অযোধ্যা পাহাড়ে মালতি মুর্মুর স্কুলে এলো কম্পিউটার।
🌄অযোধ্যা পাহাড়ের জেলিংসেরেং গ্রামে শিক্ষক মালতি মুর্মুর স্কুলে এলো আধুনিক কম্পিউটার, যা বদলে দেবে গ্রামের শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ।💻✨
📖 অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে স্বপ্নপূরণের আলো
পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের জেলিংসেরেং গ্রামের শিক্ষক মালতি মুর্মুর স্বপ্নপূরণ। বর্ধমানের এক পরিবারের দানে এলো আধুনিক কম্পিউটার, যা বদলে দেবে গ্রামের শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ।
🌄 অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে এক শান্ত স্বপ্নের গ্রাম
পুরুলিয়ার পশ্চিম প্রান্তে, সবুজে মোড়া অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশে লুকিয়ে আছে একটি ছোট্ট গ্রাম—জেলিংসেরেং।
এখানে সকাল শুরু হয় পাখির ডাক ও পাহাড়ি হাওয়ার মিষ্টি ছোঁয়ায়, আর রাত নামে জোনাকির আলোয়।
গ্রামের মানুষ সাধারণত চাষাবাদ, বনজ সম্পদ সংগ্রহ, অথবা ছোটখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
প্রযুক্তি এখানে যেন অনেক দূরের স্বপ্ন—মোবাইল নেটওয়ার্কও সবসময় পাওয়া যায় না, ইন্টারনেটের কথা তো দূরের।
👩🏫 গ্রামের এক অসাধারণ শিক্ষিকা — মালতি মুর্মু
এই গ্রামেরই একজন নারী—মালতি মুর্মু। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তাঁর ছিল গভীর আগ্রহ।
অর্থাভাব সত্ত্বেও তিনি নিজের পড়াশোনা শেষ করেন, আর নিজের গ্রামের শিশুদের জন্য হয়ে ওঠেন একজন শিক্ষিকা।
মালতির স্কুল বলতে একটি ঘরের ভেতর কাঠের বেঞ্চ, একটি ব্ল্যাকবোর্ড আর কিছু খাতা-কলম।
শহরের মতো সুযোগ-সুবিধা নেই, নেই ল্যাব, নেই লাইব্রেরি—তবুও প্রতিদিন হাসিমুখে তিনি শিশুদের শেখান বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, আর জীবনের পাঠ।
💭 এক অদম্য স্বপ্ন
মালতির স্বপ্ন ছিল সহজ কিন্তু গভীর—তার গ্রামের খুদে পড়ুয়ারা একদিন কম্পিউটার শিখবে, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে।
শহরের স্কুলে যে শিশুরা স্মার্ট ক্লাসে পড়ে, ভিডিও দেখে শিখে, মালতির ছাত্রছাত্রীদেরও সেই সুযোগ পাবে—এই ইচ্ছাই তাঁকে তাড়িত করত।
💝 হৃদয় ছোঁয়া দান
এই স্বপ্ন পূরণের সূচনা হয় ১০ আগস্ট, রবিবার।
বর্ধমানের এক উদার পরিবারের সদস্য—স্বর্গীয় পোরেশনাথ মজুমদার ও আরাধনা ভট্টাচার্য্যের স্মৃতিতে—নিজেদের আন্তরিক উদ্যোগে মালতির স্কুলে পৌঁছে দেন একটি আধুনিক ডেস্কটপ কম্পিউটার।
এই মহৎ কাজে অংশ নেন দেবাশীষ ভট্টাচার্য, শাশ্বতী মজুমদার, আরাত্রিকা ভট্টাচার্য এবং পথিক মজুমদার।
তাঁরা জানান—
"সংবাদমাধ্যমে মালতি দেবীর গল্প পড়ে আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম। তাঁর নিঃস্বার্থ পরিশ্রম ও নিষ্ঠা দেখে মনে হয়েছে, তাঁর পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য।"
😍 স্বপ্নপূরণের মুহূর্ত
যখন নতুন কম্পিউটারটি মালতির হাতে তুলে দেওয়া হয়, তখন তাঁর চোখে জল এসে যায়। আনন্দ আর আবেগে ভেসে তিনি বলেন—
"এতদিন শুধু ব্ল্যাকবোর্ডে পড়িয়েছি। এখন ছবি, ভিডিও আর প্রযুক্তির ছোঁয়ায় শেখাবে আমার বাচ্চারা। তারা যুগের সঙ্গে এগিয়ে যাবে—এই স্বপ্নই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।"
👩💻 শিশুদের নতুন দিগন্ত
কম্পিউটার হাতে পেয়ে গ্রামজুড়ে যেন উৎসবের আমেজ। ছোট ছোট মুখে কৌতূহল, চোখে স্বপ্ন—
"আমরাও শিখব কম্পিউটারের ভাষা, আমরাও করব টাইপিং, আঁকব ছবি, দেখব পৃথিবী!"
শিক্ষার এই নতুন অধ্যায় শুধু বইয়ের সীমায় আটকে থাকবে না—এখন থেকে শিশুরা অনলাইন শিক্ষা, ডিজিটাল স্কিল, এমনকি সৃজনশীল কাজও শিখতে পারবে।
🌿 অযোধ্যা পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও চ্যালেঞ্জ
অযোধ্যা পাহাড় তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত হলেও, এখানে বসবাসকারী মানুষের জীবন কঠিন।
-
পর্যাপ্ত রাস্তাঘাট নেই।
-
স্বাস্থ্যসেবা সীমিত।
-
প্রযুক্তির সুযোগ নেই।
এই অবস্থায় একটি কম্পিউটার গ্রামের শিক্ষায় এক নতুন আলো এনে দিল।
🛖 গ্রামের সংস্কৃতি ও মানুষের মন
জেলিংসেরেং গ্রামের মানুষ অতিথিপরায়ণ, সরল ও পরিশ্রমী। উৎসব-অনুষ্ঠানে তাঁরা ঐতিহ্যবাহী নাচ, গান আর রান্নায় মেতে ওঠেন।
এই গ্রাম আজ গর্বিত, কারণ তাঁদের একজন শিক্ষিকা প্রযুক্তির আলো এনে দিয়েছেন পরবর্তী প্রজন্মের জীবনে।
📊 তথ্যের সারসংক্ষেপ
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
স্থান | জিলিংসেরেং গ্রাম, অযোধ্যা পাহাড়, পুরুলিয়া। |
প্রধান চরিত্র | মালতি মুর্মু। |
সহায়তাকারী পরিবার | বর্ধমানের মজুমদার-ভট্টাচার্য পরিবার। |
দানকৃত সামগ্রী | আধুনিক ডেস্কটপ কম্পিউটার। |
উদ্দেশ্য | গ্রামের শিশুদের কম্পিউটার শিক্ষা প্রদান। |
ঘটনার তারিখ | ১০ আগস্ট। |
💡 ভবিষ্যতের পথ
এই একটি কম্পিউটার দিয়ে শুরু হলেও, মালতির আশা—একদিন তাঁর স্কুলে আরও অনেক প্রযুক্তি আসবে।
শিশুরা ডিজিটাল যুগে দক্ষ হবে, চাকরির সুযোগ পাবে, আর গ্রামের জীবনযাত্রা বদলাবে।
❤️ উপসংহার
এই ঘটনা প্রমাণ করে—স্বপ্ন, নিষ্ঠা ও সহানুভূতি মিলে যেকোনো বাধা জয় করা সম্ভব।
মালতি মুর্মুর একার লড়াই, বর্ধমানের পরিবারের উদারতা, আর গ্রামের শিশুদের শেখার আগ্রহ—সব মিলিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে আজ এক নতুন দিনের সূচনা হলো।