টেকনো ইন্ডিয়ার দ্রোণাচার্য পুরস্কার পেলেন অনুপ কুমার মণ্ডল।
পুরুলিয়ার মাটিতে জন্ম নেওয়া গণিত শিক্ষক অনুপ কুমার মণ্ডল এ বার পেলেন এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ-এর মর্যাদাপূর্ণ দ্রোণাচার্য পুরস্কার 🏆।
খুদিবাঁধ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছাত্রছাত্রীদের গণিতকে সহজ ও আনন্দময় করে শেখাচ্ছেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি সমাজকর্মী হিসেবেও তিনি সমান জনপ্রিয়—করোনা কালে অসংখ্য মানুষকে সাহায্য করেছেন এবং বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন।
তাঁর লেখা দুটি গণিত বই—‘সরল জ্যামিতি বোধ’ ও ‘মাধ্যমিক অবজেক্টিভ গণিত’ ছাত্রছাত্রীদের কাছে দিশারী হয়ে উঠেছে।
অনুপবাবুর এই সম্মান পুরুলিয়া জেলাকে গর্বিত করেছে এবং প্রমাণ করেছে যে নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও মানবিকতা থাকলে গ্রাম থেকে উঠে এসেও বিশ্বমানের সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
এই পুরস্কার শুধু একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, বরং গোটা জেলার সম্মান ও অনুপ্রেরণা। 🌟
🎓 পুরুলিয়ার গর্ব: টেকনো ইন্ডিয়ার দ্রোণাচার্য পুরস্কারে সম্মানিত শিক্ষক অনুপ কুমার মণ্ডল
🌟 ভূমিকা: জেলার জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত
পুরুলিয়া জেলার মানুষ আজ এক বিশেষ আনন্দে উজ্জ্বল। কারণ তাঁদের মাটির সন্তান, গণিত শিক্ষক অনুপ কুমার মণ্ডল পেয়েছেন টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের দ্রোণাচার্য পুরস্কার।
এটি কেবল একটি পুরস্কার নয়, বরং সমগ্র জেলার মানুষের গর্বের প্রতীক। শিক্ষকতা এমন এক পেশা যা সমাজের ভিত তৈরি করে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলে।
সেই ক্ষেত্রে অনুপবাবুর দীর্ঘ দিনের ত্যাগ, পরিশ্রম এবং আন্তরিকতার স্বীকৃতি আজ রাজ্য তথা দেশকে গর্বিত করেছে।
পুরুলিয়া-২ ব্লকের খুদিবাঁধ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে তিনি ছাত্রছাত্রীদের গণিত শেখাচ্ছেন।
তাঁর পড়ানোতে যেমন সহজ ভাষা, তেমনই রয়েছে ছাত্রদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা। সেই কারণেই আজ তাঁর হাতে উঠে এসেছে এই গৌরবময় সম্মান। 🌸
👶 শৈশব ও শিক্ষার ভিত্তি
অনুপ কুমার মণ্ডল জন্ম থেকেই ছিলেন একাগ্র ও পড়াশোনায় মনোযোগী। পুরুলিয়ার মাটিতে বড় হওয়া এই শিক্ষক ছোটবেলা থেকেই বই-খাতার সঙ্গী ছিলেন।
তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা পুরুলিয়া জেলা স্কুলে সম্পন্ন হয়। এখান থেকেই তাঁর শিক্ষাজীবনের ভিত গড়ে ওঠে।
এরপর তিনি পুরুলিয়ারই জে কে কলেজে গণিত নিয়ে অনার্স করেন। গণিতের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা তাঁকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যায়, যেখানে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই তিনি একদিন শিক্ষক হবেন বলে মনে মনে সংকল্প করেছিলেন। তাঁর নিজের ভাষায়, “শিক্ষকতা আমার কাছে শুধু পেশা নয়, এটি জীবনের উদ্দেশ্য।”
এভাবেই এক মেধাবী ছাত্র থেকে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠেন এক আদর্শ শিক্ষক। 📘
🏫 শিক্ষকতার শুরু: প্রথম অভিজ্ঞতা
শিক্ষকতার শুরু হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার ব্লকের রাজনগর রামচন্দ্র আদর্শ বিদ্যাপীঠ থেকে। সেখানে প্রথম দিন থেকেই তিনি ছাত্রছাত্রীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। কারণ তাঁর পড়ানোর ধরণ ছিল একেবারেই আলাদা—কঠিন গণিতকেও সহজ ও আনন্দময় করে শেখানো।
সেই সময়েই তিনি কিছু মহান মানুষের সংস্পর্শে আসেন। তাঁদের অনুপ্রেরণায় তিনি বুঝতে পারেন শিক্ষকতা কেবল স্কুলের ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। সেখানেই তিনি ‘নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন’-এর লোকশিক্ষা পরিষদের স্পনসর শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে গণিত শেখানোর সুযোগ পান।
এই অভিজ্ঞতা তাঁর শিক্ষকতা জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। 🙌
📚 বই লেখক হিসেবে অবদান
শুধু স্কুলে পড়ানোতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি অনুপবাবু। গণিতকে আরও সহজভাবে উপস্থাপন করতে তিনি লেখেন দুটি বই—
-
সরল জ্যামিতি বোধ।
-
মাধ্যমিক অবজেক্টিভ গণিত।
এই বই দুটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় এবং খুব দ্রুত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বইগুলিতে গণিতের জটিল অধ্যায়গুলোকে তিনি অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন।
ফলে, অনেক ছাত্রছাত্রীর কাছে গণিত আর ভয়ের বিষয় নয়, বরং আনন্দের পাঠ হয়ে দাঁড়ায়।
বই লেখার মাধ্যমে তাঁর অবদান শুধু বিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং সমগ্র বাংলার ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। ✨
🏠 নিজের জেলায় ফেরা: পুরুলিয়ায় নতুন অধ্যায়
কিছু বছর পূর্ব মেদিনীপুরে শিক্ষকতা করার পর বদলি হয়ে তিনি ফিরে আসেন নিজের জন্মভূমি পুরুলিয়ায়। বর্তমানে তিনি খুদিবাঁধ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
নিজের জেলায় ফিরে আসা তাঁর জন্য এক আবেগঘন মুহূর্ত ছিল। এখানে তিনি শুধু শিক্ষক হিসেবেই কাজ করছেন না, বরং ছাত্রছাত্রীদের মানসিক উন্নতিতেও ভূমিকা রাখছেন।
অনেক গ্রামীণ পরিবারের ছেলে-মেয়েরা আজ তাঁর অনুপ্রেরণায় উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখছে। 🌱
🤝 সমাজকর্মী হিসেবে অনুপবাবু
শিক্ষকের পাশাপাশি তিনি এক নিভৃতচারী সমাজকর্মী। করোনা কালে যখন চারিদিকে ভয়, অসহায়ত্ব আর হতাশা ঘিরে ধরেছিল, তখন তিনি নিজ উদ্যোগে অসংখ্য মানুষকে সাহায্য করেছিলেন।
🙌 উল্লেখযোগ্য সমাজসেবামূলক কাজ
-
ছেলের জন্মদিনে ‘আপনা ঘর আশ্রম’-এর আবাসিকদের জন্য আয়োজন করেছিলেন বিশেষ ভোজ।
-
গ্রামের অসহায় মানুষদের জন্য ওষুধ, খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন।
-
ছাত্রছাত্রীদের পাশে থেকেছেন মানসিকভাবে।
তিনি কখনোই এই কাজগুলিকে প্রচার করতে চাননি। তাঁর কথায়, “মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমার কর্তব্য। এতে বাড়তি কিছু নেই।” 🌸
🏆 দ্রোণাচার্য পুরস্কারের মর্যাদা
টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর শিক্ষা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মানিত করতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
এই বছর পুরস্কারের তালিকায় স্থান পেয়েছেন অনুপ কুমার মণ্ডল।
এটি প্রমাণ করে যে একজন শিক্ষক কেবল পাঠদান করলেই নয়, বরং নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও সমাজের জন্য কাজ করেও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারেন।
পুরস্কারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সমগ্র পুরুলিয়ায় আনন্দের জোয়ার বইছে। 🎉
❤️ জেলার মানুষের প্রতিক্রিয়া
পুরুলিয়ার সাধারণ মানুষ এই সম্মানকে নিজেদের সম্মান মনে করছেন। অনেক অভিভাবক বলছেন, তাঁদের সন্তানেরা যদি অনুপ স্যারের মতো শিক্ষকের কাছে পড়তে পারে, তবে সেটাই সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য।
অনেক ছাত্রছাত্রী জানিয়েছে, স্যারের পড়ানোতে গণিত এত সহজ লাগে যে তারা আর ভয় পায় না। সমাজের মানুষও মনে করেন, এমন একজন শিক্ষকই জেলার উন্নতির আসল চালিকাশক্তি। 🌟
🔮 ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা
এই পুরস্কার নিঃসন্দেহে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।
-
শিক্ষকরা বুঝবেন, তাঁদের কাজ অমূল্য এবং সমাজ তাদের যথাযথ সম্মান দেবে।
-
ছাত্রছাত্রীরা দেখবে, নিষ্ঠা থাকলে ছোট জেলা থেকেও বিশ্বমানের সাফল্য আসতে পারে।
পুরুলিয়ার মানুষ আজ গর্বিত কারণ তাঁদের সন্তানরা জানছে—শিক্ষকতা শুধু একটি চাকরি নয়, এটি সমাজগঠনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।
✨ উপসংহার: পুরুলিয়ার গর্ব
অধ্যবসায়ী ছাত্র থেকে দক্ষ শিক্ষক, শিক্ষক থেকে সমাজকর্মী—সব দিকেই উজ্জ্বল অনুপ কুমার মণ্ডল। তাই তাঁর হাতে দ্রোণাচার্য পুরস্কার আসা একেবারেই প্রাপ্য।
👉 তিনি শুধু পুরস্কৃত নন, তিনি আজ পুরুলিয়ার গর্ব। এই সম্মান প্রমাণ করে—একজন সত্যিকারের শিক্ষক তাঁর আলোয় পুরো সমাজকে আলোকিত করতে পারেন। 🌸