ঝালদায় টেরাকোটা শিল্পে সেজে উঠল দুর্গাপুজো মণ্ডপ।
ঝালদার নামোপাড়া সর্বজনীনের দুর্গাপুজোয় এ বছর দেখা গেল এক অনন্য রূপ, যেখানে মণ্ডপসজ্জায় ফুটে উঠেছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী টেরাকোটা শিল্পের অপরূপ সৌন্দর্য।
পোড়ামাটির কারুকার্য ও বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় তৈরি এই মণ্ডপ দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন ও বর্তমান বিধায়ক সহ বহু বিশিষ্টজন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছৌ নাচের পরিবেশনা জমিয়ে তোলে আবহ, যা পুরুলিয়ার সংস্কৃতিকে নতুনভাবে প্রকাশ করেছে। হাজারো দর্শনার্থীর ভিড়ে মণ্ডপ প্রাঙ্গণ রূপ নিয়েছে এক "চাঁদের হাটে"।
আলো, ভক্তি, শিল্পকলা ও সংস্কৃতির এই মিলনক্ষেত্রে ঝালদার দুর্গাপুজো প্রমাণ করলো, এটি কেবল পূজা নয়, বরং বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির মহোৎসব।
টেরাকোটা শিল্পে ঝালদার দুর্গাপুজো: ঐতিহ্য, শিল্প ও আনন্দের মিলন 🎭✨
ঝালদার সাংস্কৃতিক আবহে দুর্গাপুজো 🌸
পুরুলিয়ার পশ্চিম প্রান্তের ঝালদা বরাবরই পরিচিত তার শিল্প-সংস্কৃতি, লোকঐতিহ্য এবং প্রাণবন্ত উৎসবমুখরতার জন্য।
এবারের দুর্গাপুজোয় সেই ঐতিহ্যের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো ঝালদা নামোপাড়া সর্বজনীন দুর্গাপুজো। মণ্ডপসজ্জায় এ বছর বেছে নেওয়া হয়েছে বাংলার গর্ব টেরাকোটা শিল্প।
পোড়ামাটির ফলক আর সূক্ষ্ম কারুকার্যে সাজানো এই মণ্ডপ যেন দর্শকদের নিয়ে গেল সরাসরি বিষ্ণুপুরের ঐতিহাসিক মন্দির চত্বরে।
ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশাসনের অন্যান্য পদস্থ আধিকারিক, এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক নেপাল মাহাতো এবং বর্তমান বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো।
সবার উপস্থিতিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিণত হয়েছিল শিল্প, ভক্তি আর উৎসবের এক অনন্য মিলনক্ষেত্রে।
👉 এই পুজো শুধু দেবী দুর্গার পূজা নয়, বরং স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক দুর্লভ প্রদর্শনী।
টেরাকোটা শিল্প: বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক 🏺
বাংলার ইতিহাসে টেরাকোটা শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষত বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের সময়কাল থেকে এই শিল্পের বিকাশ ঘটে।
পোড়ামাটির ফলকে ফুটে ওঠে দেবদেবীর ছবি, ধর্মীয় কাহিনি, ফুল-পাতার নকশা এবং গ্রামীণ জীবনের প্রতিচ্ছবি। টেরাকোটার মাধ্যমে শুধু সৌন্দর্য নয়, বরং এক পুরো সভ্যতার গল্প বলা হয়।
ঝালদার এই মণ্ডপে সেই টেরাকোটার ঐতিহ্যকে আধুনিক রূপে তুলে ধরা হয়েছে। বিশাল কাঠামোতে পোড়ামাটির ফলক বসিয়ে মণ্ডপকে সাজানো হয়েছে এক শিল্পকর্মে।
আলোকসজ্জায় যখন মণ্ডপটি আলোকিত হয়, মনে হয় যেন একটি জীবন্ত ইতিহাস দাঁড়িয়ে আছে চোখের সামনে।
দর্শনার্থীরা বলছেন – “এমন মণ্ডপ আগে দেখা যায়নি। মনে হচ্ছে যেন ইতিহাস বই থেকে টেরাকোটা শিল্প আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।”
👉 এই শিল্পের মাধ্যমে ঝালদা প্রমাণ করল, বাংলার ঐতিহ্য আজও বেঁচে আছে মানুষের হৃদয়ে।
ছৌ নাচ: ঝালদার সংস্কৃতির হৃদস্পন্দন 💃🔥
ঝালদার নাম উঠলেই মনে আসে ছৌ নাচ। মুখোশ, ঢাক, ঢোল আর বাঁশির সুরে ভরপুর এই নাচ পুরুলিয়ার সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এবারের নামোপাড়া সর্বজনীনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছৌ নাচ ছিল বিশেষ আকর্ষণ। মুখোশে সজ্জিত শিল্পীরা দেব-দেবীর কাহিনি ও যুদ্ধের গল্প ফুটিয়ে তুললেন নাচের ভঙ্গিমায়।
তাঁদের নাচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজল ঢাক-ঢোল, মৃদঙ্গ আর বাঁশি। দর্শকরা হাততালি দিয়ে এবং উল্লাসে ভরিয়ে দিলেন চারপাশ।
এই ছৌ নাচ কেবলমাত্র বিনোদন নয়, এটি এক গভীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে যুক্ত।
উদ্বোধনী মঞ্চে যখন ছৌ নাচ শুরু হলো, তখন উপস্থিত প্রতিটি মানুষের চোখেমুখে আনন্দের ঝলক দেখা গেল।
👉 এই পরিবেশনা প্রমাণ করে, পুজো কেবল পূজা নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি ও শিল্পীদের জন্যও এক বিশাল প্ল্যাটফর্ম।
উদ্বোধনে মানুষের ঢল 🌸👨👩👧👦
ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় মণ্ডপের উদ্বোধনের সময় ঝালদা শহরে নামল মানুষের ঢল। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে দূরদূরান্তের দর্শনার্থী – সবাই ছুটে এলেন নামোপাড়া সর্বজনীনের মণ্ডপ দেখতে।
প্যান্ডেলে আলোয় ঝলমল করছে টেরাকোটা শিল্পকর্ম, চারদিকে উৎসবের আমেজ, ঢাকের তালে ভক্তদের ভিড় – সব মিলিয়ে যেন হয়ে উঠল এক “চাঁদের হাট”।
দোকানপাটে ভিড়, রাস্তার দু’পাশে দর্শনার্থীর আনাগোনা আর শিশুদের হাসি-আনন্দে ঝালদা শহর নতুন প্রাণ ফিরে পেল।
অনেক দর্শনার্থী জানিয়েছেন, তারা প্রতিবছর ঝালদার পুজো দেখতে আসেন, কিন্তু এবারের আয়োজন একেবারেই অন্যরকম। “এমন টেরাকোটা শিল্প আগে কখনো দেখা যায়নি,” জানালেন এক দর্শক।
👉 এই ভিড় প্রমাণ করে, পুজো শুধু ভক্তির অনুষ্ঠান নয়, বরং মানুষের মিলনমেলা।
ঝালদা ও বিষ্ণুপুর: শিল্পের যোগসূত্র 🏰
ঝালদার মণ্ডপে বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা ঐতিহ্যের অনন্য ছাপ ফুটে উঠেছে। বিষ্ণুপুরের ঐতিহাসিক মন্দিরগুলির যে পোড়ামাটির শিল্প বিশ্ববিখ্যাত, সেই শিল্পই এবার স্থান পেয়েছে ঝালদার দুর্গাপুজোয়।
এটি যেন এক প্রতীকী সংযোগ। একদিকে বিষ্ণুপুরের ইতিহাস, অন্যদিকে পুরুলিয়ার বর্তমান। দুই শহরের এই শিল্পের যোগসূত্র প্রমাণ করছে, ঐতিহ্য ভৌগোলিক সীমা মানে না।
শিল্পীরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বিষ্ণুপুরের মন্দিরচিত্রকে পুনর্নির্মাণ করেছেন মণ্ডপে। ফলে দর্শনার্থীরা পাচ্ছেন একসঙ্গে দুই অভিজ্ঞতা – পুরুলিয়ার উচ্ছ্বাস আর বিষ্ণুপুরের ইতিহাস।
👉 এই মিলনই দেখিয়ে দিচ্ছে, বাংলার শিল্পকলার ঐতিহ্য আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
স্থানীয় মানুষের আবেগ ও গর্ব ❤️
মণ্ডপে ঢুকে মানুষের চোখেমুখে দেখা যাচ্ছে বিস্ময়, আনন্দ আর গর্ব। স্থানীয়রা বলছেন – “আমাদের শহরে এমন শিল্প দেখতে পাওয়া সত্যিই গর্বের।”
একজন বৃদ্ধ দর্শনার্থী জানালেন – “শৈশবে বিষ্ণুপুরের মন্দির দেখেছি। আজ ঝালদার পুজোয় সেই স্মৃতি ফিরে এলো।”
একজন তরুণী দর্শনার্থী বলেন – “ছৌ নাচ দেখে চোখ ভিজে গেল। আমাদের সংস্কৃতিকে এত সুন্দরভাবে তুলে ধরা সত্যিই আনন্দের।”
👉 এই আবেগ প্রমাণ করে, দুর্গাপুজো কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি মানুষের হৃদয়ের উৎসব।
দুর্গাপুজো: শিল্প-সংস্কৃতির মহোৎসব 🎨🙏
দুর্গাপুজো বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব। তবে আজকের দিনে এটি কেবল পূজার্চনায় সীমাবদ্ধ নেই। এটি হয়ে উঠেছে শিল্প-সংস্কৃতির মহোৎসব। ঝালদার টেরাকোটা মণ্ডপ তারই সেরা উদাহরণ।
এই পুজোয় আমরা দেখতে পাই –
-
দেবী দুর্গার আরাধনা।
-
টেরাকোটার মাধ্যমে বাংলার ইতিহাসের পুনর্জাগরণ।
-
ছৌ নাচে পুরুলিয়ার সংস্কৃতির প্রকাশ।
-
মানুষের মিলনমেলায় আনন্দের উৎসব।
👉 এভাবেই পুজো আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর আবেগকে এক সূত্রে বেঁধে রাখে।
সমাপ্তি 🌺
ঝালদা নামোপাড়া সর্বজনীনের এবারের দুর্গাপুজো হয়ে উঠেছে শিল্প, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর ভক্তির এক অমলিন অধ্যায়।
টেরাকোটা শিল্পে সজ্জিত মণ্ডপ দর্শনার্থীদের ইতিহাসের পথে নিয়ে গেল, ছৌ নাচ ভরিয়ে দিলো আবেগে, আর মানুষের ঢল প্রমাণ করলো পুজোই বাংলার প্রাণ।
👉 ঝালদার এই দুর্গাপুজো কেবল দেবীর আরাধনা নয়, এটি বাংলার গৌরব, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির এক জীবন্ত দলিল।