ডা*ইনি সন্দেহে খু*নের পর পরিবারের পাশে বিজ্ঞান মঞ্চ।

পুরুলিয়ার চাপুড়ি গ্রামে পদবী টুডু নামে এক আদিবাসী গৃহবধূকে ‘ডাইনি’ সন্দেহে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। 

হত্যাকাণ্ডের পর পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং আইনি সহায়তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। 

গ্রামের মানুষ এখনো আতঙ্ক ও শোকের মধ্যে আছে। নিহতের স্বামী ও কন্যা দোষীদের দ্রুত শাস্তি দাবি করছেন। 

বিজ্ঞান মঞ্চ গ্রামে সচেতনতা মূলক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে কুসংস্কার ও ভয়ের বিরুদ্ধে মানুষকে শিক্ষিত করতে চাইছে। 

এই ঘটনা সমাজে নারীর নিরাপত্তা, সামাজিক সচেতনতা এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব তুলে ধরেছে। শোক, আতঙ্ক এবং ন্যায়ের দাবি মিলেমিশে পুরো গ্রামের জীবনকে প্রভাবিত করছে।


pashe vigyan mancha

চাপুড়িতে ‘ডাইনি সন্দেহে’ খুন, পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান 😢

পুরুলিয়ার চাপুড়ি গ্রামে এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড পুরো এলাকার মানুষকে শোক ও আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। 

সোমবার রাতের মধ্যেই পদবী টুডু নামে এক আদিবাসী গৃহবধূকে ‘ডাইনি’ সন্দেহে হত্যা করা হয়। ঘটনার চার দিন পেরিয়েছে, কিন্তু গ্রামে এখনও শোক ও ভয় ছড়িয়ে আছে।

গ্রামের লোকেরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পদবী টুডুকে নানা কুসংস্কার এবং গুজবের মাধ্যমে অপমান করা হতো। 

‘ডাইনি’ বলে তার বিরুদ্ধে ভয় ও আতঙ্ক ছড়ানো হত। এই কুসংস্কার ও ভয়মূর্তির প্রভাবে গ্রামের মানুষ মানসিক চাপের মধ্যে ছিল। 

এই নির্মম হত্যাকাণ্ড গ্রামীণ সমাজের ন্যায় ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।


হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত 🩸

পাড়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার রাতের ওই রাতে শ্বশুরবাড়ির কয়েকজন পদবী টুডুর ওপর চড়াও হয়। 

তারা ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে আঘাত করে। রক্তক্ষরণ শুরু হয়, এবং ঘটনাস্থলেই গৃহবধূ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত। নিহতের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির সম্পর্ক সুসম্পর্কের নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক ও পারিবারিক উত্তেজনা বিদ্যমান ছিল। 

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে দুইজন মহিলা রয়েছেন। গ্রেফতারদের রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হয়েছে।


পরিবারের প্রতিক্রিয়া 💔

নিহতের স্বামী সুভাষ টুডু জানান, “বছরের পর বছর ধরে আমার স্ত্রীকে ‘ডাইনি’ বলে অপমান করা হতো। সোমবার তারা মিলে আমার স্ত্রীকে হত্যা করল।”

নিহতের মেয়ে ঊষারানি টুডু কেঁদে বলেন, “মা বহুদিন ধরে নির্যাতিত ছিলেন। আমি নিজের চোখে দেখেছি কীভাবে ওরা মাকে হত্যা করেছে। দোষীদের শাস্তি চাই।”

পরিবারের শোক গভীর। তারা কেবল দোষীদের শাস্তি চাই না, গ্রামে এমন কুসংস্কার এবং নৃশংসতা বন্ধ করতে চায়। এ ঘটনার প্রভাব শুধু পরিবারে নয়, পুরো গ্রামে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।


গ্রামের অবস্থা ও আতঙ্ক 🏚️

ঘটনার পর গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেক মানুষ রাতের শব্দ এবং চিৎকার এখনও মনে করে। গ্রামের শিশু ও মহিলা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

লোকেরা জানাচ্ছে, এমন ঘটনা গ্রামের সামাজিক সম্পর্কের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

গ্রামের বড়রা বলছেন, কুসংস্কার এবং ভয়মূর্তির কারণে মানুষ মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। স্থানীয় মানুষ আশা করছেন, প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং গ্রামে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।


বিজ্ঞান মঞ্চের পদক্ষেপ 👩‍🔬

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলা শাখা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় জানান,

“আমরা নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। তাদের আইনি সহায়তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। গ্রামে সচেতনতা মূলক কর্মসূচিও গ্রহণ করা হবে। আমরা চাই দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।”

এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রামের মানুষকে মানসিক সমর্থন এবং নিরাপত্তার অনুভূতি দিচ্ছে।


পুলিশি তদন্ত ও গ্রেফতার 👮‍♂️

পাড়া থানার পুলিশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে দুইজন মহিলা রয়েছেন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও লোহার রড উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। গ্রেফতারদের রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হয়েছে। তদন্ত চলমান এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।


কুসংস্কার ও সামাজিক সচেতনতা 📚

পদবী টুডু হত্যার মূল কারণ হলো দীর্ঘদিনের কুসংস্কার। গ্রামে ‘ডাইনি’ সন্দেহে মানুষকে অপমান করা হত। কুসংস্কার ও ভয়মূর্তির প্রভাবে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়েছে।

বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে সচেতনতা মূলক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে গ্রামে শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ানো হচ্ছে। মানুষকে বোঝানো হচ্ছে, কুসংস্কার ও ভয়ের প্রতি বিশ্বাস সমাজের জন্য ক্ষতিকর।


নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা 👩‍👧

ঘটনার ফলে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে গ্রামে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। শিশুদের শিক্ষার ওপরও প্রভাব পড়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গ্রামে নারী ও শিশুরা যেন নিরাপদ থাকে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

সচেতনতা বৃদ্ধি, আইন প্রয়োগ এবং সামাজিক সমর্থনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।


আইনি প্রতিকার ও ন্যায় ⚖️

নিহতের পরিবার এবং স্থানীয় মানুষ আশা করছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করেছে, দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এই হত্যাকাণ্ড আমাদের শেখাচ্ছে, কুসংস্কার ও সামাজিক অবহেলা কীভাবে জীবনকে বিপন্ন করতে পারে। দোষীদের শাস্তি শুধু ন্যায় নয়, ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা।


সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ 🌱

গ্রামে সামাজিক ও শিক্ষামূলক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হচ্ছে। গ্রামের মানুষকে কুসংস্কার থেকে মুক্তি দেওয়া এবং নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতা মূলক কর্মসূচি চালানো হবে।

শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব। বিজ্ঞান মঞ্চ এবং প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টা গ্রামে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।


উপসংহার ✨

পদবী টুডুর হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র একটি পরিবার নয়, পুরো গ্রামের জন্য শোকের কারণ। দোষীদের শাস্তি, সামাজিক সচেতনতা এবং নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

আমাদের সকলের দায়িত্ব হলো কুসংস্কার ও ভয়মূর্তিকে সমাজ থেকে দূর করা। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা এবং মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করা অপরিহার্য।

“চাপুড়ির এই ঘটনা আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে—ভয় ও কুসংস্কার নয়, সচেতনতা ও মানবিকতা আমাদের সমাজকে নিরাপদ করে।”


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url