অক্ষয় ভগতের বিশ্ব সাইকেল ভ্রমণ ও আকাশবাণী কলকাতায় বিশেষ সাক্ষাৎকার।
অক্ষয় ভগতের অনুপ্রেরণামূলক যাত্রার গল্প জানুন। পুরুলিয়ার এই তরুণ সাইকেল ভ্রমণ করে পেরিয়েছেন ১৯টি দেশ, অগণিত কিলোমিটার পথ।
সীমিত সামর্থ্য নিয়ে শুরু হলেও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি তাঁকে বিশ্বজয়ের পথে এগিয়ে নিয়েছে। পথে পেয়েছেন নতুন সংস্কৃতি, ভাষা, চ্যালেঞ্জ ও আতিথেয়তার অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
আজ আকাশবাণী কলকাতার স্টুডিওতে তিনি শেয়ার করলেন সেই গর্বের মুহূর্ত।
তাঁর গল্প শুধু ভ্রমণ নয়, এটি সাহস, ধৈর্য ও স্বপ্ন পূরণের উদাহরণ। তরুণদের জন্য বড় শিক্ষা—পরিশ্রম ও অধ্যবসায় থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়।
📰 অক্ষয় ভগতের বিশ্বভ্রমণ: আকাশবাণী কলকাতার মঞ্চে গর্বের গল্প
🌟 স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে প্রথম পদক্ষেপ
অক্ষয় ভগতের গল্প শুরু হয়েছিল পুরুলিয়ার এক ছোট্ট গ্রাম থেকে। সাধারণ পরিবার, সীমিত আর্থিক সামর্থ্য—কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল সীমাহীন।
হাতে ছিল শুধু একটি সাইকেল, সঙ্গে ছিল অদম্য সাহস। জীবনের সবচেয়ে বড় যাত্রার শুরু হয় সেখান থেকেই।
তিনি বলেন, “প্রথম দিন যখন সাইকেল নিয়ে গ্রাম ছাড়লাম, মনে হচ্ছিল আমি নিজের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করছি। কেউ বিশ্বাস করেনি যে আমি এত দূর যেতে পারব, কিন্তু আমি নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম।”
এই যাত্রার প্রথম কয়েকদিন ছিল কঠিন। নতুন জায়গা, অচেনা রাস্তা, খাবারের অভাব, আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা—সবকিছুই ছিল চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তিনি জানতেন, প্রতিটি পদক্ষেপ তাঁকে স্বপ্নের কাছে নিয়ে যাবে।
অক্ষয়ের বিশ্বাস ছিল একটাই—“স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে নিজেকেই লড়তে হবে।” তাঁর এই লড়াই আজ প্রমাণ করেছে, ইচ্ছাশক্তির চেয়ে বড় কোনো শক্তি নেই।
🌍 ১৯টি দেশ অতিক্রম: অভিজ্ঞতার অফুরন্ত ঝাঁপি
অক্ষয় ভগতের সাইকেল যাত্রা কোনো সাধারণ ভ্রমণ ছিল না। তিনি ১৯টি দেশ অতিক্রম করেছেন—এ যেন জীবনের একটি মহাযজ্ঞ।
প্রতিটি দেশের সংস্কৃতি, ভাষা, মানুষ, আতিথেয়তা তাঁকে নতুনভাবে গড়ে তুলেছে।
তাঁর মতে, “যত জায়গায় গিয়েছি, তত বেশি শিখেছি। মানুষ কেমনভাবে হাসে, কাঁদে, লড়ে—সবকিছুই আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে।”
তিনি যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন:
✔ সীমান্ত পেরোনোর সময় কাগজপত্রের ঝামেলা।
✔ ভিন্ন ভাষায় যোগাযোগের সমস্যা।
✔ প্রতিকূল আবহাওয়া—কনকনে ঠান্ডা ও তীব্র গরম।
✔ খাবার ও থাকার সমস্যার সমাধান।
তবে এই সমস্যাগুলোই তাঁকে শিখিয়েছে ধৈর্য ও সহনশীলতা।
অক্ষয়ের কথায়, “প্রতিটি দেশ আমাকে নতুন কিছু শিখিয়েছে। আমি বুঝেছি, পৃথিবী আসলে এক বড় পরিবার।”
🎙 আকাশবাণী কলকাতায় গর্বের মুহূর্ত
আজকের দিনটি ছিল অক্ষয়ের জীবনের জন্য এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। আকাশবাণী কলকাতার স্টুডিওতে বসে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার গল্প শেয়ার করলেন। তাঁর কণ্ঠে ছিল গর্ব, চোখে আনন্দের ঝিলিক।
তিনি বলেন, “আজ মনে হচ্ছে আমার এই দীর্ঘ যাত্রা সফল হয়েছে। কারণ আমি শুধু নিজের জন্য নয়, আমার জেলার নাম উজ্জ্বল করতে পেরেছি।”
আড্ডার সময় তিনি বলেছিলেন,
✔ কিভাবে সাইকেল চালিয়ে সীমান্ত পেরিয়েছেন।
✔ কীভাবে অচেনা দেশে আতিথেয়তা পেয়েছেন।
✔ যাত্রার সময় সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মুহূর্তগুলো।
✔ সেই আনন্দময় সময়গুলো যা চিরকাল মনে থাকবে।
এই সাক্ষাৎকারের শেষে তিনি বলেন, “এই গল্প যদি একজন তরুণকেও স্বপ্ন দেখতে শেখায়, তবে আমার পরিশ্রম সার্থক।”
🏠 নিজের মাটিতে ফেরার আনন্দ
দীর্ঘ ভ্রমণের পর নিজের মাটিতে ফেরার আনন্দ অন্যরকম। অক্ষয় আগামীকাল সকাল ৭টায় পুরুলিয়া স্টেশনে পৌঁছাবেন। এই মুহূর্তের জন্য তিনি কতদিন অপেক্ষা করেছেন!
তিনি বলেন, “যত দূরেই যাই না কেন, শেষমেষ টান থাকে নিজের মাটির দিকে। এই মাটির গন্ধই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।”
পুরুলিয়ার মানুষও অপেক্ষা করছে গর্বের সঙ্গে তাঁকে বরণ করে নেওয়ার জন্য। তাঁর এই যাত্রা শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি সমগ্র জেলার জন্য এক গর্বের অধ্যায়।
জেলার মানুষ মনে করছে, “অক্ষয় প্রমাণ করেছেন, গ্রাম থেকেও বিশ্বজয় করা সম্ভব।”
এই ফেরা শুধু তাঁর নয়, পুরুলিয়ার প্রতিটি মানুষের জয়।
❤️ তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা
অক্ষয়ের গল্প থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
✔ বড় স্বপ্ন দেখতে হবে।
✔ সীমাবদ্ধতাকে অজুহাত করা যাবে না।
✔ পরিশ্রম ও সাহস থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়।
তিনি তরুণদের জন্য বলেন, “দারিদ্র্যকে অজুহাত বানিও না। চেষ্টা করলে পৃথিবীও তোমার জন্য দরজা খুলে দেয়।”
তাঁর মতে, এই ভ্রমণ তাঁকে শিখিয়েছে—অভিজ্ঞতা হলো জীবনের আসল সম্পদ।
তরুণদের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা:
👉 ভয় না পেয়ে চেষ্টা কর।
👉 জীবনের চ্যালেঞ্জকে উপভোগ কর।
👉 শিখতে থাকো, থেমো না।
✅ অক্ষয়ের যাত্রার টাইমলাইন টেবিল
ধাপ | স্থান | অভিজ্ঞতা |
---|---|---|
শুরু | পুরুলিয়া | স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু |
১ম দেশ | বাংলাদেশ | নতুন ভাষা, নতুন সংস্কৃতি |
মাঝপথ | নেপাল, ভুটান | পাহাড়ি পথের চ্যালেঞ্জ |
ইউরোপ | ফ্রান্স, জার্মানি | সংস্কৃতির বৈচিত্র্য |
শেষ ধাপ | ভারত | নিজের মাটিতে ফেরা |
✅ অক্ষয়ের ভ্রমণকৃত ১৯টি দেশের তালিকা
বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, গ্রিস, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস।
✅ FAQ
প্রশ্ন ১: অক্ষয় ভগতের যাত্রা কতদিনের ছিল?
উত্তর: প্রায় ২ বছরের দীর্ঘ সাইকেল ভ্রমণ।
প্রশ্ন ২: তিনি কতটি দেশ ভ্রমণ করেছেন?
উত্তর: মোট ১৯টি দেশ।
প্রশ্ন ৩: এই যাত্রার উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর: বিশ্ব সংস্কৃতিকে জানা এবং মানবিকতার বার্তা পৌঁছে দেওয়া।
🙏 শেষ কথা – স্বপ্নের পথে সাহসী পদক্ষেপ
অক্ষয় ভগতের এই সাইকেল ভ্রমণ শুধু একটি ভ্রমণ নয়, এটি মানুষের ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক।
ছোট্ট গ্রাম থেকে বেরিয়ে বিশ্ব ভ্রমণ করা সহজ কাজ নয়, কিন্তু তাঁর অধ্যবসায়, ধৈর্য এবং আত্মবিশ্বাস তাঁকে এই সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।
এই গল্প আমাদের শেখায়—
✔ স্বপ্ন দেখতে হবে এবং তা পূরণে সাহসী হতে হবে।
✔ সমস্যা যত বড়ই হোক, সংকল্প থাকলে সমাধান পাওয়া যায়।
✔ জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতা আমাদের বড় করে তোলে।
আগামীকাল যখন অক্ষয় পুরুলিয়ার মাটিতে ফিরবেন, তখন শুধু তাঁর পরিবার নয়, গোটা জেলা গর্বিত হবে। তিনি প্রমাণ করেছেন, “গ্রামের ছেলে হয়েও বিশ্বজয় করা সম্ভব।”
তাই আজকের বার্তা একটাই—নিজের স্বপ্নকে ছোট করবেন না। চেষ্টা করলে পৃথিবী আপনার জন্য দরজা খুলে দেবে।
জোহার পুরুলিয়া! 🙏