস্যায় ভুগছেন। বারবার জানানো সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের তরফে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এরই প্রতিবাদে তাঁরা সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে গিয়েছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবারের বৈঠক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
আলোচনার পর যখন সমাধানের আশায় সকলে তাকিয়ে ছিলেন, তখনই বৈঠক ভেস্তে যায় এবং হাসপাতাল চত্বর পরিণত হয় উত্তপ্ত বিক্ষোভস্থলে।
⚡ বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনার আগুন 🔥
বুধবার বিকেলের বৈঠকটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিক, জেলা প্রশাসনের কর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং কলেজের অধ্যক্ষ— সকলে উপস্থিত ছিলেন সেই বৈঠকে।
উদ্দেশ্য ছিল ইন্টার্ন ও মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের সমাধান খোঁজা। কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা চললেও, কোনও দিকনির্দেশ বা সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।
ইন্টার্নদের দাবিকে প্রশাসন ‘সময়সাপেক্ষ’ বলে উল্লেখ করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা।
বৈঠক শেষে প্রশাসনের গাড়ি যখন হাসপাতাল থেকে বেরোতে চাইল, তখনই শুরু হয় বিক্ষোভ। মূল গেট বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন ও মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীরা।
বিক্ষোভকারীরা দাবি তোলেন, “আমাদের ন্যায্য দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কোনও আলোচনার অর্থ নেই।”
এই অবস্থায় হাসপাতালের ভেতরে আটকে পড়েন জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহসভাধিপতি, তৃণমূল বিধায়কসহ একাধিক জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ কর্তা।
প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বাইরে থেকে গেট বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হতে থাকে।
হাসপাতালের ভিতরে আটকে পড়া কর্তারা প্রশাসনের মাধ্যমে আলোচনার আবেদন জানান।
কিন্তু ইন্টার্নরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। এই অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী ও তাদের পরিবারের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়ায়।
রোগী পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে জরুরি বিভাগও কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
📹 ভাইরাল ভিডিওতে নতুন বিতর্ক রাজনীতিতে আলোড়ন
এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই ঘটে এক বিতর্কিত ঘটনা, যা পুরো জেলা জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
জেলা পরিষদের সহসভাধিপতি সুজয় ব্যানার্জী গেট আটকানো নিয়ে ইন্টার্নদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
উপস্থিত ছাত্রছাত্রীরা ও তিনি মুখোমুখি হয়ে পড়েন, এবং বাকবিতণ্ডার সেই দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করেন কেউ। মুহূর্তের মধ্যেই সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তেজনার মধ্যে সহসভাধিপতি ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। কারও কণ্ঠে রাগ, কারও কণ্ঠে হতাশা।
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই জেলার রাজনৈতিক মহলে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। বিরোধী দলগুলি অভিযোগ তোলে— প্রশাসন ও শাসক দলের প্রতিনিধিরা ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন দমনে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করছে।
অন্যদিকে শাসক দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আন্দোলনটি কিছু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মহল দ্বারা উস্কানিমূলকভাবে চালানো হচ্ছে।
তবে সুজয় ব্যানার্জী সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমি শুধু পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছিলাম। কেউ যদি সেটাকে ভুলভাবে দেখেন, সেটা দুঃখজনক।”
কিন্তু ততক্ষণে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষের হাতে, এবং জেলার রাজনীতিতে নতুন ঝড় তুলেছে।
এই ভাইরাল ঘটনার পর প্রশাসন আরও সতর্ক হয়ে যায়, এবং পুলিশ বাহিনী বাড়ানো হয় হাসপাতাল চত্বরে।
🚧 দুই ঘণ্টার অবরোধ প্রশাসনের তৎপরতায় অবশেষে মুক্তি
প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে হাসপাতালের মূল গেট তালাবদ্ধ থাকায় ভেতরে-বাইরে সৃষ্টি হয় তীব্র বিশৃঙ্খলা।
যেসব জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্য আধিকারিক ও পুলিশ কর্মকর্তা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা ভিতরে আটকে পড়েন।
বাইরে থেকে শতাধিক ইন্টার্ন ও ছাত্রছাত্রী স্লোগান দিতে থাকেন, “হাতোয়াড়ায় স্থানান্তর চাই,” “নিরাপত্তা চাই,” “ন্যায্য দাবি চাই।”
এই অবস্থায় জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছন। তাঁরা ইন্টার্নদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন।
দীর্ঘ বোঝাপড়ার পর অবশেষে গেট খোলা হয় এবং ভিতরে আটকে থাকা কর্মকর্তারা বাইরে আসেন। তবে পরিস্থিতি শান্ত হলেও ক্ষোভের আগুন নিভে যায়নি।
ইন্টার্নদের বক্তব্য, তাঁদের আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়; এটি সম্পূর্ণভাবে পড়াশোনা ও কাজের উপযুক্ত পরিবেশের দাবিতে।
প্রশাসনের আশ্বাস তাঁরা শুনেছেন, কিন্তু এখনও তাঁদের মনে সন্দেহ— প্রতিশ্রুতি কি সত্যিই বাস্তবায়িত হবে?
🩺 ইন্টার্নদের ন্যায্য দাবি ও অবকাঠামোগত সমস্যার বিবরণ
পুরুলিয়া গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের দুটি পৃথক ক্যাম্পাস রয়েছে— একটি শহরে এবং অন্যটি হাতোয়াড়ায়। এই দুটি ক্যাম্পাসের মধ্যে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরত্ব।
ইন্টার্ন ও মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীদের মতে, প্রতিদিন এই দূরত্ব পেরিয়ে যাতায়াত করা অত্যন্ত কষ্টকর।
শুধু তাই নয়, রাতে পরিবহণের অভাব ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব তাঁদের আতঙ্কিত করে তুলছে।
তাঁদের দাবি, সমস্ত বিভাগ ও ক্লাস যদি হাতোয়াড়ার ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হয়, তাহলে শিক্ষা ও পরিষেবা দুটোই স্বাভাবিকভাবে চলবে।
কিন্তু এতদিনেও সেই দাবি পূরণ হয়নি। বারবার আবেদন করেও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাঁরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনের পথে নেমেছেন।
ইন্টার্নদের অভিযোগ, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের সমস্যার গুরুত্ব বুঝতে পারছে না। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা, ল্যাব সরঞ্জাম, থাকার জায়গা — কিছুই পর্যাপ্ত নয়।
তাঁরা বলেন, “আমরা দিনরাত কাজ করি, রোগীর সেবা করি, কিন্তু নিজের নিরাপত্তা আর স্বাচ্ছন্দ্য আমাদের কাছে বিলাসিতা।”
এই বক্তব্যে ফুটে উঠেছে তাঁদের যন্ত্রণা ও ক্ষোভ, যা আজ রাস্তায় বিক্ষোভে রূপ নিয়েছে।
🕊️ প্রশাসনের আশ্বাসেও অনড় ইন্টার্নরা
বৈঠকের শেষে প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়, ইন্টার্নদের দাবি বিবেচনা করা হবে এবং দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলবে। কিন্তু ইন্টার্নরা তাতে রাজি নন।
তাঁদের বক্তব্য, অতীতে এমন অনেক আশ্বাস মিলেছে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই পরিবর্তন হয়নি। তাই এবার তাঁরা দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন।
এই অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত ভেঙে পড়েছে। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে রোগীদের ভিড় থাকলেও চিকিৎসক সংখ্যা কম।
প্রশাসন বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে।
রাতের বেলায় পুলিশ টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে নিরাপত্তা বজায় থাকে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক সিনিয়র আধিকারিক বলেন, “আমরা চাই এই সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব মিটুক। ছাত্রছাত্রীদের দাবি কিছুটা যুক্তিযুক্ত, তবে সেটি নিয়ম মেনে সমাধান করতে হবে।”
😔 রোগী ও স্থানীয়দের দুর্ভোগ
এই চলমান কর্মবিরতির প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবনে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীরা এখন চিকিৎসা না পেয়ে বিপাকে পড়ছেন।
হাসপাতালের ভেতরে অপেক্ষারত রোগী ও তাঁদের পরিবার উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন।
একজন রোগীর আত্মীয়ের বক্তব্য, “আমার ভাই তিন দিন ধরে ভর্তি আছে, কিন্তু ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না, ডাক্তার নেই। কবে সুস্থ হবে কে জানে।” এই অবস্থায় মানবিক দিক থেকে বিষয়টি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠছে।
অন্যদিকে, ইন্টার্নরা জানিয়েছেন, “আমরা রোগীদের কষ্ট বুঝি, কিন্তু আমাদের সমস্যার সমাধান না হলে আমরা ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদের মুখে পড়ব। তাই আজ না লড়লে আগামীকাল আমাদের অস্তিত্বই থাকবে না।”
তাঁদের এই অবস্থান থেকে বোঝা যায়, এই আন্দোলন শুধুমাত্র প্রতিবাদ নয়— এটি তাঁদের ভবিষ্যতের সুরক্ষার লড়াই।
🧠 বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ ও পরামর্শ
স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের আন্দোলন শুধু পুরুলিয়া নয়, গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
শিক্ষা ও পরিষেবা— দুই দিকই একসঙ্গে থমকে গেলে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। তাই প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টার্নদের দাবি যথেষ্ট যৌক্তিক। তাঁদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
ভবিষ্যতের চিকিৎসকদের মনোবল ভেঙে গেলে তা পুরো ব্যবস্থার জন্যই বিপজ্জনক হতে পারে।
প্রশাসন, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রছাত্রী— সবাইকে নিয়ে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান আনাই এখন একমাত্র পথ।
🌅 আশার আলো ও ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
বর্তমানে পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে পরিস্থিতি আপাতত কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, তা সাময়িক। ইন্টার্নদের অবস্থান বদলায়নি।
তাঁদের দাবি স্পষ্ট — “সমস্ত বিভাগ হাতোয়াড়ায় না সরানো পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।”
জেলা প্রশাসন এখন কঠিন পরীক্ষার মুখে। একদিকে চিকিৎসা পরিষেবা সচল রাখতে হচ্ছে, অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীদের দাবি উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। জেলার মানুষও এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান চান।
পুরুলিয়ার মানুষ আশা করছেন, প্রশাসন ও ছাত্রদের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
হাসপাতাল আবার ফিরে পাবে তার পুরনো ছন্দ, আর ইন্টার্নরা ফিরে যাবেন তাঁদের পাঠে ও সেবায়। মানবতার জয়ই হোক চূড়ান্ত ফলাফল। ❤️