পুরুলিয়ায় দেবেন মাহাতো মেডিক্যালে ইন্টার্নদের আন্দোলন।
পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ইন্টার্ন ডাক্তারদের অনির্দিষ্টকালীন কর্মবিরতি জারি রয়েছে।
“No Shifting, No Service” স্লোগানে তাঁরা শহর ক্যাম্পাস অবিলম্বে হাতোয়াড়ায় স্থানান্তরের দাবি তুলেছেন।
হাসপাতাল প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত বিপর্যস্ত, রোগীরা চরম ভোগান্তিতে। বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বৈঠকে এই জট মেটার সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি ও জেলা কর্তারা উপস্থিত থাকবেন সেই বৈঠকে। এখন প্রশ্ন একটাই — শহর ক্যাম্পাস কি সত্যিই সরবে হাতোয়াড়ায়, নাকি আন্দোলন আরও তীব্র হবে?
🏥 দেবেন মাহাতো মেডিক্যালে ইন্টার্নদের অনড় অবস্থান পুরুলিয়ায় চিকিৎসা পরিষেবা বিপর্যস্ত 😔
পুরুলিয়া জেলার দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চলতে থাকা ইন্টার্ন ডাক্তারদের কর্মবিরতি এখন পুরো জেলার আলোচিত বিষয়।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের কারণে হাসপাতালের নিয়মিত চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত থমকে গেছে।
ইন্টার্নরা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন— “No Shifting, No Service।” এই অবস্থান থেকেই তাঁরা অনির্দিষ্টকালীন কর্মবিরতিতে নেমেছেন।
হাসপাতালে এখন প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন, অনেকেই হাসপাতালের বারান্দায় বসে বা মাটিতে শুয়ে চিকিৎসার অপেক্ষায় রয়েছেন।
একদিকে রোগীর কষ্ট, অন্যদিকে তরুণ চিকিৎসকদের ক্ষোভ – দুয়ের মধ্যে পড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে পুরুলিয়ায়।
ইন্টার্ন ডাক্তারদের দাবি, পুরুলিয়া শহরের বর্তমান ক্যাম্পাস অবিলম্বে হাতোয়াড়ায় স্থানান্তর করা হোক।
তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই দাবির কথা প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
আশ্বাস মিললেও কাজ হয়নি কিছুই। হাসপাতাল প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ ইন্টার্নরা এবার নড়েচড়ে বসেছেন।
তাঁদের বক্তব্য, শহর ক্যাম্পাসের পরিবেশ এখন কার্যক্ষম নয়, অবকাঠামো ও নিরাপত্তা দুটোই অপ্রতুল।
এই পরিস্থিতিতে উন্নত চিকিৎসা প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব নয় বলেই তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।
হাসপাতালের ভেতরে এবং বাইরে এখন এক অস্থির পরিবেশ, রোগী থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষ সবাই উদ্বিগ্ন।
📅 ১৭ অক্টোবরের বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত আসবে পুরুলিয়া তাকিয়ে আছে প্রশাসনের দিকে 🤔
এই জটিল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী ১৭ অক্টোবর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু, জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো, জেলা শাসক ড. রজত নন্দা, পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, সহ সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, বান্দোয়ানের বিধায়ক রাজীবলোচন সরেন, বাঘমুন্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতো, পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়, পুরপ্রধান নবেন্দু মাহালি, জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ প্রতিমা সরেন সহ স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তারা।
সূত্রে জানা গেছে, এই বৈঠকেই শহর ক্যাম্পাস সরানোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে। অনেকের মতে, এই সিদ্ধান্তই হতে পারে পুরুলিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থার মোড় ঘোরানোর দিন।
প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ মহলে গুঞ্জন, সরকারও এখন এই আন্দোলনের চাপ অনুভব করছে। কারণ, চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।
ফলে ১৭ তারিখের বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত আসে, তা নিয়ে জেলাজুড়ে চরম আগ্রহ।
অনেকেই আশা করছেন, এই বৈঠকেই হয়তো সমস্যার ইতিবাচক সমাধান মিলবে, আবার কেউ কেউ মনে করছেন, প্রশাসন যদি সময়ক্ষেপণ করে, তাহলে ইন্টার্নদের আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করবে।
🧑⚕️ ইন্টার্নদের কণ্ঠে ক্ষোভ প্রশাসনের দেরিতে বাড়ছে উত্তেজনা 💥
ইন্টার্ন ডাক্তার অরিত্র মুন্সী বলেন,
“আমরা ১৭ তারিখের বৈঠকের দিকেই তাকিয়ে আছি। যদি ওই বৈঠকে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত না হয়, আমাদের আন্দোলন আরও তীব্র হবে। আপাতত কর্মবিরতি চলছেই।”
এই এক কথাতেই বোঝা যায় ইন্টার্নদের দৃঢ় মনোভাব। তাঁদের মতে, হাতোয়াড়া ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ভবন ও সুযোগ-সুবিধা থাকলেও সেগুলোর ব্যবহার হচ্ছে না।
অথচ সেখানে ক্লাসরুম, ল্যাবরেটরি, ওয়ার্ড — সবই প্রস্তুত অবস্থায় আছে। ইন্টার্নরা মনে করছেন, প্রশাসনের ইচ্ছা থাকলেই এক সপ্তাহের মধ্যে স্থানান্তর সম্ভব।
তাঁদের ক্ষোভের আরেকটি কারণ হল শহর থেকে হাতোয়াড়ায় যাতায়াতের সমস্যাজনক অবস্থা।
যাতায়াতের পথে পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাব, নির্জন রাস্তা, এবং নিরাপত্তাহীনতা — বিশেষত নারী ইন্টার্নদের জন্য এটি বড় সমস্যা।
শীতকালে সন্ধ্যা নামার পর রাস্তাগুলি প্রায় অন্ধকারে ঢেকে যায়, তখন বাড়ি ফেরা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।
ইন্টার্নদের একাংশ বলছেন, প্রশাসন এই সমস্যাগুলি জানে, তবুও চোখ বন্ধ করে আছে।
তাঁরা আরও অভিযোগ করেছেন, পুরুলিয়া শহরের বর্তমান ক্যাম্পাসে চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণের মানও দিন দিন নেমে যাচ্ছে।
এই সব কারণে তাঁরা “No Shifting, No Service” আন্দোলনে স্থির অবস্থান নিয়েছেন।
🚑 রোগীদের দুঃখে কান্না চিকিৎসা বন্ধে ভোগান্তি চরমে 😣
ইন্টার্নদের আন্দোলনের প্রভাব সরাসরি পড়েছে সাধারণ মানুষের উপর। প্রতিদিন শতাধিক রোগী চিকিৎসার জন্য আসছেন, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডাক্তার না থাকায় তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে অনেককে মাটিতে বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। কেউ কেউ স্যালাইন হাতে নিয়েই হাসপাতালের করিডোরে ঘুরছেন।
রোগীর পরিবারগুলো ক্রমেই হতাশ, অনেকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন।
একজন রোগীর পরিবারের সদস্য জানান,
“ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ডাক্তার পাওয়া যায় না। আমাদের মতো গরিব মানুষের অন্য কোথাও যাওয়ার উপায় নেই।”
অন্যদিকে হাসপাতালের কর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন যাতে পরিষেবা কিছুটা হলেও চালু থাকে, কিন্তু ইন্টার্নদের ছাড়া হাসপাতাল চালানো প্রায় অসম্ভব।
রোগীদের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং ইন্টার্নদের ন্যায্য দাবির মধ্যে পড়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
অনেকে মনে করছেন, প্রশাসনের উচিত ছিল আগেই সমস্যার সমাধান করা, তাহলে আজ এত বড় সংকট তৈরি হতো না।
পুরুলিয়ার মতো জেলায় যেখানে সরকারি হাসপাতালই মূল চিকিৎসা কেন্দ্র, সেখানে এভাবে পরিষেবা বন্ধ থাকা ভয়াবহ সংকেত।
🚧 অবকাঠামোগত সমস্যা আর যানজট হাতোয়াড়ায় স্থানান্তর কতটা বাস্তবসম্মত প্রশ্ন উঠছে 🌉
পুরুলিয়া শহরের গোশালার কাছে ওভারব্রিজ নির্মাণের কাজ এখনও শেষ হয়নি। ফলে প্রতিদিন রেলগেটের যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকে অ্যাম্বুলেন্স ও সাধারণ যানবাহন।
এমন অবস্থায় রোগীকে হাতোয়াড়ায় স্থানান্তর করা আরও বিপজ্জনক হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকার মানুষ।
হাতোয়াড়ার রাস্তা দুর্গম, আলো ও জনবসতি কম — ফলে সেখানে রাতের বেলা যাতায়াত কঠিন।
এদিকে ইন্টার্নদের দাবি, যদি সরকার হাতোয়াড়ায় স্থানান্তর করে তবে প্রথমে সেখানে নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা, পর্যাপ্ত পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স, এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
নচেৎ কেবল ক্যাম্পাস সরানো মানেই নতুন সমস্যার জন্ম। শহরের মানুষও দ্বিধাবিভক্ত — কেউ বলছেন হাতোয়াড়ায় গেলে উন্নত অবকাঠামো ব্যবহার হবে, আবার কেউ মনে করছেন এতে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়া আরও কঠিন হবে।
তাই প্রশাসনের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ — উন্নয়ন ও জনসুবিধার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য খুঁজে বের করা।
🕊️ উপসংহার: পুরুলিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এক বৈঠকের উপর 🌅
দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্নদের এই আন্দোলন শুধুমাত্র ক্যাম্পাস স্থানান্তরের দাবি নয়, এটি আসলে ভবিষ্যতের চিকিৎসা পরিকাঠামো ও শিক্ষার মান নিয়ে এক বড় প্রশ্ন।
তরুণ চিকিৎসকরা তাঁদের নিরাপত্তা, শিক্ষা, ও কাজের মানোন্নয়নের দাবি তুলেছেন, যা সমাজের কাছে এক সতর্কবার্তা।
১৭ অক্টোবরের প্রশাসনিক বৈঠক এখন সেই সমস্ত প্রশ্নের কেন্দ্রবিন্দুতে। যদি সেই বৈঠকে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তবে পুরুলিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থায় নতুন সূচনা ঘটবে।
কিন্তু যদি সিদ্ধান্ত দেরি হয়, তাহলে ইন্টার্নদের ক্ষোভ আরও তীব্র হবে এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।
পুরুলিয়া আজ এক অনিশ্চিত মোড়ে দাঁড়িয়ে — একদিকে ভবিষ্যতের চিকিৎসকদের ন্যায্য দাবি, অন্যদিকে অসহায় রোগীদের আর্তি।
এই পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্তই পারে পুরুলিয়ার মানুষকে আশার আলো দেখাতে। 🌤️