পুরুলিয়ার জমজমাট দুর্গা কার্নিভাল।

পুরুলিয়ার জমজমাট দুর্গা কার্নিভাল ২০২৫ ✨ আলোর ঝলকানি, রঙিন শোভাযাত্রা আর লোকসংস্কৃতির অনন্য উপস্থাপনা এবার মুগ্ধ করেছে জেলার মানুষকে। 

এবছর মোট ১৪টি পুজো কমিটি অংশ নেয় এই মহোৎসবে, যেখানে প্রতিটি থিমে ফুটে ওঠে সমাজ সংস্কারের গভীর বার্তা। 

বিশেষ আকর্ষণ ছিল পারবেলিয়া নিউ সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির কৃষককেন্দ্রিক থিম “কৃষক হলো অন্নদাতা” এবং রঘুনাথপুর মিশন রোড সর্বজনীন কমিটির নারীশক্তিকে কেন্দ্র করে সাজানো থিম “নারী”। 

এই দুই কমিটি রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের পক্ষ থেকে মর্যাদাপূর্ণ “স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড” পেয়েছে। 🎖️ 

কার্নিভালে ছৌ, নাটুয়া, রণপা নৃত্যের মতো ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতির মেলায় শহরজুড়ে তৈরি হয় উৎসবের আবহ। পুরস্কার প্রাপ্তি শুধু কমিটির নয়, গোটা পুরুলিয়ার গর্ব। 🌸


purulia durga carnival

পুরুলিয়ার দুর্গা কার্নিভালে রাজ্যের পুরস্কার 🏆✨


ভূমিকা 🌸

পুরুলিয়ার দুর্গা পুজো এখন শুধুমাত্র পূজা নয়, এটি জেলার গর্বের উৎসব। প্রতিবছর শহর ও গ্রাম মিলিয়ে দুর্গা কার্নিভালকে ঘিরে জমে ওঠে এক মহোৎসব। 

আলো, সঙ্গীত, নৃত্য, লোকসংস্কৃতির রঙিন মিশ্রণ আর পুজো কমিটিগুলির মনোমুগ্ধকর থিম— সবকিছু মিলিয়ে এই কার্নিভাল পুরুলিয়াকে রাজ্য ও দেশের মানচিত্রে বিশেষভাবে তুলে ধরে। 

এবছরের কার্নিভালের প্রধান আকর্ষণ ছিল, পুরুলিয়ার দুটি পুজো কমিটির হাতে রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের “স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড” তুলে দেওয়া। 🎖️

এই পুরস্কার শুধু একটি সম্মান নয়, বরং পুরুলিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সামাজিক বার্তাকে রাজ্যের সর্বস্তরে স্বীকৃতি দেওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। 

একদিকে পারবেলিয়া নিউ সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি তাদের থিমের মাধ্যমে কৃষির গুরুত্বকে সামনে এনেছে, অন্যদিকে রঘুনাথপুর মিশন রোড কমিটি নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর তুলেছে।

এবারের দুর্গা কার্নিভাল তাই শুধু রঙিন শোভাযাত্রা নয়, বরং সমাজ সংস্কারের বার্তা বহনকারী এক অসাধারণ সাংস্কৃতিক উৎসব হয়ে উঠেছে। 🌺


পুরস্কৃত দুটি পুজো কমিটি 🎉

পুরস্কার জেতা দুটি কমিটি এবছরের কার্নিভালে বিশেষভাবে নজর কেড়েছে।

👉 পারবেলিয়া নিউ সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি – এদের থিম ছিল “কৃষক হলো অন্নদাতা”। এই থিমের মূল বক্তব্য ছিল, কৃষি আমাদের সভ্যতার মূলভিত্তি। কৃষকের কঠোর পরিশ্রম আর ত্যাগ ছাড়া মানুষের জীবনযাত্রা অসম্ভব। 

প্যান্ডেলের সাজসজ্জা থেকে শুরু করে প্রতিমার পেছনে বিশাল লাঙলের প্রতীক— সবকিছুই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলো, উন্নয়নের আলোচনায় কৃষির স্থান সর্বাগ্রে থাকা উচিত। দর্শকরা থিম দেখে আবেগাপ্লুত হয়েছেন।

👉 রঘুনাথপুর মিশন রোড সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি – এদের থিম ছিল “নারী”। বর্তমান সমাজে নারী নির্যাতন, অসমতা, অবহেলার মতো সমস্যা প্রায়শই সামনে আসে। 

এই কমিটি তাদের শিল্পকলা ও থিমের মাধ্যমে সেই সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তুলেছে। দেবীর প্রতিমার চারপাশে নারী শক্তির বিভিন্ন রূপকে প্রতীকীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। 

দর্শকরা এই থিম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নারী সম্মানের বার্তাকে হৃদয়ে ধারণ করেছেন।

এই দুটি থিম শুধু পুরস্কারের দাবিদারই নয়, ভবিষ্যতের পুজো কমিটিগুলির জন্য এক দৃষ্টান্ত।


কার্নিভালের জমজমাট পরিবেশ 🎊

পুরুলিয়ার দুর্গা কার্নিভালের দিন শহর যেন নতুন প্রাণ পায়। রঙিন আলোর ঝলকানি, সঙ্গীতের সুর আর লোকসংস্কৃতির অনবদ্য মেলবন্ধনে শহরজুড়ে তৈরি হয় উৎসবের আবহ। 

এবছরের কার্নিভালে ১৪টি পুজো কমিটি অংশগ্রহণ করে। প্রত্যেক কমিটি তাদের আলাদা থিম নিয়ে হাজির হয়েছিল, যা দর্শকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

দীর্ঘ শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে প্যান্ডেলের ছোট প্রতিরূপ, প্রতিমার প্রতীকী প্রদর্শনী এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপিত হয়। 

মানুষ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে প্রতিটি থিমকে স্বাগত জানায়। শিশু থেকে বৃদ্ধ— সবার চোখে-মুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক।

যেভাবে কলকাতার দুর্গা কার্নিভাল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তেমনই পুরুলিয়ার এই উদ্যোগ এখন ধীরে ধীরে রাজ্যের অন্য জেলার কাছেও অনুকরণীয় হয়ে উঠছে। 

এবারের কার্নিভালের বৈচিত্র্য, সৃজনশীলতা আর আবেগ মিলিয়ে এটি নিঃসন্দেহে ছিল পুরুলিয়ার জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।


অংশগ্রহণকারী পুজো কমিটি 🏮

পুরুলিয়ার দুর্গা কার্নিভালে এবছর যারা অংশ নিয়েছিল, তাদের নাম উচ্চারণ করলে বোঝা যায় এই জেলার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য কত সমৃদ্ধ।

  • বরাবাজার মল্ল পরিবার দুর্গা পুজো কমিটি।

  • পুরুলিয়া শহরের চকবাজার ষোলআনা।

  • রঘুনাথপুর তাঁতীপাড়া ষোলআনা।

  • নিতুরিয়া সরবড়ি সার্বজনীন।

  • মানবাজারের ইন্দকুড়ি সার্বজনীন।

  • মানবাজার গ্রাম্য যোগাশ্রম।

  • আমলাপাড়া সার্বজনীন।

  • রেনি রোড দেবীমেলা।

  • নর্থলেক রোড।

  • তেলকল পাড়া।

  • দেশবন্ধু রোড।

  • রঘুনাথপুর মিশন রোড সার্বজনীন।

  • পুরুলিয়া শহরের নিউ সর্বজনীন দুর্গাপূজা।

  • পারবেলিয়া নিউ সর্বজনীন দুর্গাপূজা।

প্রত্যেক কমিটির থিম ছিল স্বতন্ত্র, যেমন কেউ কৃষি, কেউ নারীশক্তি, কেউ পরিবেশ, আবার কেউ লোকসংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে সাজিয়েছিল তাদের আয়োজন।


লোকসংস্কৃতির ছোঁয়া 🎭

পুরুলিয়ার লোকসংস্কৃতি আজ শুধু বাংলায় নয়, বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। কার্নিভালের মঞ্চে সেই ঐতিহ্যের ঝলক স্পষ্ট দেখা গেল।

  • ছৌ নৃত্য – মুখোশ পরে যোদ্ধার ভঙ্গিমায় পরিবেশিত এই নাচ যুদ্ধ ও বীরত্বের প্রতীক। দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে এই নাচ উপভোগ করেন।

  • নাটুয়া নাচ – গ্রামীণ সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ, যা আনন্দ আর উল্লাসের প্রতীক।

  • রণপা নৃত্য – বাঁশের রণপায়ে দাঁড়িয়ে পরিবেশিত এই নাচ শুধু দক্ষতার পরিচয় নয়, বরং সাহস আর ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ।

দেশবন্ধু রোডের মঞ্চে এসব নাচের সঙ্গে ছিল লোকগান, ঢোলের তালে তালে পরিবেশনা। পুরো পরিবেশ যেন এক মহোৎসবের রূপ নেয়।


পুরস্কারের গুরুত্ব 🏅

রাজ্য সরকারের এই বিশেষ জুরি পুরস্কার শুধুমাত্র একটি সম্মাননা নয়, এটি আসলে এক ধরনের সামাজিক স্বীকৃতি। প্রতিবছর এই পুরস্কার সেইসব পুজো কমিটিকে দেওয়া হয়, যারা—

  • বহু বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে দুর্গাপূজা আয়োজন করছে।

  • সমাজে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার মতো থিম উপস্থাপন করছে।

  • অন্য পুজো কমিটিকে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।

এবারের পুরস্কার প্রমাণ করে দিলো, পুরুলিয়া এখন শুধুমাত্র লোকসংস্কৃতির কেন্দ্র নয়, বরং থিম পুজোর জগতেও রাজ্যের গর্ব।


বিশিষ্ট অতিথিদের উপস্থিতি 👥

কার্নিভালের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাদের মধ্যে ছিলেন—

  • মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু

  • সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো

  • সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়

  • জেলা শাসক রজত নন্দা

  • পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

  • বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন

  • বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো

তাদের উপস্থিতি শুধুমাত্র অনুষ্ঠানকে মর্যাদা দেয়নি, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়েছে। 

রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃত্বের সমন্বয়ই এই ধরনের উৎসবকে সফল করে তোলে।


পুরুলিয়ার দুর্গা পুজো ও সংস্কৃতির তাৎপর্য 🌍

পুরুলিয়ার দুর্গা পুজো এখন গ্রামীণ ও শহুরে সংস্কৃতির সেতুবন্ধন। একদিকে ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি, অন্যদিকে আধুনিক থিম— এই দুইয়ের মিলন ঘটছে প্রতিটি প্যান্ডেলে।

এখানে প্রতিটি থিম শুধু শৈল্পিক নয়, বরং সমাজ সংস্কারের বার্তাও বহন করে। কৃষি, নারীশক্তি, পরিবেশ রক্ষা, শিক্ষা— এসবই বারবার উঠে আসে। ফলে, দুর্গা পুজো হয়ে উঠছে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।


সমাপ্তি 🙏

পুরুলিয়ার এবারের দুর্গা কার্নিভাল আবারও প্রমাণ করলো— উৎসব মানেই কেবল আনন্দ নয়, এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে সমাজ, সংস্কৃতি ও শিক্ষার এক গভীর বার্তা। 

রাজ্যের জুরি পুরস্কার প্রাপ্ত দুটি কমিটি জেলার গর্বকে আরও উজ্জ্বল করলো। 

আগামী দিনে পুরুলিয়ার পুজো শুধুই জেলা নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও নিজেদের জায়গা করে নেবে— এটাই পুরুলিয়াবাসীর আশা।

✨ জয় মা দুর্গা ✨


Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url